২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পেটু ডাক্তারের সোনার কলস

-

অনেক দিন আগের কথা। শহর থেকে অনেক দূরে ছিল এক ছোট্ট গ্রাম। সে গ্রামে বাস করত এক কবিরাজ-ডাক্তার। ডাক্তারের মাথায় ছিল টাক আর ছিল নাদুসনুদুস চেহারা ও বড় পেট। খেতে খুব ভালোবাসত বলে সবাই তাকে পেটু ডাক্তার বলে ডাকত। চিকিৎসায় তার হাত ছিল খুব ভালো। তার চিকিৎসা নিয়ে একটা ছোট প্রবাদ আছে, পেটু ডাক্তার রোগীর হাত ধরলেই রোগ ভালো হয়ে যায়। ভালো ডাক্তার হিসেবে আশপাশের দশ গ্রামে পেটু ডাক্তারের নাম ছড়িয়ে পড়ল। সকাল হলেই বাড়িতে রোগীরা লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। সে গভীর রাত পর্যন্ত রোগী দেখে। চিকিৎসা দেয়। তবে দুই ঘণ্টা পর পর আধা ঘণ্টা বিরতি। এ সময় সে খাওয়া-দাওয়া করে।
একদিন রোগী দেখতে দেখতে গভীর রাত হয়ে গেল। রোগীরা সব চলে গেলে বড় একটা হাই তুলে পেটু ডাক্তার চেম্বার বন্ধ করল। হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসবে এমন সময় কাঁদতে কাঁদতে এক বুড়ি এলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেনÑ পেটু বাবা, পেটু বাবা, বাসায় আছো?
খাওয়া ছেড়ে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো পেটু ডাক্তার। বললÑ কী হয়েছে বুড়ি মা, তুমি কাঁদছ কেন?
আমার মেয়ের ভীষণ অসুখ।
কী হয়েছে?
জানি না।
সাথে নিয়ে এসেছ?
না। সে হাঁটতে পারে না। বিছানায় শুয়ে আছে।
ঠিক আছে চলো।
পেটু ডাক্তার বুড়ির সাথে তার বাড়ি গেল। রোগী দেখে কিছু ওষুধ দিয়ে বলল, এই ওষুধগুলো খাওয়াবে মা। ভয়ের কোনো কারণ নেই, তোমার মেয়ে ভালো হয়ে যাবেÑ বলে সে বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করল। পথে ছিল এক বড় বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড়ের কাছে আসতেই শুনতে পেল বাঁশঝাড়ের ভেতর কে যেন গুনগুন করে কাঁদছে। পেটু ডাক্তার ভয় পেয়ে গেল। কারণ, এই জায়গাটা ভালো নয়। এখানে জিন-ভূতেরা বাস করে। তবুও সে একটু সাহস করে গলা উঁচিয়ে বলল, কে ওখানে? কে? কাঁদছ কেন?
ঝোপের ভেতর থেকে লম্বা লিকলিকে এক লোক বেরিয়ে এলো। পরনে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা। কেঁদে কেঁদে বলল, আমি জিনের বাদশাহ।
জিনের নাম শুনেই একটা ঢোক গিলল পেটু ডাক্তার।
জিনের বাদশাহ বলল, ভয় পেও না। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না। আমার ছেলের ভীষণ অসুখ। তুমি একটু আমার সাথে বাড়িতে চলো।
পেটু ডাক্তার আমতা আমতা করে বলল, না মানে...।
কোনো ভয় নেই ডাক্তার বাবু। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না। তুমি শুধু আমার ছেলেকে ভালো করে দাও, বিনিময়ে তুমি যা চাইবে সব দেবো।
পেটু ডাক্তার জানত জিনরা অনেক বড়লোক। তাদের অনেক টাকা-পয়সা আর স্বর্ণালঙ্কার আছে। সে সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইল না। রাজি হয়ে গেল।
জিনের সাথে তার বাড়ি গেল। দুটো ওষুধ খেয়ে জিনের ছেলের অসুখ ভালো হয়ে গেল। জিন খুশি হয়ে বলল, তুমি কী চাও বলো?
পেটু ডাক্তার বলল, আমি এক কলস স্বর্ণ চাই।
জিনের বাদশা তাকে এক কলস স্বর্ণ দিলো।
স্বর্ণ পেয়ে পেটু ডাক্তার বেজায় খুশি হলো। স্বর্ণের কলস মাথায় করে বাড়ি ফিরল। বাড়ি ফিরে দেখল তার ওষুধের পুঁটলিটা নেই। জিনের বাড়িতে ভুল করে রেখে চলে এসেছে। ওই পুঁটলির ভেতরেই তার সব চিকিৎসা বিদ্যা ছিল। তবুও সে মন খারাপ করল না। ডাক্তারি করে আর কী হবে? কলসভর্তি স্বর্ণ বিক্রি করলে সে অনেক টাকা পাবে। বাড়ি করবে। গাড়ি করবে। তারপর পায়ের ওপর পা রেখে বসে বসে খাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সে স্বর্ণ বিক্রি করে অনেক টাকা পেল। সেই টাকা দিয়ে বাড়ি করল। গাড়ি করল। অনেক জায়গাজমি কিনল। তারপর পায়ের ওপর পা রেখে বসে বসে খেতে লাগল, আর সুখে দিন কাটাতে লাগল। বসে খেতে খেতে তার শরীরে নানান রোগ দেখা দিলো। সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। চিকিৎসার জন্য ওষুধ তৈরি করতে গিয়ে দেখল, সে আর ওষুধ তৈরি করতে পারছে না। সব বিদ্যা ভুলে গেছে। সে বুঝতে পারল তার বড় সম্পদ ছিল চিকিৎসা বিদ্যা। চিকিৎসা বিদ্যা জানা থাকলে সে ওষুধ তৈরি করে খেতে পারত। তার রোগ ভালো হতো। সে আবার সুস্থ হয়ে উঠত। কিন্তু কলসভর্তি স্বর্ণ বিক্রি করা সম্পদ তাকে কিছুই দিতে পারল না। পেটু ডাক্তার তার ভুল বুঝতে পারল। বিদ্যার চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছুই হতে পারে না। সে তার ভুল বুঝতে পেরে এখন আপসোস করা ছাড়া তার আর কিছুই করার রইল না। সে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।


আরো সংবাদ



premium cement