২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিজয়ের অঙ্গীকার

বিজয়ের অঙ্গীকার - ছবি : নয়া দিগন্ত

স্বাধীন হয়েছি স্বাধীন থাকব
আমরা বাংলাদেশী
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ যত
মুছে যাক রেষারেষি ॥

অনেক রক্তে এনেছি স্বরাজ
গড়ব আমরা নতুন সমাজ
জীবন-ধর্মে বলীয়ান হবো
দেখবে জগৎবাসী
আমরা বাংলাদেশী ॥

নবচেতনায় গেয়ে চলি আজ
জীবনের জয়গান
নব উদ্যোগে সফল করব
স্বপ্ন অনির্বাণ ॥

বঞ্চনা নয়, নয়কো শোষণ
অন্যায় যত করি না পোষণ
মুখোশের মুখ খুলে যাক আজ
চাই না ছদ্মবেশী
আমরা বাংলাদেশী ॥

জীবন ফুরায় পথ ফুরায় না। দিবস আসে দিবস যায়। বিশেষ বিশেষ দিবসে আবেগে উচ্ছ্বাসে এবং উজ্জীবনী গানে দশদিক থাকে মুখরিত। ফের ক্লান্তিরভারে গতি যায় থেমে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাস শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দিন কেটেছিল আমাদের। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় লাভের সেই ঐতিহাসিক দিনটিতে মুক্ত বাতাসে শ্বাস ফেলে বেরিয়ে আসি। রাজপথের এখানে-সেখানে তখনো ছিটেফোঁটা রক্তের দাগ। দু-একটা লাশও পড়ে থাকতে দেখি। উল্লাসে-আনন্দে নির্ভয়ে ঘোরাফেরা করছিলাম, এক শুভাকাক্সক্ষী কাছে এসে চুপিচুপি বলল, ওভাবে ঘোরাফেরা করা নিরাপদ নয়। আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা শত্রুপক্ষ মরিয়া হয়ে শেষবারের মতো মরণ কামড় মারতে পারে। সাবধানে চলো, সাবধানে থাকো। তার কথা শুনে কেমন যেন ভয় পেয়ে গেলাম। আতঙ্কিত অবস্থায় তৎক্ষণাত বাসায় ফিরে যাই। পরে শুনেছি, সত্যি সত্যি গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে অজানা অচেনা কেউ কেউ। প্রতি বছর বিজয় দিবস এলে আতঙ্কিত সেই স্মৃতিটা আমার মনের পর্দায় ভেসে ওঠে।
ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য বাহিনীর সাথে আমাদের শান্ত ছেলেরাও অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিল। এবার আমাদের ৪৯তম বিজয় দিবস। মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কতটা সুখে আছি নাকি দুঃখে নাকি অধঃপতিত। প্রাত্যহিক জীবনযাপনে কতটা নিরাপদ। আজও কেন সমান্তরাল অগ্রসর হচ্ছে ক্রোধ হতাশা নিষ্ঠুরতা। কেন গড়িয়ে পড়ছে দু’চোখ থেকে পট্টিবাঁধা হা-সততা।

প্রতিদিনই পত্রিকার পৃষ্ঠায় একাধিক হত্যা খুন ধর্ষণ জখম কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার খবর। অবিরাম আছড়ায় যেন সময়ের ঢেউ। হঠকারিতার নাভিশ্বাসে বিবর্ণ লণ্ঠনের মতো দুলছে ক্লিষ্টতা। নিরাবলম্ব বুঝি জীবনসঙ্গীত। চার দিকে ইত্যাকার ছায়ারা, ভেতরে ভেতরে এক ধরনের ভয় সর্বদা তাড়িত করে। দেয়ালের নিষ্ঠুর চাহনি ঠাট্টাবিদ্রুপে করে কষাঘাত। কোথায় পালাবে, যেখানে যাওনা কেন সেখানেই নিষ্ঠুরতা, সেখানেই ক্রোধে নাচে হত্যা খুন জখম। অসাম্যের দানব রুটি-রুজির লড়াইকে জিইয়ে রেখেছে দ্রাঘিমারেখার মতো। আকাশের নিচে ছোট ছোট কুঁড়েঘর, কাছাকাছি জ্বলজ্বলে বিরাট বেঢপ অট্টালিকা।
বহু সুপ্রাচীন এ দেশটি অনাদিকালের মানচিত্রে একঠায় রয়েছে দাঁড়িয়ে। তার শ্যামল কোমল সবুজ প্রকৃতি, তার নিলীমার কান্তি, রয়েছে অপরিসীম প্রাণপ্রাচুর্যের নিত্য প্রতিফলন। অন্য দিকে, আহত বিস্ময়ে পাশাপাশি জেগে আছে এক বিমূর্ত নৈরাজ্য। সময়ের মলম প্রলেপ দিয়ে যায় বটে, কিন্তু যন্ত্রণার বিষণœ বাতাসে কান্না যেন আর থামে না।

কথা ছিল চলে যাবো শোক থেকে সুখে, দুঃস্বপ্নের রাত থেকে নিঃসংশয় দিনে। কিন্তু সময়ের সাঁকোগুলো পার হতে গিয়ে স্বস্তি গেল কোন দেশে, শান্তিবা কোথায়।
বিশ্বায়নের এ যুগে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝলসানো পৃথিবীর কত রূপ! সময়ের খরস্রোতে উত্তরপুরুষ নাচবে, গান গাইবে। কিন্তু সবখানে যেন নাটক, সবখানে ঘটছে ঘটনা। ঘূর্ণায়মান কৃত্রিম রঙ্গমঞ্চে দর্শক দেখতে পাচ্ছে সবরকম তামাশা। অবিরাম চিৎকার আর প্রত্যাশার হাহাকারে দিন চলে যায় দীর্ঘশ্বাসে!


আরো সংবাদ



premium cement