২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ

-

এক বনে বাস করত একটি বোকা বাঘ আর একটি দুষ্ট শিয়াল। শিয়ালটি ছিল ভীষণ দুষ্ট ও হিংসুটে। তাই বনের অন্য প্রাণীরা তার সাথে বন্ধুত্ব করতে যেত না। এ কারণেই শিয়ালের কোনো বন্ধু ছিল না। কিন্তু একদিন হঠাৎ করে একটি বোকা বাঘ তার সাথে বন্ধুত্ব করতে এলো। শিয়াল তো তা দেখে মহা খুশি হয়ে গেল এবং সাথে সাথেই তাকে বন্ধু করে নিলো।
বনের সব প্রাণীই বোকা বাঘটিকে বারবার মানা করেছে যে, দুষ্ট প্রাণীর সাথে কখনো বন্ধুত্ব করতে নেই। এখনো সময় আছে, তুমি দুষ্ট শিয়ালের সঙ্গ ত্যাগ করো। কিন্তু বাঘ কারো কথায় কান না দিয়ে সে শিয়ালের সাথে এক ভীষণ ভাব জমিয়ে ফেলল। শিয়াল আর বাঘ এখন অনেক বড় বন্ধু। দু’জন একসাথে খেলাধুলা করে, একসাথে থাকে আর সারাক্ষণ দুষ্টুমি করে। আজ কয়দিন হয়ে গেল বাঘ আর শিয়াল কোনো কিছুই খেতে পারে না। বনে এখন আর আগের মতো খাওয়ার কোনো কিছু মেলে না। তাই আজ তিন দিন ধরে না খাওয়া। দু’জন সারা দিন বনে ঘোরে আর খাবার খুঁজে, কিন্তু কোথাও কোনো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারল না।
এভাবে সারা দিন ঘুরতে ঘুরতে আজো সন্ধ্যা হয়ে গেল, কিন্তু কপালে কোনো খাবার জুটল না। অবশেষে আজো তারা না খেয়ে বাড়ি ফিরল। শিয়ালের আর কষ্ট সহ্য হচ্ছে না, তাই সে রাতের আঁধারে রাজার বাড়িতে মুরগি চুরি করতে গেল। যখন মুরগি চুরি করতে গেল, তখনি রাজামশাই খোঁজ পেয়ে গেল এবং রাগান্বিত হয়ে শিয়ালটিকে ধরে ফেলল। এখন রাত অনেক গভীর বলে সে শিয়ালটিকে একটি তেঁতুল গাছের সাথে বেঁধে ফেলল এবং বলতে লাগল, আগামীকাল সকালে সব মানুষ একসাথে জড়ো করে তারপর শিয়ালটিকে সবার সামনে মারবে।
এ কথা শুনতে পেয়ে শিয়ালটি অনেক কান্না করতে লাগল। সে বসে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এই তো সকালের সূর্যটা উঠলেই তাকে মেরে ফেলা হবে। শিয়াল শুধু রাস্তার দিকে বারবার তাকিয়ে থাকে, দেখে কেউ আসে কি না।
ভোর ৪টা বেজে গেছে, কিন্তু কেউ এলো না। তাই শিয়াল নিজের জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছে। এমন সময় শিয়াল দেখতে পেল, রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট পায়ে কে যেন তার দিকেই এগিয়ে আসছে! কাছে আসার পর দেখা গেল, এটা তার বাঘ বন্ধু। বাঘ তাকে দেখে বলে উঠল, আরে বন্ধু তুমি বাঁধা কেন? কী হয়েছে তোমার? শিয়াল কেঁদে কেঁদে বলল, আমি রাজার মেয়েকে বিয়ে করিনি বলে তারা আমাকে এভাবে বেঁধে রেখেছে।

বাঘ বলল, ‘সত্যি নাকি। তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছ না?’
শিয়াল বলল, ‘সত্যি মামা। আমার বিয়ে করতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না।’
তা শুনে বাঘ খুব ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘তবে তোমার জায়গায় আমাকে বেঁধে রেখে তুমি চলে যাও না।’
শিয়াল বলল, ‘এখনি তুমি আমার বাঁধন খুলে দাও, তারপর আমি তোমাকে বেঁধে রেখে যাচ্ছি।’
তখন বাঘের আনন্দ আর দেখে কে। সে অমনি এসে শিয়ালের বাঁধন খুলে দিলো। শিয়ালও আর দেরি না করে তাকে ভালোমতো খুঁটিতে বেঁধে বলল, ‘এক কথা, বন্ধু! সকালে কিন্তু কনের ভাইয়েরা এসে তোমার সাথে হাসি-তামাশা করবে। তাতে তুমি চটো না যেন?’
বাঘ বলল, ‘আরে না। আমি রাগ করব না? আমি কি বুঝি না, এতই বোকা।’ এ কথায় শিয়াল হাসতে হাসতে চলে গেল। বাঘ ভাবতে লাগল, কখন কনে নিয়ে আসবে।
সকাল বেলায় রাখালের দল এসে উপস্থিত হলো। বাঘ তাদের দেখে ভাবল, ‘ওই কনের ভাইয়েরা এসেছে। এখনি হয়তো ঠাট্টা করবে। আর তাহলে আমাকেও খুব হাসতে হবে।’
মন খারাপ করে থাকলে চলবে না কিন্তু।
গ্রামের মানুষেরা এসেছিল শিয়াল মারতে। এসে দেখল, বাঘ বসে আছে। অমনি তো ভারি একটা হইচই পড়ে গেল। কেউ কেউ পালাতে চায়, কেউ কেউ তাদের থামিয়ে বলল, ‘আরে, বাঁধা রয়েছে দেখছিস না? ভয় কী? কুড়াল, খন্তা, বল্লম নিয়ে আয়।’
তখন একজন একটা মস্ত ইট এনে বাঘের গায়ে ছুড়ে মারল।
তাতে বাঘ বলল, ‘হি, হি, হিহি, হিহি।’
আরেকজন একটা বাঁশ দিয়ে গুঁতো মারল।’
তাতে বাঘ বলল, ‘হি, হি, হিহি, হিহি।’
আরেকজন একটা বল্লম দিয়ে খোঁচা মারল।
তাতে বাঘ বলল, ‘উহু, হু। হো, হো, হোহো, হোহো। Ñবুঝেছি তোমরা কনের ভাই।’
আবার তারা বল্লমের খোঁচা মারল।
তাতে বাঘ বেজায় রেগে গিয়ে অনেক জোরে গর্জে উঠল। ঠিক তখনি তাকে গ্রামের মানুষগুলো পিটিয়ে মেরে ফেলল। এমন সময় রাস্তার পাশ দিয়ে একটি বানর যাচ্ছিল। বাঘকে মৃত দেখে বলতে লাগল, আমরা আগেই বলেছিলাম। দুষ্ট প্রাণীর বন্ধু হতে নেই। কারণ, কথায় আছেÑ ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’।

 


আরো সংবাদ



premium cement