২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাপ ও বেজির লড়াই

-

অনেক দিন আগের কথা। এক রাজ্যে বাস করত এক রাজা। সে রাজা ছিল অনেক ধনী। ধন-দৌলত আর স্বর্ণ-রৌপ্যে ভরপুর ছিল তার রাজ্য। রাজ্যে কারো কোনো অভাব ছিল না। কারো মনে কোনো দুঃখ-কষ্ট ছিল না। এই রাজ্যের পাশে ছিল মরুভূমি। মরুভূমিতে বাস করত এক ভয়ানক ডাকাত দল। রাতে তারা বিভিন্ন রাজ্যে হানা দিত। রাজ্যের ধন-দৌলত আর স্বর্ণ-রৌপ্য কেড়ে নিয়ে আসত। একদিন এই ডাকাত দলের কাছে খবর এলো পাশে এক ধনী রাজ্য আছে। রাজ্যে আছে অনেক স্বর্ণ-রৌপ্য আর হীরা, মণি, মুক্তা। শুনে ডাকাত সর্দারের চোখ চকচক করে উঠল। সে সবাইকে ডেকে বলল, আমার তো আর তর সইছে না। তোমরা সবাই প্রস্তুতি গ্রহণ করো। আজ রাতেই ওই রাজ্যে হানা দিতে হবে। রাজ্যের সব হীরা, মণি, মুক্তা চুরি করে আনতে হবে। এই মরুভূমিকে স্বর্ণের মরুভূমিতে রূপান্তর করতে হবে।
ডাকাত সরদারের কথা পৌঁছে যায় রাজ্যের রাজার কাছে। রাজা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কী করবেন ভেবে পান না। কারণ মরুভূমির এই ডাকাত দল ছিল খুব শক্তিশালী। শক্তিতে তাদের সাথে পেরে ওঠা কঠিন ছিল। ডাকাত দলের হাত থেকে রাজ্যকে কিভাবে বাঁচানো যায় রাজা ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতে চলে গেলেন জঙ্গলের দিকে। তাকে জঙ্গলে মনমরা হয়ে হাঁটতে দেখে এক বিষধর সাপ বলল, রাজা মশাই, আজ তোমাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
রাজা বললেন, মহাবিপদে পড়েছি।
কী বিপদ?
আজ রাতে একদল ডাকাত আমার রাজ্যে ডাকাতি করতে আসবে। সেই ডাকাত দল অনেক শক্তিশালী। আমার সৈন্যবাহিনী তাদের সাথে পেরে উঠবে না। তাই ভাবছি কিভাবে রাজ্যকে ডাকাত দলের হাত থেকে রক্ষা করব।
সব শুনে বিষধর সাপ বলল, একদিন আমি পড়েছিলাম মহাবিপদে। আপনার রাজভবনে এক ইটের নিচে চাপা পড়েছিলাম। আমাকে দেখে সবাই বলেছিল, বিষধর সাপ! এখনি মেরে ফেলো। আপনি বলেছিলেন, না, সে তো আমার কোনো ক্ষতি করেনি, তাকে মারব কেন? তোমরা তাকে জঙ্গলে রেখে এসো। সেদিন আপনার দয়ায় আমি প্রাণ ফিরে পেয়েছিলাম। আজ আপনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে আপনার রাজ্যের পাহারাদারের দায়িত্ব আমি নিতে চাই।
শুনে রাজা খুব খুশি হলেন। বললেন, ডাকাত দলের হাত থেকে আমার রাজ্যকে রক্ষা করতে পারলে আমি তোমাকে প্রতিদিন দুধ কলা খাওয়াব।
সাপ বলল, ঠিক আছে।
রাতে ডাকাত দল রাজ্যের কাছাকাছি এসে দেখল রাজ্যের চারদিকে বড় বড় বিষধর সাপ চক্কর দিচ্ছে ! ফোঁস ফোঁস করে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
ডাকাতেরা খুব ভয় পেয়ে গেল। ভয় পেয়ে তারা ফিরে চলে গেল।
পরের রাতে আবার এলো। আবার দেখল রাজ্যের চার দিকে বিষধর সাপ। আবার তারা ফিরে গেল।
তার পরের রাতে আবার এলো।
তার পরের রাতে আবারও।
এভাবে এক সপ্তাহ এলো। কিন্তু বিষধর সাপদের কারণে একদিনও রাজ্যের ভেতরে ঢুকতে পারল না। ডাকাত সরদার পড়ল মহাভাবনায়। তাহলে কি আমরা আর রাজ্যে ঢুকতে পারব না? রাজ্যের স্বর্ণালঙ্কার ডাকাতি করতে পারব না? ডাকাত সরদারের ছিল এক বেজি। বেজি বলল, সরদার তোমাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?
ডাকাত সরদার সব খুলে বলল বেজিকে। বেজি বলল, চিন্তা করো না। আজ রাতে আমি যাবো তোমার সাথে। সাপের সাথে লড়াই করব আমি।
শুনে ডাকাত সরদার খুব খুশি হলো। বলল, ঠিক আছে।
রাতে সাপ আর বেজির শুরু হলো লড়াই। তুমুল লড়াই। কেউ হার মানছে না। একবার মনে হয় এই বুঝি বেজি জয়ী হবে, পরক্ষণে মনে হয়, না সাপ জয়ী হবে। এভাবে লড়াই করতে করতে ভোর হয়ে এলো। পুব আকাশে সাদা আভা ফুটে উঠল। কেউ হার মানল না। রাজ্যের সব লোক ঘুম থেকে উঠে ডাকাতদের দেখতে পেল। সাপ আর বেজির লড়াই দেখতে দেখতে কখন যে ভোর হয়ে এলো ডাকাতরা টেরই পায়নি। ডাকাতদের দেখে পুরো রাজ্যের লোক একজোট হলো। তারা ধাওয়া করল ডাকাত দলের ওপর। রাতের মতো দিনের আলোয় ডাকাতদের শক্তি থাকে না। অনেক কমে যায়। শক্তিতে ডাকাতেরা মানুষদের সাথে পেরে উঠল না। তারা ধরা পড়ে গেল। রাজা তাদের জেলে ভরে রাখল। একদিন ডাকাতেরা তাদের ভুল বুঝতে পারল। ভুলের জন্য রাজার কাছে অনুতপ্ত হলো। রাজা তাদের ক্ষমা করে দিলো এবং জেল থেকে মুক্তি দিলো। মুক্তি পেয়ে ডাকাতেরা ভালো হয়ে গেলেও সাপ আর বেজি একে অপরের শত্রু হয়েই থাকল। সেই থেকে আজো আমরা দেখি সাপ আর বেজির লড়াই।


আরো সংবাদ



premium cement