১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মধুমিতা

-

মুনিরা বাসায় নেই। সকালে বাবার বাড়ি গেছে। তিনতলার ছোট ফ্ল্যাটটাতে রাহাত এখন একা। বিকেলে অফিস থেকে এসে মুগ ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেছে। বাইরে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে খুব ভালোবাসে রাহাত। রিমোট হাতে নিয়ে টিভিটা অন করল। টিভিতে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ।
হাত ধুয়ে সবেমাত্র গরম খিচুড়িতে হাত রেখেছে সে, অমনি কলিংবেলটা বেজে উঠল। এ সময় আবার কে এলো! বিরক্তিতে মুখটা কুঁচকে গেল রাহাতের। উঠল না। এক মিনিট পর আবার বেজে উঠল কলিংবেল। উফ! আর পারা গেল না। এই বৃষ্টিতেও নিস্তার নেই। কেউ না কেউ চলে এলই। বিরক্তিমাখা কুঁচকানো মুখ নিয়েই দরজা খুলে দিলো সে। দরজার ওপাশে এক সুন্দরী। মুখে ঝলমল হাসি। চমকাল রাহাত। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এগিয়ে এসে সে জানতে চাইল, আপনি রাহাত ভাইয়া না?
জি।
হাসল মেয়েটি। তাহলে ঠিক চিনতে পেরেছি। আমি মধুমিতা। পাশের ওই ফ্ল্যাটে নতুন উঠেছি। সাত দিন হলো। মুনিরার সাথে পরিচয় আছে। মাঝে মাঝে এসে গল্প করি।
ফ্যাকাসে হাসল রাহাত। ও আচ্ছা।
ভেতরে আসতে পারি ?
মুনিরা তো এখন বাসায় নেই।
জানি সেটা। সকালে বাবার বাড়ি গেছে। দেখা হয়েছিল আমার সাথে।
ও আচ্ছা।
ভেতরে আসি ?
আসুন।
দরজা ছেড়ে দাঁড়াল রাহাত। ঘরে ঢুকল মধুমিতা।
ভাইয়া, কিছু মনে করেননি তো?
কী মনে করব?
বাসায় ভাবী নেই, তবুও আমি বাসায় ঢুকে পড়লাম।
নাহ।
থ্যাংক ইউ ভাইয়া। বাইরে যা বৃষ্টি পড়ছে। হঠাৎ বাজ পড়ে আমার টিভিটা নষ্ট হয়ে গেল। মনে হয় পিকচার টিউবটা পুড়ে গেছে। আমি খুব ক্রিকেট পাগল। তার ওপর আজ সাকিক আর লিটন যেভাবে চার ছক্কা মারছে। খেলা দেখার লোভটা সামলাতে পারলাম না। তাই চলে এলাম।
সাথে সাথে মুখের বিরক্তি ভাবটা কেটে গেল রাহাতের। উজ্জ্বল হয়ে উঠল মুখ। বলল, আপনি খেলা দেখেন? গুড। ক্রিকেট খেলা একা দেখে আনন্দ নেই। দুজন হলে ভালো হয়। চার ছক্কায় চিৎকার করা যায়। হাততালি দেয়া যায়। লাফানো যায়।
বাহ! আপনি তো দেখছি আমার মনের কথাটাই বলে দিলেন।
চলুন।
মধুমিতা বলল, কোথায় ?
ডাইনিং টেবিলে।
কেন?
খিচুড়ি রান্না করেছি। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির দিনে গরম গরম খিচুড়ির সাথে টিভিতে খেলা দেখার মজাটাই আলাদা।
হাসল মধুমিতা। আপনি কী আমার হৃৎপিণ্ড ?
কেন বলুন তো?
আপনি তো দেখছি আমার সব পছন্দগুলোই পছন্দ করছেন।
হাসল রাহাত। কী জানি!
একটা কথা কিন্তু স্বীকার করতেই হবে ভাইয়া।
কী কথা?
মুনিরা ভাগ্যবান।
কেন ?
আপনার মতো রসিক আর রোমান্টিক বর পেয়েছে।
কেন? আপনার বর কি রোমান্টিক নয়?
সাথে সাথে উদাস হয়ে গেল মধুমিতা। একদম নয়। বড় সেকেলের মানুষ। গিয়ে দেখেন এখুনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। সে বলে বৃষ্টি ঘুমানোর জন্য।
অমনি লিটন দাস তিন বলে তিনটা ছক্কা মারল। গল্প থেমে গেল দুজনের। খেলার দিকে মনোযোগী হলো তারা। এক অসাধারণ ইনিংস খেলে বাংলাদেশ সাত উইকেটে জিতে গেল।
বাইরে বৃষ্টিটা আরো বেড়ে গেল। রাহাত রিমোট নিয়ে মুভির চ্যানেল দিলো। মেক্স। ক্যাটরিনা আর সালমান খানের মুভি হচ্ছে। রোমান্টিক মুভি।
বৃষ্টির দিনে মুভি দেখতে আমি খুব ভালোবাসি। অথচ ও ...? গলা ধরে এল মধুমিতার। কথা বলতে পারল না।
তার কাঁধে হাত রাখল রাহাত। মন খারাপ করবেন না। বৃষ্টির দিনে, খেলার দিনে আপনি চলে আসবেন আমার ঘরে। একসাথে খেলা দেখব। মুভি দেখব।
মমের মতো গলে গেল মধুমিতা।
রাহাত ফিসফিসে বলল, একটা গান শুনবেন, মধুমিতা? গিটার আনব?
মধুমিতা আস্তে করে বলল, হুমম।
রাহাত গিটার হাতে গান ধরল-রিমঝিম এই বৃষ্টিতে...।
তখনই ঘুম ভেঙে গেল মুনিরার। দেখে রাহাত স্বপ্নের ঘোরে গান গাইছে। জোরে একটা ঝাঁকুনি দিলো। রাহাত...রাহাত....., এই রাহাত ..।
রাহাত চোখ খুলল।
স্বপ্নে গান গাইছ কেন?
ও গান শুনছিল।
বুকটা ধক করে উঠল মুনিরার। ও কে?
মধুমিতা।
মধুমিতা! সর্বনাস! ও চলে এসেছে?
মানে?
মুনিরা সব খুলে বলল রাহাতকে। বলল, কাল বিকেলে আমি যখন বাগানে পায়চারি করছিলাম, তখন মালি আমাকে মধুমিতার কথা বলেছে। অনেক দিন আগে এই বাসায় থাকত সে। মধুমিতার বাবা একপ্রকার জোর করেই তাকে বিয়ে দিয়েছিল তার চেয়ে বিশ বছরের বড় এক বুড়োর সঙ্গে। বুড়োকে নিয়ে মধুমিতা সুখী হতে পারেনি। একদিন ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। লোকেরা বলে মধুমিতার আত্মা অতৃপ্ত। আজো চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। সুখী কোনো জুটি দেখলেই তার হিংসা হয়। খুন করে।
রাহাত কথা বলছে না। মুনিরা মাথা ঘুরিয়ে দেখে রাহাত আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমের ঘোরে বিড় বিড় করছে। মুনিরা জোরে একটা ঝাঁকুনি দিলো। রাহাত...এই রাহাত...।
রাহাত ফিসফিস করে বলল, মধুমিতা!
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর


আরো সংবাদ



premium cement