১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হজ ব্যবস্থাপনা এখন অনেক সহজ হয়েছে

-

সাবেক সহসভাপতি, হাব; স্বত্বাধিকারী, চ্যালেঞ্জার ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস
হজব্যবস্থা ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অতিব গুরুত্বপূর্ণ। হজ একটি আবশ্যকীয় ইবাদত। যারা হজ করেন, তাদের অনেক আকাক্সক্ষা ও আবেগ জড়িত থাকে হজ পালনের সাথে। হজ নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করতে হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে দুইভাবে হজের ব্যবস্থাপনার কাজ হচ্ছে। সরকারিভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি অংশের হজ পালনের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা করে থাকে। বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে হজযাত্রীদের বড় অংশ হজে যাচ্ছেন। উভয় ক্ষেত্রেই পুরো বিষয়টি দেখভাল করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। আগে হজযাত্রী তুলনামূলক কম ছিল এবং হজ ব্যবস্থাপনাও এখনকার মতো এত আধুনিক ছিল না। এখন আস্তে আস্তে হজ ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটছে। বিশেষ করে ই-হজ ব্যবস্থাপনার কারণে হজের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ কমে আসছে। এতে কাজের ক্ষেত্রেও সরকার এজেন্সি মালিক, হজযাত্রী সবারই সুবিধা হচ্ছে। এজেন্সিগুলো এখন আইবিএনের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে। ভিসার জন্য কম্পিউটারের মাধ্যমেই সব হয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরবে মোয়াল্লেম সিস্টেমও অনলাইনের মাধ্যমে হচ্ছে। একসময় এ বিষয়গুলো ম্যানুয়ালি হতো। মোয়াল্লেমকে সরাসরি টাকা দিতে হতো। এখন বাড়ি ভাড়ার টাকাও আইবিএনের মাধ্যমে যাচ্ছে।
তবে হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা কিন্তু এখনো রয়ে গেছে। সেটা হচ্ছেÑ হজযাত্রীদের সাথে এজেন্সিগুলোর দূরত্ব। এটা এখন একটা বড় সমস্যা বলা চলে। এর কারণ হচ্ছেÑ হজযাত্রীরা সরাসরি এজেন্সির কাছে না আসার কারণে সেভাবে এজেন্সিগুলোর পক্ষে সেবা দেয়া সম্ভবপর হয়ে উঠে না। কারণ দেখা যাচ্ছে, আমরা এজেন্সি মালিকেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিডিয়ার মাধ্যমে হজযাত্রী পাই। সরাসরি হজযাত্রী খুবই কম পাই। ফলে মিডিয়াগুলো হজযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার সময় যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা বলে, সেভাবে তারা পান না। কারণ মিডিয়া এজেন্সিগুলোকে সেভাবে টাকা দেয় না। যার জন্য মাঝখানে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। হাজী এবং এজেন্সিগুলোর মাঝে বিরাট দূরত্ব মিডিয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীরা করে রেখেছে।
মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে হজযাত্রী পাঠানোর এই সিস্টেম দূর করার চেষ্টাও যে কিছুটা হচ্ছে সেটাও তেমন কার্যকর হচ্ছে না। এ জন্য প্রতি বছর হজ ও ওমরাহ মেলা করা হচ্ছে। কিন্তু এটা তো শুধু ঢাকাতে হচ্ছে। এখানে ঢাকায় যারা আছেন, তারা হয়তো সেটাতে পারেন। কিন্তু সারাদেশের মানুষে তো আর হজ মেলায় যেতে ঢাকায় আসেন না। এটার সুফল পেতে হলে প্রত্যেকটা জেলায় হজ মেলা করতে হবে। জেলায় জেলায় এজেন্টদের কাজ থাকতে হবে। অন্তত একটা অফিস থাকতে হবে। রংপুর থেকে ঢাকায় এসে একজন হাজী আমার অফিসে বুকিং দেবেনÑ এটা তো হয় না। তারা চেনেন না জানেন না। তারা এলাকার লোকজনকে চেনেন। তাই তাদের মাধ্যমে হজে যাওয়ার জন্য বুকিং দেন। দ্বিতীয়ত, যারা মিডিয়ার কাজ করেন, তাদের তো বৈধ লাইসেন্স নেই। সরকার যদি থানার মাধ্যমে তাদের সতর্ক করে পরে পাকড়াও করলে অনেকাংশে এটা কমবে।
একটি জিনিস পরিষ্কার, যত কিছুই হোক; এজেন্টরা কিন্তু ব্যবসায়ী। ব্যবসার মধ্যেও প্রতিযোগিতার বিষয় আছে। এখন যে এজেন্সি ভালো সেবা দিতে পারবে, সেই এজেন্সি যেভাবেই হোক হাজী বেশি পাবে। ফলে সেবার বিষয়টা কিন্তু এখানে এজেন্সির কাছে একেবারে গৌণ নয়। কিন্তু ব্যতিক্রম তো থাকত পারে। কারো অতি ব্যবসায়িক মানসিকতার কারণে মাঝে মধ্যে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য অনেক সময় ঢালাওভাবে এজেন্সিগুলোর বদনাম হয়।
হাব এজেন্সিগুলোর বার্গেনিং বডি। হাব শক্তিশালী হলে এজেন্সিগুলোর জন্য কাজ করতে সহজ হয়। হাজীরাও সুফল পান। যেমনÑ একসময় রিপ্লেসমেন্টের জন্য এজেন্সিগুলোকে টাকা খরচ করতে হতো। একজনের পরিবর্তে আরেকজন করা হতো ম্যানুয়ালি। ২০-৩০ হাজার টাকা না হলে রিপ্লেসমেন্ট হতো না। এখন ১৫ বা ১০ ভাগ যাই পাবে, ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবে। অনলাইনে এক সেকেন্ডের মধ্যে রিপ্লেসমেন্ট হয়ে যাবে। এক এজেন্সি থেকে আরেক এজেন্সিতে হাজী ট্রান্সফারও এক সেকেন্ডের মধ্যে করে নিয়ে যেতে পারে। এগুলো সহজ হওয়ার কারণ হলোÑ হাবের চেষ্টা। হাব যদি দুর্নীতিবাজ হতো এবং আরো আনুষাঙ্গিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতিবাজ হলে এজেন্সির কাজগুলো এত সহজে আমরা করতে পারতাম না।
হজযাত্রী পরিবহনের একটি সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। এটার জন্য এজেন্সি মালিকরা চাচ্ছিলাম অন্তত ১০ হাজার হাজীও যদি থার্ড ক্যারিয়ারে দেয়া হতো, তাহলে সুবিধা হতো। থার্ড ক্যারিয়ারে ভাড়াটা কম পড়ে এবং কম সময়ের প্যাকেজ পাওয়া যায়। প্রতিযোগিতা থাকলে এ বছর যে ১০ হাজার টাকা বিমান ভাড়া কমানো হলো। চাইলে আরো ২০ হাজার টাকা কমাতে পারে। বিমান ভাড়া তো ডাবল নিলেও এত টাকা লাগার কথা না। বিমান ভাড়া পাকিস্তান, ভারত কোথাও এত বেশি নেই। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের চেয়ে আমাদের দেশে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেশি। আমাদের মতে, এক লাখ টাকা হলে ঠিক আছে। তাহলে আমাদের হাজীর সংখ্যাও বাড়বে।
হজ সুন্দর ও ভালো হওয়ার জন্য হজযাত্রীদেরও সচেতনতার দরকার আছে। তারা যদি তিন লাখ টাকা দিয়েই ফাইভ স্টার হোটেলে থাকতে চান, সেটা তো সম্ভব হবে না। কারণ পকেট থেকে টাকা দিয়ে তো কোনো এজেন্সি সেবা দেবে না। হাজীদের তাদের টাকা অনুপাতে সেবা প্রত্যাশা করতে হবে। বড় কথা যেটা আগেই বলেছি, হাজীদের গ্রুপ লিডারদের হাতে টাকা দেয়া বন্ধ করে এজেন্সির কাছে সরাসরি এলে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া সহজ হবে। হ


আরো সংবাদ



premium cement

সকল