২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তাসিনের বইপড়া

-

মামা এসেছেন তাসিনের বাসায়। তাসিনের বই পড়া দেখে তো মামা অবাক। টেবিলে বইয়ের দিকে মাথা নিচু করে মনোযোগ সহকারে পড়ছে তো পড়ছেই। মামা বললেন, ‘কীরে তাসিন, কী পড়ছিস?’
- মামা, ভ্রমণবিষয়ক একটি বই পড়ছি। পড়তে খুব মজা লাগছে।
পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে তাসিন। কোথাও ঘুরতে যেতে খুব পছন্দ তার। কোনো ঐতিহাসিক স্থান, মনোমুগ্ধকর জায়গা দেখার কৌতূহল তার বেশি। সে ইতোমধ্যে বাবার সাথে, মামার সাথে অনেক জায়গা বেড়িয়েছে। ভ্রমণবিষয়ক বই তার ভারি পছন্দের। এ ধরনের বই পড়ে সে অনেক অদেখা সুন্দর জায়গা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে।
তাসিন তার মামাকে আবদারের সুরে বলে,
- মামা, আমাকে কি ঢাকা একুশে বইমেলায় নিয়ে যাবে?
- তুই কি সত্যিই বইমেলায় যেতে চাস?
- হ্যাঁ, মামা।
- কেন?
- বইমেলাতে গেলে অনেক মজার মজার বই পাওয়া যায়। সেখানে শিশুদের জন্য শিশুচত্বর আছে। স্টলগুলোতে শিশুদের উপযোগী ছড়া-কবিতা-গল্পের বই আছে।
-তুই তো দেখি সবকিছুই জানিস। কে তোমাকে এসব বলেছে?
- না মামা, কেউ বলেনি। আমি পেপারে এ সম্পর্কে পড়েছি, টিভিতে শিশুচত্বরের ছবি দেখেছি। টিভিতে বইমেলা নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়।
- ও আচ্ছা। ঠিক বলেছিস। বইমেলার শিশুচত্বরে শিশুদের সুখপাঠ্য বইয়ের অনেক স্টল আছে। সেখানে হরেকরকমের ভালো ভালো বই পাওয়া যায়।
- মামা, তুমি আমাকে কবে ঢাকা একুশে বইমেলায় নিয়ে যাবে?
- আগামীকাল তোকে বইমেলায় নিয়ে যাবো। তৈরি থাকিস।
তাসিনের মনে সে কী আনন্দ! খুশির বাঁধভাঙা জোয়ার যেন তার চোখে-মুখে। বইমেলাতে যাওয়ার জন্য তার মন খুশিতে নাচতে থাকে।
পরদিন বিকেল ৫টার দিকে তাসিনকে তার মামা বইমেলায় নিয়ে যায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইয়ের বড় স্টলগুলো দেখে তাসিন অবাক। এর আগে সে বইয়ের এতবড় স্টল দেখেনি। বইমেলার ভিড়ে সে চারদিকে কৌতূহলী ভঙ্গিতে তাকাতে থাকে। স্টলের ভেতরে যেন বইয়ের রাজ্য। বইগুলো তাকে তাকে সাজানো।
তাসিনকে তার মামা শিশুচত্বরে নিয়ে যান। শিশুচত্বরে বিভিন্ন নামের স্টলগুলো নানান বইয়ের সমাহারে শোভা পাচ্ছিল। স্টলের কত নামের বাহার। যেমন-বাবুই, ঝিঙেফুল, সপ্তডিঙ্গা ইত্যাদি। বিভিন্ন স্টলে তাসিন বই দেখে, বইয়ের এক-দুই পাতা মনোযোগ সহকারে পড়ে। ঘুরতে ঘুরতে সে ‘ঝিঙেফুল’ প্রকাশনীর স্টলে যায়। সেখানে শিশুসাহিত্যিক স. ম. শামসুল আলমের কবিতার বই ‘শিস দিয়ে যাই’ তাসিনের চোখে পড়ে। সুন্দর প্রচ্ছদ, ঝকঝকে পাতা তার মন কেড়ে নেয়। সে স্টলের সামনে দাঁড়িয়েই বইটির দু’টি পাতা পড়া শেষ করে ফেলে।
- মামা, এই বইটি কিনব।
মামা বইটি কিনে তাসিনের হাতে দেয়।
এরপর মামা অন্য স্টলগুলো থেকে বেশ কয়েকটি বই কিনে দেয় তাসিনকে। ‘বটেশ্বর বর্ণন’ স্টল থেকে শিশুসাহিত্যিক হাসনাত আমজাদের ‘একটি লিচু ও অন্যান্য গল্প’ নামের গল্পের বইটি তাসিনের পছন্দ হলে মামা তা ক্রয় করেন। অনেক মজার, ভালোলাগা বই নিতে পেরে তাসিনের মনে খুব আনন্দ।
রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফিরেই নতুন বইগুলো পড়তে শুরু করে তাসিন। কখনো একটি বইয়ের কিছু অংশ, কখনো আরেকটি বইয়ের কিছু অংশ পড়তে থাকে। মা তাসিনকে খেতে ডাকেন। কিন্তু তাসিনের বইপড়ার ঝোঁক এত প্রবল হয়ে ওঠে যে, সে খাওয়ার কথা ভুলে যায়। মা তাকে হাত দিয়ে খাইয়ে দেন। আর তাসিন বইয়ের পাতায় মনোযোগের সাথে চোখ বুলাতে থাকে। তাসিনের মা ও মামা তার বইপড়া দেখে মুগ্ধ হন।
- মামা, আমি আরো বই কিনব। আমি আবার বইমেলায় যাবো। তুমি আবার আমাকে নিয়ে যাবে না, মামা?
- নিশ্চয়ই আমি তোকে আবার বইমেলাতে নিয়ে যাবো। এখন খেয়ে-দেয়ে লক্ষ্মীসোনার মতো ঘুমিয়ে পড়।
তাসিনের খাওয়া শেষ হলেও বইপড়া শেষ হয় না। বই পড়তে পড়তে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে তাসিন।

 


আরো সংবাদ



premium cement