২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুয়াশার সকাল

-

শীতের হিমেল হাওয়া নামাতেই বাইরে ঝুম বৃষ্টি। অসময়ে বৃষ্টি রিয়ার ভালোই লাগে। রিয়া চোখটা বন্ধ করে বারান্দার রেলিং গলে দাঁড়িয়ে যতটুকু পারছে বৃষ্টির ফোঁটা ওর মুখে লাগাচ্ছে। মজা পাচ্ছে রিয়া। কখন যে সাহেদ পেছন থেকে এসে ওর কাণ্ড দেখে রুমে গেল। রিয়া কিছু টেরই পেল না।
বৃষ্টি যখন প্রায় থেমে এলো তখন রিয়ার হুঁশ হলো। সাহেদ আসার টাইম। ও ভুলেই গিয়েছিল। দরজা খোলা দেখে বুকটা খচ করে উঠল। সাহেদ আসেনি তো! দৌড়ে রুমে যায় রিয়া। দেখে সাহেদ শুয়ে আছে। রিয়া কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে করে বলে, ভাত দেবো? সাহেদ চুপ। ওপাশ ফিরে থাকে। রিয়া অভ্যস্ত সাহেদের আচরণে। ও টেবিলে গিয়ে চুপচাপ খেয়ে সাহেদের জন্য ঢেকে রাখে খাবার। পাশের রুমে গিয়ে কখন যে ওর ঘুম আসে বলতে পারে না। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখেÑ সাহেদ ওকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। সে কি দু’জনের অদ্ভুত রোমান্টিকতা!
সন্ধ্যার কিছু পরই রিয়ার ঘুম ভাঙে। শরীরটা কেমন যেন লাগে। টেনে ওঠাতে পারে না। আধো অন্ধকার, পাশের রুম থেকে আলো আসছে। চোখ থেকে ঘুমের রেশ কেটে যায়। উঠে বসে রিয়া। চমকে ওঠে যখন ওর পরনের কাপড় এলোমেলো দেখতে পায়। রিয়া থ! এটা কী করে হলো! সাহেদ কি এসেছিল! না ও তো ওর মুখের দিকে আজ বিয়ের তিন মাস পরও তাকায়নি। তাহলে? রিয়া আরেকটু বোঝার চেষ্টা করে। হ্যাঁ, সত্যিই কিছু হয়েছে! রিয়া বসা থেকে উঠতেই কেমন ব্যথা লাগে। এবার কান্না আসে রিয়ার। বাথরুমে যায়। শাওয়ার সারে। আবার বৃষ্টির কথা ভাবে।
সাহেদ দরজায় তালা লাগিয়ে চলে গেছে। সাহেদের রুমের এলোমেলো কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখে। রিয়া টিভিতে তাহসান-মিথিলার পুরনো নাটক দেখে। রাতে খেয়ে নিয়ে রিয়া শুয়ে পড়ে। খুব ঘুম পায়। রিয়া রুমের দরজাটা লাগিয়ে দেয়, এবার ভুল করেনি। এ রকমটা রিয়া কখনও ভাবেনি। যার সাথে কথা হয়নি, মুখোমুখি এক মুহূর্তও তাকায়নি, কেউ কাউকে বোঝেনি, তার সাথে এমনটা রিয়া এভাবেই হোক; চায়নি।
রাত বাড়ে। রিয়া ঘুমিয়ে। দরজার ধাক্কায় রিয়া জেগে ওঠে। অনবরত শব্দে ঘুমের ঘোরে রিয়া বসে পড়ে। দরজায় শব্দ বেড়েই যাচ্ছে। রিয়ার বুকটা ঢিপঢিপ করে। এতদিন ভয় লাগেনি। আজ লাগছে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টির শব্দ আর দরজার শব্দ একাধারে চলছে। রিয়া বালিশ গুঁজে শুয়ে পড়ে। সকালে বারান্দায় সাহেদকে দেখতে অনেকটা উ™££ান্ত লাগছে। চায়ের কাপটা নিয়ে সাহেদের পেছনে রিয়া।
এই নিন চা। চুপচাপ, কোনো শব্দ নেই সাহেদের। রিয়া চা রেখে চলে যেতেই খপ করে সাহেদ ওর হাত ধরে জোরে টান দেয়। রিয়া নিজেকে সামলাতে না পেরে চলে যায় একেবারে সাহেদের বুকে। রিয়া স্বপ্ন ভেবে নড়েচড়ে ওঠে। সাহেদের নিঃশ্বাস টের পাচ্ছে রিয়া।
কালকের দিনের ব্যাপারটার জন্য সরি! রাতে দরজা খোলোনি কেন? আমি সারা রাত অপেক্ষা করেছি। তোমার জন্য রুমটা সাজিয়ে ছিলাম। দেখো উপহার! রিয়া সাহেদের রুমটায় গিয়ে দেখে সত্যিই সাজানো। পাশে ফুলের তোড়া। একটা নীল বক্স খাটের মাঝখানে। সাহেদ এসে বাক্সটা খুলে চেনটা রিয়ার গলায় পরিয়ে দেয়।
রিয়া আমায় মাফ করো, অযথা আমি তোমায় কষ্ট দিয়েছি এতদিন। যার জন্য এসব করেছিলাম সে আমার নয়। সব ভুল ছিল।
বাইরে হিম কুয়াশা ভরা সকালের দিকে তাকিয়ে রিয়া হাসে। সাহেদের মুখটা দেখতে খুব মন চাইছে। সাহেদ ওর দিকে তাকিয়ে। কি হলো রিয়া, কিছু বলো। রিয়া এবার তাকায়, আর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে।

ফেনী


আরো সংবাদ



premium cement