২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ওয়াইফাই ইঁদুর

-

আমি একটি ছোট্ট ইঁদুর। বহু দিন হলো কুটুস-কাটুস করে এটা-ওটা কাটি না। কারণ, কাটার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। মানুষেরা খুব দুষ্টু হয়ে গেছে। খুব শক্ত কাঠ দিয়ে তারা আসবাবপত্র বানায়। আর বইপত্রগুলোও সাজিয়ে রাখে গ্লাসের ভেতর। ওগুলো দেখে আমার জিভে জল আসে, দাঁত কুটকুট করে। ইস! কী যে করি। এভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে আমার দাঁতগুলো যে ভোঁতা হয়ে যাবে। যে করেই হোক আমাকে আজ কিছু কাটতেই হবে। আমি এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে লাগলাম। কাটার মতো তেমন কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। এমন সময় অনেক উপরে দেখতে পেলাম সাপের মতো লম্বা ও চিকন একটা কিছু। কিন্তু সাপ বলে মনে হচ্ছে না। বুকের ভেতর দুরুদুরু একটু ভয় থাকলেও আমি লাফিয়ে লাফিয়ে পর্দা বেয়ে, দরজা বেয়ে, জানালার গ্রিল বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। সবশেষে ইয়াবড় একটা লাফ দিয়ে পৌঁছে গেলাম জিনিসটার কাছে। আর দেরি নয়, কুটুস করে কামড় বসিয়ে দিলাম। নাহ, বেশ শক্ত মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি হাল ছাড়লাম না। দাঁত দিয়ে কুটুস-কাটুস করে কাটতেই লাগলাম। কাটতে কাটতে একসময় ছিঁড়ে গেল সাপের মতো লম্বা ও চিকন জিনিসটা। আমি মনে মনে বিজয়ের আনন্দ অনুভব করতে লাগলাম। খুশিতে জোরে একটা লাফ দিলাম। ওহ! আরেকটু হলে নিচে পড়ে যেতাম। বুকটা কেঁপে উঠল। আমি আস্তে আস্তে নিচে নেমে এলাম। নতুন কিছু কাটতে পারার আনন্দে আমার দাঁতগুলো চিকচিক করে উঠল।
পরদিন সারা বাড়ি হইচই পড়ে গেল। আমি ফোকরের ভেতর থেকে উঁকি দিলাম। কেউ একজন বলল, আমি ওয়াইফাই কানেকশন পাচ্ছি না। আরেকজন বলল, আমিও পাচ্ছি না। বাসার পিচ্চি বাবুটাও কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে তার বাবাকে বলল, ‘বাবা বাবা, আমি কার্তুন দেকতে পালছি না। ট্যাব তলে না।’ কেউ একজন পাশের রুম থেকে গলা হাঁকিয়ে বলে উঠল, এত কথা না বলে ওদেরকে ফোন দাও, ঠিক করার জন্য আসতে বলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মোটাসোটা একজন লোক এলো। এসেই বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দিয়ে এটা পরীক্ষা করে ওটা পরীক্ষা করে। কিন্তু কিছুই খুঁজে পায় না। শেষে ভ্রƒ কুঁচকে বলল, উঁচু একটি টুল নিয়ে আসুন। সাথে সাথেই টুল এসে হাজির। লোকটা অনেক কষ্ট করে উপরে উঠল। ঠিক আমি যেখানটাতে লাফিয়ে লাফিয়ে গিয়েছিলাম। ভয় পাচ্ছি, এত মোটাসোটা একটা মানুষ আবার নিচে পড়ে যাবে না তো? লোকটা ওপরে গিয়েই চেঁচিয়ে উঠল, আরে ওয়াইফাইয়ের তার তো ইঁদুর কেটে ফেলেছে, কেমন করে নেট কানেকশন পাবেন। সাপের মতো লম্বা আর চিকন জিনিসটা তাহলে ওয়াইফাইয়ের তার ছিল! মনে হয় ওটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষেরা হো হো হি হি করে হেসে উঠল। একজন বলল, এত উপরে ইঁদুর উঠল কিভাবে, আর ওঠার দরকারই বা কী ছিল? হায় মানুষেরা যদি বুঝত যে, দাঁত দিয়ে এটা-ওটা না কাটলে আমার রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না, তাই কেটেছি। এদের মধ্য থেকে একজন বলল, ওয়াইফাই ইঁদুর। সবাই আরো জোরে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে বলল, বাহ! নামটা তো বেশ মজার দিয়েছ। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। ওরা তো আমাকে খায়নি, তাহলে মজার বলল কিভাবে? আবার আমার একটি নামও দিয়ে দিলো, ওয়াইফাই ইঁদুর। আমি খিক খিক করে হাসতে লাগলাম। পরমুহূর্তেই শিউরে উঠলাম ওদের কথা শুনে। ওরা বলল, ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে। ইঁদুরগুলো মেরে ফেলতে হবে। বলে কী! আমাদের মেরে ফেলবে।
আমি ছুটে গেলাম সব ইঁদুরকে সতর্ক করার জন্য। পালাও পালাও, মানুষেরা তোমাদের মেরে ফেলবে। ইঁদুরেরা কিচকিচ করে উঠলÑ কেন? আমরা কী করেছি? তোমরা কেউ কিছু করোনি। আমি না বুঝে মানুষের একটা জিনিস কেটে ফেলেছি, যার নাম হলো ওয়াইফাই। তাই ওরা আমার নাম দিয়েছে ওয়াইফাই ইঁদুর। হে হে ওয়াইফাই ইঁদুর। ইঁদুরেরা হাসতে লাগল। হেসো না হেসো না, ওরা আমার সাথে সাথে তোমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। এমন সময় দাড়িওয়ালা বড়সড় একটি ইঁদুর এসে বলল, তোমরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছ কেন, কী হয়েছে? আমি ভয়ে ভয়ে বললামÑ ইঁদুর দাদু, আমি না বুঝে ওয়াইফাইয়ের তার কেটে ফেলেছি।
বলো কী! তুমি ওয়াইফাইয়ের তার কেটে ফেলেছ? ইঁদুর দাদু চোখ বড় বড় করলেন, জানো ওটা কী? আমি কেঁদেই ফেললাম, না দাদু।
শোনো, ওটা হলো তথ্যতরঙ্গ, যা দিয়ে মানুষ দেশ-বিদেশের তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। শুধু তাই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ঘরে বসে কেনাকাটা এমনকি পড়াশোনাও করতে পারে। ওটা দিয়ে মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, কম্পিউটার সব কিছু চালানো যায়। ওহ! তাহলে তো আমি অনেক খারাপ কাজ করেছি। আমি হাতজোড় করে সব ইঁদুরের কাছে ক্ষমা চাইলাম। হঠাৎ মানুষের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। এই তো ইঁদুরের গর্ত। পালাও পালাও। আমরা ইঁদুরেরা মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে একটি নিরাপদ জায়গায় চলে গেলাম। তারপর সবাই গোল হয়ে বসে ভাবতে লাগলাম, কী করা যায়। দাড়িওয়ালা বুড়ো ইঁদুর দাদু বললেন, আমরা যদি কোনো কিছু না কাটি তাহলে আমাদের দাঁত ভোঁতা হয়ে যাবে। তখন আমরা না খেয়ে মরে যাবো। কাটতে তো আমাদের হবেই। কিন্তু মানুষের কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কাটা যাবে না। তাহলে উপায়? শেষে আমি অনেক ভেবে ভেবে একটি বুদ্ধি বের করলাম, কোনো কিছু কাটার আগে আমরা বেশ কিছু দিন পর্যবেক্ষণ করব। জিনিসটা মানুষের জন্য আসলেই কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মানুষ অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিসও অযথা ফেলে রাখে। আমার কথা শুনে দাড়িওয়ালা বুড়ো ইঁদুর দাদুসহ অন্য ইঁদুরেরাও হইহই করে উঠল। সবাই স্লোগানের মতো করে বলল, আমাদের ওয়াইফাই ইঁদুর আমাদের ওয়াইফাই ইঁদুর।
সেই থেকে ইঁদুরসমাজে আমার নাম হয়ে গেল ওয়াইফাই ইঁদুর। নামটা বেশ মজার। আমি অনেক খুঁজে খুঁজে বের করেছি, মজা শুধু খাবারের জিনিসকেই বলে না। কোনো কিছু আনন্দদায়ক হলে সেটিকেও মজার বলে হি: হি:।


আরো সংবাদ



premium cement