২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হজ ব্যবস্থাপনায় হাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

-

হাবের মহাসচিব এম শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেছেন, একটি ভালো হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এজেন্সিগুলো এবং সরকার ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাঝামাঝি থেকে হাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাবের দায়িত্বে আসার পর নিজে অত্যন্ত সততা আন্তরিকতা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে দেশীয় আন্তর্জাতিকভাবে হাবের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। আবারো হাবের নেতৃত্বে আসলে হজ এজেন্সি, হজযাত্রীদের হজ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দক্ষ ও সচেতন করার জন্য হাবে একটি গবেষণা সেল স্থাপনের উদ্যোগ নেবেন। হাবের তরুণ মহাসচিব হিসেবে গত দুই বছরে হজ এজেন্সি ও হজযাত্রীদের কল্যাণ তথা সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় নিজের ও হাবের কার্যক্রম নিয়ে নিয়ে নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন তিনি।
নয়া দিগন্ত : হজ ব্যবস্থাপনায় হাব কোন ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে?
তসলিম : বাংলাদেশ পৃথিবীর চতুর্থ হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশ। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী প্রেরণের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দেশ। আমাদের দেশ থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী হজে গমন করেন, যা পৃথিবীর আর কোন দেশ থেকে করেন না। এ ক্ষেত্রে এজেন্সিগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। পাশাপাশি এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবের ভূমিকাও অনেক। হাব এখানে এজেন্সিগুলো ও মন্ত্রণালয় অর্থাৎ কর্তৃপক্ষ-সরকার রেগুলেটরি অথরিটির সাথে সমন্বয় করে হজ ব্যবস্থাপনায় কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করে। পাশাপাশি এজেন্সিগুলোর সুবিধা অসুবিধাগুলো সরকারকে বা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। ন্যায্য দাবিগুলো আদায় করার জন্য কাজ করে। এজেন্সিগুলোকে তাদের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে হজযাত্রীদের প্রতি তাদের দায়িত্ব এবং হজযাত্রীদের অধিকারের ব্যাপারে সজাগ করে। এককথায় একটি ভালো হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এজেন্সিগুলো এবং সরকার ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাঝামাঝি থেকে হাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নয়া দিগন্ত : কিন্তু দেখা যায়, প্রতি বছরই হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আসে। এই অনিয়ম বন্ধে হাবের কি কিছু করণীয় নেই?
তসলিম : দেখুন, যিনি কাজ করবেন তার সমালোচনা হবে। কখনো কখনো তিনি অভিযুক্তও হবেন। আমি মনে করি, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ বিশ হাজার হজযাত্রী নিয়ে সৌদি আরবে এজেন্সিগুলো গমন করে। তাও আবার এটা সাধারণ কোনো ভ্রমণের মতো নয়। আপনি আমেরিকা যান, কানাডা যান, ইংল্যান্ডে যান অথবা সিঙ্গাপুরে যান, একটা ভিসা করে আপনি যেকোনো দিন যেকোনো সময় খুশি একটি টিকিট করে যেতে পারেন। এমনকি আপনি যাত্রা বাতিল করে টিকিট বাতিল করে অন্য দিনও যেতে পারেন। আবার সাত দিন থাকার জন্য গিয়ে প্রয়োজন মনে করে ১৪ দিনও থাকতে পারেন বা সাত দিনের জায়গায় তিন দিন থেকেও চলে আসতে পারেন। কিন্তু হজের এই ট্রিপটা অন্য ধরনের। এখানে নির্দিষ্ট দিন মেনে যেতে হয়, দু’টি নিয়ম রাষ্ট্রের নিয়ম মেনে এটি পরিচালনা করতে হয়। নির্দিষ্ট দিনে বাংলাদেশ থেকে রওনা এবং নির্দিষ্ট দিনে মক্কা-মদিনায় মুভমেন্ট, নির্দিষ্ট দিনে মিনা, আরাফা, মুজদালিফায় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা। সবগুলো টাইমফ্রেমের ভেতরে থেকে করতে গেলে কখনো কখনো কারো কোনো কোনো বিষয় মনঃপূত নাও হতে পারে। বিশেষত দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, হজ সম্পর্কে বলতে গেলে হজের দু’টি পর্যায় আছে। একটি পর্যায় বাংলাদেশ একটি পর্যায় সৌদি আরব। এজেন্সিদের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ দেখা যায় সৌদি আরবে। কিন্তু সৌদি আরব অংশে আসলে এজেন্সিদের কিছুই করার থাকে না। একজন হজযাত্রী জেদ্দা এয়ারপোর্টে অবতরণ করার পর থেকে সব দায়িত্ব সৌদি সরকারের। এ ক্ষেত্রে এজেন্সিকে দোষী করার কিন্তু কোনো সুযোগ নেই। কারণ এজেন্সি ইচ্ছে করলেও সৌদি আরবের এই সেবাগুলো নিশ্চিত করার তার কোনো ক্ষমতা নেই। এমনকি সরকারি ব্যবস্থায় যেসব হজযাত্রী যান তাদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। অর্থাৎ সৌদি পর্বে যে অভিযোগগুলো করা হয়ে থাকে এই অভিযোগগুলো আসলে এজেন্সির বিরুদ্ধে নয়। যদিও এজেন্সির বিরুদ্ধে করা হয়। দ্বিতীয়ত, কিছু অভিযোগ করেন খাবার নিয়ে, কিছু অভিযোগ করেন বাড়ি দূরে নিয়ে। আসলে বাড়ি দূরে এবং কাছে বিষয়টি আপেক্ষিক। কারো কাছে ৩০০ মিটারও দূরে, আবার কারো ৭০০ মিটার দূরত্বে ও স্বাছন্দ্য। মূল বিষয়টা হলো মানুষের প্রত্যাশা। প্রত্যাশা হলো, তিনি যেমন করে খাবেন সেটা হয়তো পূরণ হয় না। আবার অনেকে ভাবেন প্রথম হজে গেলাম, জীবনে অনেক দেশে গিয়েছি কত আরামে ছিলাম। আসলে ইউরোপ আমেরিকা ভ্রমণের সাথে হজের তুলনা করে কোনো লাভ নেই। এ জন্য আমি বলব, ঢালাও যে অভিযোগ সেগুলো সঠিক নয়। তারপর যদি কোনো ছোটখাটো অভিযোগ থাকে এগুলো বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে সুরাহা করা হচ্ছে। আমি একটি উদাহরণ দিতে চাই, ২০১৮ সালের হজে এক লাখ ২০ হাজার হাজী গেল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মাত্র ১৫৮ জন অভিযোগ করেছে। তার মানে অভিযোগের সংখ্যা ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্র। তারপরে ১৫৮ থেকে ৪২টিতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আরো অনেকে হয়তো অব্যাহতি পাবে। এই কয়টা অভিযোগ থাকে তাহলে আমি মনে করি এতটুকু অভিযোগ থাকা অযৌক্তিক নয়।
নয়া দিগন্ত : হজ ব্যবস্থাপনায় দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের বিষয়টি নিয়ে আপনারা কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে তাদের মাধ্যমেই হজ এজেন্সিগুলো ব্যবসায় করে। আবার এদের কারণেই হজযাত্রীদের ভোগান্তি হয় বলে আপনারাই বলে থাকেন।
তসলিম : আসলে আমাদের হজযাত্রীদের সচেতন করতে হবে। আমরা হাব, ধর্ম মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা এই কথাগুলো বারবার প্রচার করছি, বলে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে আমরাও বিজ্ঞাপন দেই। আমরা বলি, হজযাত্রীরা যাতে হজযাত্রার চুক্তি সরাসরি এজেন্সিগুলোর সাথে করেন। এজেন্সিকে সরাসরি টাকা দেন। অফিসে এসে অথবা এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়ে মানি রসিদ সংরক্ষণ করেন। বস্তুত আমাদের হজযাত্রীরা কখনো ট্রেডিশনাল যে পদ্ধতি সেটা থেকে বের হতে পারেন না। তারা সহজে কাজটা করতে চান, হজযাত্রার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজকে দেখা গেল বাড়ির পাশের কোনো মোয়াজ্জিন অথবা অন্য কোনো দালাল ফড়িয়ার কাছে টাকা দিয়ে তারা হজযাত্রা নিশ্চিত করতে চান। এটার কারণ আমার যেটা ধারণা, খুব সহজে তাদের কাছে খোঁজখবর পাওয়া যায় বা কষ্টটা লাঘব করার জন্য। কিন্তু ফলাফল কী দাঁড়ায়? এই রকম দালাল অনেক সময় লাপাত্তা হয়ে যায়, টাকা মেরে দেয়, অনেক সময় ঠিকমতো সেবা দেয় না, এজেন্সিকে টাকাটা পরিশোধ করে না। এ জন্য আমাদের হজযাত্রীদের সচেতন হতে হবে। যাতে অন্তত আল্লাহর ঘরে যাবেন জীবনে একবার যাবেন যা অনেক কাক্সিক্ষত। তিনি যদি আমেরিকায় মেয়ের কাছে যান বা অন্য দেশে যান তাহলে তারা অ্যাম্বাসিতে আসেন তিন-চার দিন সময় দেন। হজের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমি মনে করি অ্যাম্বাসিতে তিনি যাবেন না এজেন্সি পরিদর্শন করা, এসেন্সিতে আসা এবং এজেন্সির সাথে সরাসরি চুক্তি করা উচিত এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের পরিহার করা উচিত। আর এ জন্য আমাদের ভূমিকা হলো, আমরা হজযাত্রীদের সচেতন করছি, মিডিয়াও করছে। আমরা হজ ও ওমরাহ মেলা করি। সেখানে আমরা এই তথ্যগুলো দেই। এ ছাড়া বিভিন্ন মিডিয়ায় যখন কথা বলি বিষয়গুলো তুলে ধরি। এভাবে আমাদের হজযাত্রীরা সচেতন হলে মধ্যস্বত্বভোগী মুক্ত হতে পারব।
নয়া দিগন্ত : হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া এই বছর ১০ হাজার টাকা কমানো হলেও এখনো তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। হাব কি এতেই সন্তুষ্ট?
তসলিম : আপনি জানেন, হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নিয়ে গত দুই বছর আমি বেশি সোচ্চার ছিলাম। আমি যেভাবে দৃঢ়তা ও যৌক্তিকতার সহিত তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে ধরেছি। আমি এখানে তুলে ধরতে চেয়েছি যে, সাধারণ যাত্রীরা সৌদি আরবে আসা যাওয়া করেন তখন ভাড়া কত, ওমরাহযাত্রীদের ভাড়া কত এবং সে ক্ষেত্রে আমার কথা ছিল যে হজের ফ্লাইটগুলো যেহেতু হজের জন্য ডেডিকেটেড, সেহেতু সর্বোচ্চ ভাড়া ডাবল হতে পারে। কিন্তু ভাড়াটা এর চেয়ে অনেক বেশি। এ নিয়ে মিডিয়াসহ সব জায়গায় আমি কথা বলেছি। সবশেষে আমরা কিন্তু সফল হয়েছি।
২০১৯ সালের হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া প্রস্তাবিত ভাড়ার চেয়ে ২০ হাজার টাকা কমেছে, পূর্বের ভাড়ার চেয়ে ১০ হাজার ১৯১ টাকা কমেছে। আমি মনে করি, এটি যুগান্তকারী ঘটনা। ইতিহাসে কখনো হজের ভাড়া কমার নজির নেই। এই প্রথম হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমল। বাংলাদেশে কোনো জিনিসের দাম বাড়লে আর কমে না। তবে কমে যেটা হয়েছে এতে আমি সন্তুষ্ট নই। তবে এই জায়গাতে আমি সন্তুষ্ট যে, এই কমানোর মাধ্যমে আমাদের যে দাবি ছিল সেই দাবির পক্ষে কর্তৃপক্ষ অবস্থান নিয়েছেন এবং দাবির যৌক্তিকতাটা প্রমাণ হলো।
আমি মনে করি ভবিষ্যতে বিমান ভাড়াটা আরো কমবে। থার্ড ক্যারিয়ারের বিষয়ে আমি বলব। আমাদের জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতিমালায় লেখা ছিল শুধু দু’টি এয়ার হজযাত্রী পরিবহন করবে। আমাদের অনুরোধে এবং যৌক্তিকভাবে বিষয়টি তুলে ধরার কারণে ধর্ম মন্ত্রালয় বর্তমান হজ ও ওমরাহ নীতিমালায় উল্লেখ করেছে সৌদি এয়ারলাইন্স ও বাংলাদেশ বিমান এবং মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক অন্যান্য এয়ারলাইন্স ও হজযাত্রী পরিবহন করতে পারবে। এই কথাটি সংযোজিত হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টায় থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করার নতুন একটি এভিনিউ ওপেন করা হয়েছে। আমি আশা করি এই কাজটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা ভবিষ্যতে থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করতে পারব। আপনি যখন সেবা প্রদানকারী সংস্থা নির্দিষ্ট করে দেন, ছোট করে দেন তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা আসবে, তারা ভাড়াও বেশি নিতে চাইবে, সুবিধাদি কম দিতে চাইবে। তাদের সেবা নিতে আপনি বাধ্য। যখন সেবার অনেক দরজা আপনি ওপেন করে দেবেন, বিষয়টাকে ওপেন এবং ওয়াইড করে দেবেন তখন প্রতিযোগিতা হবে। অপরাপর এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ভাড়া কমার প্রতিযোগিতা হবে এবং কে কত সেবা দিতে পারে এটার প্রতিযোগিতা হবে। এতে করে কিন্তু হজ এজেন্সি এবং হজযাত্রীরা বেনিফিটেড হবে।
নয়া দিগন্ত : হজ পালনে হজযাত্রীদের কোন দিকগুলোর ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
তসলিম : হজ পালনে যোগ্যতা কি প্রয়োজন। বলা হয়ে থাকে অর্থনৈতিক যোগ্যতা ও শারীরিক যোগ্যতা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমি বলব, হজ করার জন্য প্রথম যেটা প্রয়োজন আমি মনে করি তারা প্রাক-নিবন্ধন করবেন সরাসরি এজেন্সিতে এসে। এজেন্সির অফিসে আসবেন। লেনদেন এজেন্সির মাধ্যমে করবেন। দ্বিতীয়ত, অনেক বয়সে আমাদের দেশের হজযাত্রীরা হজ করে থাকেন। আমি বলব, বেশি বয়সে গেলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করা খুবই কঠিন। কারণ এটি শারীরিক ইবাদাতও। তাই অর্থনৈতিকভাবে যারা স্বাবলম্বী আগেই হয়ে যান এবং শারীরিক ফিটনেস থাকে তাহলে কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে হজ ফরজ হবে তা না। যখনই সামর্থ্যবান হবেন তখনই তাকে হজে যেতে হবে। তাহলে আমি মনে করি যুবক অবস্থায় যাওয়া উচিত। আর হজযাত্রার জন্য ধৈর্য থাকতে হবে। কষ্ট করার মতো মানসিকতা নিয়ে যেতে হবে। হজযাত্রা কিন্তু কোনো প্লেজার ট্রিপ বা আনন্দ ভ্রমণ নয়। আমরা অনেক সময় বাসস্থান, খাবার নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকি। আমার মনে হয়, আমরা আল্লাহর ঘরে যাচ্ছি, আল্লাহর মেহমান হিসেবে যাচ্ছি ধৈর্য ধারণ করে যাওয়া। আর আমি হজযাত্রীদের বলব, তারা যাতে হজের মাসলা মাসায়েল এবং অন্যান্য নিয়মগুলো কোথায় কী করতে হবে আগে থেকে জেনে যাবেন, অসুস্থ যারা তাদের ওষুধপত্র নিয়ে যাবেন। আমি আগেও বলেছি, বিমান থেকে নামার পরে জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে যে নতুন বিড়ম্বনা শুরু হয় সেটা সৌদি সরকার কর্তৃক দেয়া সার্ভিস। এই বিড়ম্বনা এড়ানো যাবে না। কারণ একসাথে ২৫-৩০ লাখ লোক হজ করতে যান একই জায়গায়, কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। তাহলে খেয়াল রাখতে হবে যে সামনে আমার কষ্ট থাকবে এই যেন সহ্য করতে পারি যেন মানতে পারি। বিশেষ করে মিনা, মুজদালিফা, আরাফায় অনেক কষ্ট। মিনায় খাবার কম গ্রহণ করতে হবে। কারণ এই স্থানগুলোতে টয়লেট ব্যবহার করার জন্য ২০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এই অপেক্ষার সময় নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। সব বিষয় বিবেচনা করে খাবার গ্রহণ করবেন। হজে গ্রুপ মুভমেন্টে থাকা ভালো। না হয় অনেকে হারিয়ে যান। এটাও খেয়াল রাখা উচিত।
নয়া দিগন্ত : হাবের মহাসচিব হিসেবে দুই বছরের দায়িত্ব পালনে আপনার সফলতা ব্যর্থতা কী?
তসলিম : ব্যর্থতার কথা আমি জানি না। আমি বলব, গত দুই বছর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হইনি, সময় লেগেছে। যেমন, সবচেয়ে কঠিন ছিল বিমান ভাড়া কমানো। কিন্তু ব্যর্থ হইনি। দিনের শেষে কিছু দিন আগে আমরা সফল হয়েছি। বিমান ভাড়া কমেছে। সফলতার কথা যদি বলি তাহলে প্রথম যেটা বলব সেটা হলোÑ হাবের মহাসচিব হিসেবে সততার সাথে কাজ করেছি। অসৎ হইনি। কখনো কোনো লোভ করিনি। এজেন্সি ও হজযাত্রীদের স্বার্থে কাজ করেছি। উল্লেখযোগ্য অর্জন যদি সংক্ষেপে বলি তাহলে এজেন্সিপ্রতি হজযাত্রী ১০০ জন করা অন্যতম। দেড় শ’ থেকে ১০০ জন করা আমাদের কাছে ভাবনারও বাইরে ছিল। আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। এতে এজেন্সিগুলো উপকৃত হয়েছে। অনেকে এজেন্সি নির্ধারণ করে হজযাত্রী পাঠানো থেকে বেঁচে গেছে। পুরনো যেসব এজেন্সি ছিল জামানত ১০ লাখ টাকা আছে। এটাকে ২০ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েই গিয়েছিল। অনেক কষ্ট করে সেটাকে ১০ লাখ টাকায় বহাল রাখা হয়েছে। হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোটা অসাধ্য ছিল। সেই বিমান ভাড়া কমেছে। ট্রলি ব্যাগ বাণিজ্য ছিল। এতে হজযাত্রীদের অধিকার ক্ষুণœ হওয়ার বিষয় ছিল। আমি সব বিষয়কে মোকাবেলা করে অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থান নিয়ে প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে এই বাণিজ্য বন্ধ করতে পেরেছি। সরকারি অব্যবহৃত কোটা নিয়েও বাণিজ্য হতো। সেই বাণিজ্য চিরতরে বন্ধ হয়েছে। রিপ্লেসমেন্ট হজযাত্রী প্রতিস্থাপন নিয়েও একটি মহল বাণিজ্য করত। রিপ্লেসমেন্ট টাকা দিয়ে কিনতে হবে। ফাইনালি এই টাকা হজযাত্রীকেই পরিশোধ করতে হতো। এই যে, হজযাত্রীদের ওপর বাড়তি ঝামেলা সেটা চিরতরে বন্ধ করা হয়েছে। রিপ্লেসমেন্ট এখন একটি শতকরা হার ভাগ ধরে দিয়ে দেয়া হয় এবং সেটা অনলাইনে অনুমোদিত হয়ে যায়। এ জন্য কোনো এজেন্সিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বা হজ অফিসে ধরনা দিতে হয় না। হজযাত্রীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স জটিলতার অবসান হয়েছে। হজযাত্রীদের প্রাক নিবন্ধন সার্ভার সারা বছর খোলা রাখা আমাদের আরেক সফলতা। আগে এটা নির্দিষ্ট সময় খুলে দেয়া হতো। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো কে কার আগে করবে। এটা নিয়ে অনেক দুর্নীতি অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ছিল। মিনায় দ্বিতল খাট এ বছর সৌদি সরকার চালু করতে চেয়েছিল। আমরা পরিদর্শন করে দেখেছি আমাদের দেশের বয়স্ক হাজীরা দ্বিতল খাটে উঠতে পারবেন না। তাই আমরা সৌদি কর্তৃপক্ষের সাথে জোরালোভাবে কথা বলে এটা রহিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও হজ অফিসে এজেন্সি মালিকদের হয়রানি বন্ধ করেছি এবং তাদের সম্মান বৃদ্ধি করেছি। তা ছাড়া ২০১৭ সালে যেসব হজ লাইসেন্স অভিযুক্ত হয়েছিল তাদের কাজ বন্ধ ছিল। আমরা সৌদি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে সেই লাইসেন্সগুলো অবমুক্ত করেছি। এ ছাড়া ২০-২-১৮ সালে যেসব হজযাত্রীর রিপ্লেসমেন্ট করা হয়েছে তাদের বিপরীতে যে মুয়াল্লিম ফির টাকা ত্বরিত ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি পূর্বের পাওনা টাকাও পাওয়ার জন্য কাজ করছি। কোনো রকম হয়রানি বাণিজ্য ছাড়া সর্বোচ্চ ১৫% পর্যন্ত রিপ্লেসমেন্ট নিশ্চিত করা হয়েছে। আমাদের তৎপরতায় সৌদি দূতাবাসের সহায়তার সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও এমনকি রাতের বেলায়ও আমাদের জন্য ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। এখন একটি বড় সাফল্য হলো হজযাত্রীদের প্রি-ডিপার্টচার ইমিগ্রেশন। বিষয়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা হলে হজযাত্রীরা তার নিজ দেশেই সৌদি আরবের ইমিগ্রেশনটা হয়ে যাবে। এটা মূলত ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় শুরু হয়। তখন ২০১৭ সালের হজের পরে আমরা ইন্টারন্যাশনাল হজ অ্যান্ড ওমরা কনভেনশনে আমি, কাউন্সিলর হজ মাকসুদর রহমান, তৎকালীন যুগ্মসচিব হাফিজুর রহমানসহ আমরা তিনজন ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমরা শুনলাম মালয়েশিয়ায় হজযাত্রীদের জন্য প্রি-ডিপার্টচার ইমিগ্রেশন হচ্ছে এবং এটা তারা অন্যান্য দেশেও করবে। তখন আমি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দেশে করার জন্য দাবি করে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ থেকে করার কথা বলেছি। এরপর বহুবার আমি সৌদি আরবে গিয়ে এ বিষয়ে বলেছি। সর্বশেষে এই কাজটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আবদুল্লাহ, ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহর ভূমিকার কারণে আমরা বিষয়টি বারবার সামনে আনার কারণে প্রি-ডিপার্টচার ইমিগ্রেশন এখন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এ ছাড়াও হাবকে দেশীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদার আসনে আসীন করা, হাবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য আমি কাজ করতে চেষ্টা করেছি।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে হাবের নেতৃত্বে আবারো এলে আপনি কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেবেন?
তসলিম : আমি হাব সম্মিলিত ফোরামের প্যানেল প্রধান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। ২৫ এপ্রিল নির্বাচন হবে। হজ এজেন্সি মালিকেরা আশা করি আমার দুই বছরের কর্ম তৎপরতাকে মূল্যায়ন করবেন। আমি পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হয়ে হাবের নেতৃত্বে আসতে পারলে আগের মতো সততার সাথে কাজ করব। দক্ষতার সাথে একই গতিতে এজেন্সির জন্য এবং হাজীদের জন্য কাজ করব। এ বছর আমরা এমন একটি টিম নিয়ে এসেছি, যারা সবাই অভিজ্ঞ প্রতিজ্ঞাবান এবং হাব সদস্যদের পরীক্ষিত লোকগুলোকে একত্র করে আমি একটি টিম করেছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হজ এজেন্সিগুলোর ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করা, এজেন্সি মালিকেরা যাতে হাবের সদস্য বলয়ে সর্বত্র সম্মানিত হন সেভাবে আমরা কাজ করব। আমার ইচ্ছা আছে হাবে একটি রিসার্চ সেল তৈরি করব। যেখানে হজ এজেন্সি হজযাত্রী, হাব এবং হজের ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন যুগোপযোগী, হজবান্ধব এজেন্সিবান্ধব কাজ করা যায় এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি একটি সেল গঠন করবে। এ ছাড়াও প্রি-ডিপার্টচার ইমিগ্রেশন এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এটাকে সামনে নিয়ে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করব।
আমরা আমাদের মোনাজ্জেমদের জন্য সৌদি আরবে ছয় মাসের মাল্টিপল ভিসা করার ব্যবস্থা করব। হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের মধ্যে যারা একবারের বেশি গেলে ২১০০ রিয়াল অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হয় এটা বাদ দেয়ার জন্য আমরা সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। এটাও বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা কাজ করব। এভাবে এজেন্সির কল্যাণে যে যে কাজ করার দরকার পড়বে, আমরা কাজ করব। হ


আরো সংবাদ



premium cement