২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নববর্ষে কাম্য

-

বছরের পর বছর আসে, যায়। মাসের পর মাস। আসে বৈশাখ মাস। আসে পয়লা বৈশাখ। আমাদের নববর্ষ। এ আমাদের জাতীয় জীবনের বিশেষ দিন। অমরা ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ অনুসরণে চৈত্রসংক্রান্তি পালন করি না। ফার্স্ট জানুয়ারির সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না আমাদের পয়লা বৈশাখের। সুদূর অতীতের ইরানি ঐতিহ্যের সাথে কিছু মিল থাকলেও হয়তো থাকতে পারে। কিন্তু সে সম্পর্কে কেউ লিখেছেন কিনা সঠিক জানা নেই। তবে দেখে যা মনে আসে, তা হলোÑ আমাদের গ্রামীণ সভ্যতার সাথে আদ্যোপান্ত সঙ্গতি রয়েছে নববর্ষ উদযাপনের ধারাবাহিকতার অনুষ্ঠানমালায়, বিবিধ পারিবারিক, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক কর্মকাণ্ডে। শুরুর দিনটিতেই বিচিত্র ব্যক্তিগত অনুভূতিতে সিক্ত হয় মানুষের মন। তবে তা ব্যতিক্রমী ঘটনাও ঘটে থাকে এবং তা ঘটেছিল ৪৮ বছর আগে। আমরা সেদিন ‘শরণার্থী বুদ্ধিজীবী’-রূপে পরিচিত এবং পূর্ব ভারতের এক অখ্যাত এলাকায় আশ্রয় সন্ধানী। আমাদের মধ্যে যিনি বিশেষভাবে প্রাজ্ঞ অনেক বেশি অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের অধিকারী তিনি লিখেছেন, ‘প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে আমরা উৎসব আনন্দ করে থাকি। এ বছর আর কিছুই হলো না। পয়লা বৈশাখ যে এসেছিল তাও আমরা বুঝতে পারিনি।’ (সৈয়দ আলী আহসান, ‘যখন সময় এলো’, পৃ.৩৬)।
কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে তা আর হলো না। আমরা একের পর এক নানাবিধ উৎসব-আনন্দে মেতে উঠলাম। আবার একদিকে শুরু হলো বহু কিছু গড়ে তোলার প্রক্রিয়া, অন্য দিকে চলল নিñদ্র ধ্বংসযজ্ঞ। বহির্বিশ্বে কী ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে আমাদের নিয়ে? কেউ বলবেন, খুব চমৎকার। কেননা বহু কিছু নতুন করে নির্মাণের নমুনা আমরা যেমন দেখেছি, তেমনি দুনিয়াজোড়া শান্তি প্রতিষ্ঠায় একক না হোক, একটা বড় দায়িত্ব তো ন্যস্ত হয়েছে আমাদের ওপর। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বড় কর্তারা তো হর-হামেশা এতদবিষয়ক বাণী বিনিময়ে কার্পণ্য করেন না। কিন্তু ঘরে তো লেগে আছে গৃহযুদ্ধ। স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র, ভাইয়ে-বোনে, দুই প্রতিবেশীতে, দলে-দলে এখন তুমুল ঝগড়া, এমনকি মারণাস্ত্র ব্যবহারের অমানুষিক প্রতিযোগিতা। তবে সবার উপরে চলছে বুদ্ধিজীবী আর রাজনীতিবিদদের তর্কযুদ্ধ। দিশাহারা গন্তব্যে এগিয়ে চলেছে স্বদেশ। খুনোখুনি ছাড়াও কাছাকাছি যত অপরাধ মানুষের কল্পনার অনুগত, তা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটছে আমাদের দেশেই। কবি কী সাধে বলেছেন : ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!’ সত্যি! কিন্তু সত্যি কি উত্তরণের কোনো পন্থা নেই?
একটি বিশেষ উপলক্ষ কেন্দ্র করে শান্তির ললিত বাণী কি কেউ শোনাতে পারেন না? নববর্ষ উদযাপনের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে আজ বড় হয়ে উঠেছে মানবিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতেই হবে। পয়লা বৈশাখ পালনের সার্থকতা লাভ হবে তখনই। প্রসঙ্গত একটা দিকে আমাদের দৃষ্টিপাত করতেই হবে। সেটি হলোÑ নবীন নাগরিক তথা শুভ সমাগত নতুন প্রজন্ম আর নারী শক্তির আবির্ভাব। এক দিকে যেমন অসংখ্য কর্মীবাহিনী, অন্য দিকে তেমনি তারুণ্যদীপ্ত উচ্চশিক্ষাসমৃদ্ধ বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়। এদের শুভবুদ্ধির ওপর আমাদের অচিরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হতে হবে। প্রস্তুতিটা এখন থেকে গ্রহণ করলে ক্ষতি কী? বরং এতেই আমাদের সমূহ লাভ। আসন্ন নববর্ষে এটিই হোক আমাদের কাম্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement