২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

টেলিপ্যাথি

-

আকাশে কালো মেঘের পাহাড়। বাতাস বইছে না। গুমোট। আকাশের মন ভার। কিষাণ-কিষাণিরা শুকাতে দেয়া ধান, খড় ঘরে তোলায় ব্যস্ত। গুড়–ম গুড়–ম মেঘ ডাকছে। যেকোনো মুহূর্তে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামবে। সজলের মনের অবস্থাও আজ এমনই। ইচ্ছে করছে ডুকরে কাঁদতে। এই গ্রাম তার কাছে মায়ের মতো। দূরে কোথাও গেলে মায়ের জন্য যেমন মন পোড়ে, তেমনি গ্রামের জন্যও। এই গ্রাম তার পৃথিবী। গ্রামের প্রতিটি পথঘাট তার সাথে মূর্তমান হয়ে কথা বলে। এই গ্রাম ছেড়ে সে আজ চলে যাচ্ছে। পাইলট স্কুলের ছাত্রাবাসে উঠবে। তার বাবা বলেছেন, ‘এখন থেকে সজল ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করবে।’ তার মা চায় সজল বাড়িতেই থাক। সজলের ইচ্ছাও তাই। কিন্তু তার বাবা কিছুতেই মানছেন না। তার এক কথা, বাড়িতে থেকে লেখাপড়া হবে না।
সজলের নানাভাই বাড়ি আসার সাথে সাথে টিনের চালে ঝমঝম শব্দে বৃষ্টি নামল। তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টির তোড়ে চার দিক ঘন কুয়াশার মতো লাগছে। তার নানাভাই পাকা কাঁঠাল নিয়ে এসেছেন। কাঁঠাল খাওয়ার আদর্শ দিন আজ। তাকে দেখে সজলের মন ভালো হয়ে গেল। বৃষ্টি তার মনের কষ্ট কিছুটা ধুয়ে নিলো। নানাভাইকে সজলের খুব পছন্দ। তার ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য সজলকে মুগ্ধ করে। তা ছাড়া তিনি খুব মজা করে গল্প বলতে পারেন। তার গল্প মুগ্ধকর। বারান্দায় চেয়ার পেতে দু’জন সামনাসামনি বসল। তিনি তার যৌবনকালের গল্প বলছেন :
‘জ্যৈষ্ঠের শেষাশেষি। হঠাৎ শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাস। আমি আর মিরাজ যুতি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। মিরাজ আমার চাচাতো ভাই। কাছাকাছি বয়সের। মহুয়া বিলের কাছাকাছি গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড। বড় বড় বোয়াল পাড়ে উঠে আসছে। বৃষ্টির অল্প পানিতে জড়াজড়ি করছে। যুতি মারব কয়টাকে! আমরা দিশেহারা হয়ে গেলাম। অপূর্ব দৃশ্য। মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। বড় বড় দু’টি গেঁথে ফেললাম। তারপর খালি হাতেই আরো তিন-চারটি ধরে ফেললাম। এক সময় বৃষ্টি থামল। মাছ নিয়ে বাড়ি আসতে পারছি না। যুতির লাঠিতে মাছ গেঁথে দু’জন দু’মাথা কাঁধে নিলাম। এত বড় বোয়াল আর চোখে পড়ে না। সেই দিন আর ফিরে আসবে না।’
সজলের মা পেছনে এসে দাঁড়ালেন। জলো চোখে বললেন, ‘সজল ছাত্রাবাসে চলে যাচ্ছে বাবা। আমি বলি, বাড়ি থেকেই লেখাপড়া করুক। তার বাবা কিছুতেই মানছে না।’ তাকে থামিয়ে দিয়ে সজলের নানা বললেন, ‘এতে কান্নার কী হলো? বড় কিছু পেতে হলে ছোট কিছু ছাড়তে হয়। আমরাও বাড়ি ছেড়ে থেকেছি। লেখাপড়া করতে হলে তো বাড়ি ছাড়তেই হবে।’ এ কথা বলে তিনি অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘ছাত্রজীবনের একটি ঘটনার কথা কোনো দিন ভুলতে পারব না। আমি তখন তোমার মতোই ছোট। ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমাদের সময় এত স্কুল ছিল না। আমি পড়তাম বিদ্যালংকার সরকারি হাইস্কুলে। বাড়ি থেকে ১৫ মাইল দূরে। বাধ্য হয়েই আমাকে ছাত্রাবাসে থাকতে হতো। কিন্তু মন পড়ে থাকত বাড়িতে। অনিচ্ছুক শরীরটাকে নিয়ে আমি ছাত্রাবাসে থাকতাম। এক বৃহস্পতিবার রাতে আমি পড়ছিলাম। হঠাৎ মায়ের ডাক শুনতে পেলাম। খুব স্পষ্ট।
‘কী করছিস সজল?’
‘ইংরেজি পড়ছি মা।’
‘কাল বাড়িতে চলে আয়। গোল্লা গাছের শেষ কাঁঠাল দু’টিও পেকে গেছে। তোর জন্য রেখেছিলাম।’ আমাদের গোয়ালঘরের পাশে একটি কাঁঠাল গাছ ছিল। খুব মজার কাঁঠাল। কোষগুলো গোল্লার মতো মিষ্টি। গাছটিকে আমরা নাম দিয়েছিলাম গোল্লা গাছ। এই গাছের কাঁঠাল সবচেয়ে দেরিতে পাকত।
আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। পরদিন সকালেই বাড়ি চলে এলাম। আমাদের বাড়ির সামনে ধু ধু করা ফসলের মাঠ। এই মাঠ পাড়ি দিয়েই আমাকে বাড়ি যেতে হতো। মাঠের মাঝখানে যেতেই লক্ষ করলাম, মা ডান হাতের তালুতে সূর্যকে আড়াল করে মাঠের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার পথ চেয়ে অপেক্ষা করছেন। আমাকে কাছে পেয়ে মা যে কী খুশি! বাড়িতে গিয়ে আমি রীতিমতো বিস্মিত। আমার পছন্দের সব খাবার রান্না করে রেখেছেন। মা কী করে জানলেন, আমি আসব! জিজ্ঞেস করতেই একটা হাসি দিয়ে বললেন, আমি জানতাম তুই আসবি।
বুঝলে নানাভাই, আমাদের সময় এত টেলিফোন ছিল না। আর মা-ছেলের যোগাযোগে টেলিফোন লাগেও না। টেলিপ্যাথিতেই হয়ে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক

সকল