২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হজ ব্যবস্থাপনার অতীত-বর্তমান

-

সাবেক সহসভাপতি, হাব, স্বত্বাধিকারী, গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস
মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় ফরজ ইবাদত হজ। আর্থিক ও শারীরিক সামর্থবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্যই হজ ফরজ। সামর্থ্য থাকার পরও কেউ যদি এ ফরজ ইবাদত সম্পন্ন না করেন, তার ব্যাপারে কুরআন-হাদিসে কঠোর সতর্কবাণী রয়েছে।
একটা সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য হজ পালন অত্যন্ত কঠিন ছিল। আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় পুরো অঞ্চলজুড়ে দুই-একজন ভারত মহাদেশ হয়ে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে হজ পালন করতেন। আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি, লটারির মাধ্যমে হজযাত্রী নির্ধারিত হতেন এবং জাহাজে করে দীর্ঘ সময়ের সফর করে হজ পালন করতেন। তার পর উড়োজাহাজে হজ পালনের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং মানুষ দীর্ঘ দিনের পরিবর্তে কম সময়ের মধ্যে হজ পালনের সুযোগ পান।
ব্যবসার শুরুতে দেখেছি, বিমানের টিকিট ইস্যু করে মোয়াল্লেম সার্টিফিকেট কিনে সৌদি দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিলে ভিসা পাওয়া যেত এবং কোনো রকম অগ্রিম বাড়িভাড়া কিংবা এজেন্সির বাধ্যবাধকতা ছিল না। গ্রুপ লিডাররা বা সৌদি মোয়াল্লেমের প্রতিনিধিরা হাজীদের ভিসা ও টিকিট সংগ্রহ করে সৌদি আরব নিয়ে যেতেন এবং সেখানে নিয়ে বাড়িভাড়া করে হাজীদের ফ্লোরিং বিছানায় রাখতেন। তখন কোনো বাড়িতে খাটের ব্যবস্থা ছিল না।
পরবর্তীতে এজেন্সি নিয়োগ প্রথা চালু হয় এবং হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য রাজকীয় সৌদি সরকার এবং পাশাপাশি বাংলাদেশ উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বাংলাদেশে ধর্ম মন্ত্রণালয় হজ ব্যবস্থাপনার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করছে। আশকোনা স্থায়ী হজক্যাম্প থেকে হজের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। হজের কাজ আগে ম্যানুয়ালি পরিচালিত হতো। তখন হজের প্রস্তুতির ধরনও ছিল কিছুটা ভিন্ন। হজযাত্রীদের জন্য আলাদা পাসপোর্টের আদলে পিলগ্রিম পাস ইস্যু করা হতো। পরে ২০০৯ সাল থেকে তার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক পাসপোর্টে হজ ভিসা স্ট্যাম্পিং করে হজযাত্রীদের যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। বাংলাদেশে হজযাত্রীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়তে থাকে। অন্য দিকে দিন দিন ব্যবস্থাপনায়ও পরিবর্তন আসতে থাকে।
সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের যে কার্যক্রম চলে তাতে দেখা যায়, বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমেই বেশির ভাগ মানুষ হজে যান। শুরুর দিকে এজেন্সি সংখ্যা কম থাকলেও গত এক দশকে তা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাব হজ ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি এজেন্সিগুলোর মধ্যে কাজের একটি সমন্বয় সাধন ও সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কাজ করে। হজের মূল কাজ সৌদি আরবে সম্পাদিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ সরকার হজ এজেন্সিগুলোর খুব কিছু একটা করার থাকে না। একসাথে ২০ লাখেরও বেশি লোকের হজ পালনের এ কাজটি সৌদি সরকার অতি সুচারুভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করে। তা সত্ত্বেও মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনাও যে ঘটেনি তা নয়।
সৌদি সরকারও হজ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করার জন্য অনেক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন হজ ব্যবস্থাপনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উন্নত এবং হজ পালনও অনেক সহজ হয়েছে। সৌদি সরকার এখন পুরোপুরি ই-হজ ব্যবস্থাপনায় হজের কাজ পরিচালনা করছে।
বর্তমান সরকার যথাসময় এসে হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজ করার উদ্যেগ গ্রহণ করে। এটি কার্যকর করতে গিয়ে সবাইকে হিমশিম খেতে হয়। মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থা, এজেন্সিগুলোকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যায় পড়তে হয়। আর এটিই ছিল স্বাভাবিক। একটি নতুন পদ্ধতি চালু করতে গেলে প্রাথমিকভাবে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয় এবং সেগুলো সংশোধন করতে করতে আজকে হজ ব্যবস্থাপনা মোটামুটিভাবে একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আসতে সক্ষম হয়েছে। এ অবস্থার জন্য কোনো গোষ্ঠী একক কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না বা করা ঠিকও নয়। এ সফলতার কৃতিত্ব শুরু থেকে এ পর্যন্ত যারা এ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের সবার। মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন সংস্থা, দফতর ও হাব। যারা দীর্ঘ দিন ধরে এ কঠিন কাজ বাস্তবায়নের সাথে সংস্পৃক্ত ছিলেন, আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
বর্তমান হজ ব্যবস্থাপনায় মন্ত্রণালয়ের কিছু পদক্ষেপ হজযাত্রী ও এজেন্সিগুলোর প্রতি বৈষম্যমূলক প্রতীয়মান হয়। প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীর নিবন্ধন বাতিলের ক্ষেত্রে সরকারের পাঁচ হাজার টাকা কর্তনের বিষয়টি সঠিক নয়। এটি এজেন্সির প্রাপ্য। কারণ এ প্রক্রিয়া সরকারের কোনো রকম সম্পৃক্ততা নেই। এ ছাড়া বিমান ভাড়া, এজেন্সির ন্যায্য পাওনা ফেরত না দেয়াসহ আরো কিছু বিষয় রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সরকার এ বিষয়গুলোতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement