২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

একটি শোক সংবাদ

-

সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে যাচ্ছে শরতের যুবতী আকাশ। অঙ্গে জড়িয়েছে নীল ফিনফিনে শাড়ি, তিতাস পাড়ে হিমেল হাওয়ায় দুলছে কাশফুল; সুখের উচ্ছ্বাসে পাখা মেলে উড়ছে প্রজাপতি।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে আমি সবার বড়। বাবা সামান্য স্কুল মাস্টার, বাবার সামান্য বেতন ও টিউশনির টাকা দিয়ে আমাদের চার ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ এবং পুরো সংসার চলে। ছোট্ট বোনটাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান মা। আমাদের কথা ভেবে বাবা আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।

নীলা আমার বাল্যপ্রেম। কৈশোর পেরিয়েছি প্রেমের স্বপ্ন বুনে। নীলারও আমাকে বেশ পছন্দ তা বুঝতে পারতাম। এক শরতেই আমাদের প্রথম চিঠি আদান প্রদান। সেই থেকে যখন শরতে কাশফুলে ছেয়ে যায় নদীর তীর আমার নীলাকে খুব কাছে মনে হয়। জীবনটা তখনই খুব বেশি ভালো ছিল- যখন ছোট্ট ছিলাম, দু’জন ছিলাম দু’জনার খেলার সাথী। নীলাঞ্জনাকে আমি নীলা বলেই ডাকতাম। নীলাঞ্জনার বাবা হামিদ সাহেব বিশিষ্ট শিল্পপতি। তিনি দু’টি গার্মেন্ট ও একটি জুটমিলের মালিক। আমাদের প্রেম বামন হয়ে যেন আকাশের চাঁদ ধরার স্বপ্ন। ভুলেই গিয়েছিলাম আকাশ-জমিনের দূরত্বের ব্যবধান। নীলাঞ্জনার বাবা হামিদ সাহেব আমাদের সম্পর্ক কিছুতেই মেনে নেননি। খুব দ্রুতই তিনি বন্ধুর ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে ঠিক করলেন। ছেলে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কানাডায় থাকেন। বিয়ের কিছু দিন আগে এ কথা শুনে উন্মাদ হয়ে যাই আমি। কী করব, কোথায় যাব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম নীলাকে নিয়ে পালিয়ে যাব। নীলাও তাতে রাজি। কিন্তু বিপদ ঘটে পালাতে গিয়ে। আমরা নীলার বাবার লোকজনের হতে ধরা পরে যাই। নীলার বাবার লোকেরা সেদিন খুব মেরেছিল আমায়। সাথে সাথে হসপিটালে ভর্তি হতে হয়েছে। সাত দিনের মাথায় কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর পুলিশের হাতে তুলে দেন আমাকে। পুরোপুরি সুস্থ হলে চলে যেতে হবে চার দেয়ালের বন্দী জীবনে। আমি যেন আজ বড্ড অসহায়। প্রিয় মানুষটা সারাজীবনের জন্য পর হয়ে যাবে, ভাবতেই শরীরটা শিউরে উঠছে। হঠাৎ বিকেলের দিকে তমা এসে হাতে একটা চিঠি দিয়ে বলল, নীলা পাঠিয়েছে আপনার জন্য। তমা নীলার বান্ধবী। জানতে চাইলাম নীলাঞ্জনা কেমন আছে; আমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে তমা চলে গেল।


চিঠির ভাঁজ খুলে পড়তে যাবো এমন সময় ডিউটি ডাক্তার এর সাথে রুমে আসে পুলিশ অফিসার। চিঠিটা আর পড়া হয় না। দীর্ঘ প্রতীক্ষার বাঁধ ভেঙে রাত শেষে ভোর হলো; ভোর হওয়ার সাথে সাথেই প্রিয় মানুষটির নাম ধরে- মসজিদের মাইকে উচ্চারিত হচ্ছে; বাতাসে-বাতাসে ছড়িয়ে যাচ্ছেÑ একটি শোক সংবাদ।
বুকটা ভেঙে যায়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। রুমের আবছা আলোয় চিঠিটা মেলে ধরি চোখের সামনে। ঝাপসা চোখে দেখি তাতে লেখাÑ

প্রিয় পলাশ,
জানি ভালো নেই- তবুও বলছি কেমন আছো? তোমাকে ওরা খুব মেরেছে... তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তাই না? জানো আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে বুকের ভেতরের হৃৎপিণ্ডটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। ওরা তোমাকে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী করে রেখেছে। আমাকেও ঘরের ভেতর আটকে রেখেছে, আমার কাছে কাউকেই আসতে দিচ্ছে না। আগামীকাল বাদ জুমা আমার বিয়ে; বিয়ের পালকি চরে যাব ঠিকই- তবে লাল-বেনারসি পরে না, সাদা কাফনের কাপড় পরে। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও; আমি পারব না, তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে স্বামী বলে মেনে নিতে। অন্যের গলার মালা হওয়ার চেয়ে তোমার নামের মালা হয়ে মরে গিয়েও তোমার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই অনন্তকাল।
লেবানন


আরো সংবাদ



premium cement
আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত

সকল