১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্ধুত্ব

-

আবীর ও রাতুল একই ক্লাসের ছাত্র। একই পাড়ায় থাকে। দু’জনের বন্ধুত্ব দেখে সবার হিংসা হয়।
সেদিন ক্রিকেট খেলায় মৃদুলকে নিয়ে হঠাৎ দু’জনের ঝগড়া।
আবীর ও রাতুল দু’দলে দু’জন খেলবে। মৃদুল ভালো খেলে বলে ওকে দু’জনই নিজের দলে নিতে চায়। এই নিয়ে ঝগড়া। শেষে খেলা পণ্ড হলো, দু’জনের কথা বলাবলিও বন্ধ হলো।
ক্লাসে দু’জনের চোখাচোখি হয়। কিন্তু মুহূর্তে চোখ সরিয়ে নেয়।
খেলার মাঠে একজন আরেকজনের ছায়া মাড়ায় না আবীর ও রাতুল। ওদের কাণ্ড দেখে পাছে সবাই হাসে।
আজ পাড়ার ধনী মানুষ জুলমত চাচার বাড়িতে ইফতারের দাওয়াত ছিল। বাবার সাথে রাতুলও দাওয়াতে এলো। আবীরকেও ইফতার পার্টিতে দেখল। স্বাভাবিকভাবেই দু’জনের কথা হলো না। তবে চোখাচোখি হলো।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে বাবা জানতে চাইলেনÑ ‘হ্যাঁ রে রাতুল, ইফতার পার্টিতে আবীরের সাথে তোকে কথা বলতে দেখলাম না যে! তোদের ঝগড়া হয়েছে নাকি?’
রাতুল কিছু বলল না।
বাবা আবার জানতে চাইলেন।
রাতুল আবীরের সাথে ঝগড়ার বিস্তারিত বলল।
শুনে বাবা বললেন, ‘দেখব দুই বন্ধু কথা না বলে ক’দিন থাকতে পারিস।’
আবীরের বাসায়ও এসব নিয়ে কথা হয়েছে।
আবীরকে মা রাতুলদের বাসায় গিয়ে ইফতার পার্টির দাওয়াত দিয়ে আসতে বললেন।
আবীর সাফ বলে দিলোÑ ‘আমি যেতে পারব না।’
আবীরের কথা শোনে মা অবাক হলেনÑ বলে কী ছেলে! এমন কথা আবীরের মুখ থেকে তো বেরোনোর কথা নয়! যে কিনা সুযোগ পেলেই রাতুলদের বাড়িতে যাবার জন্য অধীর, সে এখন বিরক্ত হচ্ছে! যেতে চাচ্ছে না...
আবীরের মা ভাবেনÑ আবীর ও রাতুলের ঝগড়ার কারণ জানতে হবে।
আবীরকে ডেকে জানতে চাইলেন।
সব শোনে মা হাসলেন। তারপর বললেন, ‘বোকা ছেলে, খেলাধুলা নিয়ে ঝগড়া করে বন্ধুর সাথে কথা বলা বন্ধ রেখেছিস!’
আজ বিকেলে গলির মোড় হয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল রাতুল। দেখল মৃদুলের সাথে মোড়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আবীর। দেখে রাতুলের ভেতরে কী যেন হয়ে গেল! একটুক্ষণ দূর থেকে দাঁড়িয়ে ওদের দেখল রাতুল। হঠাৎ ওর মনে হলোÑ যে মৃদুলকে নিয়ে ওদের মধ্যে ঝগড়া সেই রাতুলের সাথে তো ঠিক মিল আছে আবীরের। তাহলে মাঝখান দিয়ে আমাদের বন্ধুত্বে ফাটল রেখে কী লাভ?
মুহূর্তে কিছু একটা ভাবল রাতুল!
দেখতে দেখতে ঈদ চলে এলো।
ঈদগাহে রাতুলের সাথে আবীরের একদম মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল। হকচকিয়ে দু’জন দু’জনের দিকে তাকাল। আবীরের ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। কিন্তু কেউ কারো সাথে কথা বলল না।
নামাজ শেষে বাড়ি ফিরল না রাতুল। সোজা আবীরদের বাড়িতে এলো।
দরজা খুলল আবীরই। রাতুলকে দেখে অবাক। একমুহূর্ত কথা বলতে পারল না দু’জন।
রাতুল বলল, ‘ঈদের দিনেও আমরা কথা না বলে থাকব?’
বন্ধুর কথায় চোখ জলে ভরে উঠল আবীরের। রাতুলের সাথে কোলাকুলি করল।
রাতুলকে দেখে আবীরের বাসার সবাই অবাক। আবার খুশিও।
আবীরের মা যতœ করে দুই বন্ধুকে ফিরনি-সেমাই খেতে দিলেন। ক’দিন আগে তাদের বাড়িতে বাবার সাথে ইফতার পার্টিতে এসেছিল রাতুল। তখনো দু’বন্ধুতে কথা হয়নি। আর আজ যেন এতদিনের জমে থাকা কথা ঝরনাধারার মতো ঝরে পড়ছে!


আরো সংবাদ



premium cement