১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খেজুরগাছি দাদু

-

শীতের দিন। বেলা ছোট হওয়ায় ক্ষেত-খামারে কাজ করতেই বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে। দিল আলী গাছি দাদুর শীত এলে কাজের মাত্রা বেড়ে যায়। দুপুর পেরুতেই মাঠে ছুটতে হয়। পাটাচোরা তীরধরা মাঠে দিল আলী দাদুর বিশাল খেজুরবাগান। শ’ দুয়েক গাছের মধ্যে পালা করে তিন ভাগে তার কাটতে হয়। জিরেন কাটা গাছের রস খুব ভালো হয়। দিল আলী দাদু আজ একটু আগেভাগেই এলেন মাঠে। ভাঁড়গুলো ভালো মতো ধুয়ে, শুকনো জায়গায় লম্বা করে মাঝে ধানগাছের পোয়াল বিছিয়ে দু’পাশে সারি করে সাজিয়ে পোয়ালের এক প্রান্তে মেস ঠুকে আগুন ধরালেন। আগুনের ফুলকিতে সব ভাঁড়ের ভেতর শুকিয়ে ঝনঝনে কড়কড়ে হলো। হাতে টোকা দিতেই বেজে উঠল একেকটি ভাঁড়। ভাঁড় ভালো মতো শুকনো না হলে রস ঘোলা হয়। সবগুলো ভাঁড়ে দড়ি পেঁচিয়ে নিলেন।
এবার দাদু একটি কড়া করে পানে চুন সুপারি মশলা দিয়ে সেজে মুখে দিলেন। উঠে দাঁড়িয়ে মাজায় গাছ কাটা দড়িসহ ঠোঙা বেঁধে নিলেন। ঠোঙার ভেতর দা হাঁসুয়া ঢুকিয়ে আঙটায় একটি ভাঁড় বেঁধে নিয়ে গাছের সাথে দড়ি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে তরতর করে উপরে উঠে গেলেন। দিন তিনেক পর খেজুরগাছ কাটায় সূর্যের আলোয় গাছের কপাল বা টিকরে বেশ শুকিয়েছে। এ প্রান্ত ও প্রান্ত সুন্দর পাতলা করে কপাল কাটতেই নলি বেয়ে রস টপটপ করে পড়তে লাগল। গাছের একপাশে পোঁতা গোজে ভাঁড়ের গলায় লাগানো দড়ি কায়দা মতো বেঁধে নলি ভাঁড়ের মুখে সেট করে খেজুর গাছের সরপা দিয়ে ভাঁড়ের মুখ ঢেকে দাদু নেমে এলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত একের পর এক খেজুরগাছ নলিয়ে রস সংগ্রহে কাটল দাদুর।
রাত পেরিয়ে ভোর হলো। মুয়াজ্জিনের আজানে ঘুম ভাঙল দিল আলী দাদুর। হাত-মুখ ধুয়ে অজু করে নামাজ আদায় করে দাদু বাঁক কাঁধে নিয়ে ছুটলেন মাঠে। নগা বাঁধিয়ে একেক করে গাছের রস ভর্তি ভাঁড়গুলো নামালেন। উঁচু গাছগুলোয় তরতর করে উঠে ভাঁড় নামিয়ে আনলেন। সব ভাঁড়ের রস ঢেলে মোট ২০টা ভাড় রসে পূর্ণ হলো। বাঁকের দুদিকে দাদু দু’ভাগ করে সাজিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন। দুষ্টু নাতি-নাতনীদের সবাইকে ডাকলেন। ক’ভাঁড় রস হয়েছে গুনতে বললেন। এক দুই তিন নাতিরা গুনতে লাগল আর দিল আলী দাদু ভাড়ের রস ছাঁকনায় ছেঁকে চুলোয় সাজানো জালায় ঢালতে লাগলেন। দাদী বসে শুকনো খড় আর পাটখড়ি দিয়ে আগুন গনগনে করে তুললেন, রসে টলমল জালায় ধীরে ধীরে গাঁদ উঠতে লাগল। জালায় জ্বালরত রসগুলো তাত রস পেরিয়ে গুড়ের আকার ধারণ করল। আচ্ছা মতো ঘুটে জ্বাল নিভিয়ে নিচের এক প্রান্তে দুদিকের হাতল ধরে নামানো হলো জালাসহ গুড়। এবার বিচকাটি দিয়ে মনের মতো গুড়ের বিচ তোলা হলো। নলানো গুড়ে দানা বেঁধে এলো। নাতিদের শুকনো টনটনে ভাঁড় আনতে বললেন। ভাঁড়ে গুড় ভর্তি করলেন। জালায় অবশিষ্ট লেগে থাকা গুড় নাতিরা কেউ কেউ আঙুল আর চামচ দিয়ে চেটে চেটে খেল।
দাদীকে ডেকে দিল আলী দাদু বললেন, আজ সব গুড় হাটে বেচতে যাবো? গুড় বেচা টাকা দিয়ে আজ নাতি-নাতনীদের শীতের গরম কাপড় কিনব। আর তুমি নতুন গুড় দিয়ে নতুন ধানের চালের গুঁড়োয় ভাপা আর চিতই পিঠা বানাও? হাট থেকে ফিরে এসে সবাই মিলে মজা করে খাবো। দাদুর কথা শুনে নাতিরা জোরে হাততালি দিয়ে বলল, কি মজা কি মজা, লক্ষ্মী দাদু গুড় বেচে আজকে আমাদের শীতের পোশাক কিনে দেবেন আর দাদী পিঠা বানাবেন।

কোমরপুর, চুয়াডাঙ্গা


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল