১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জ্যোৎস্না রাতে

-

আমি পূর্বাকাশের উদীয়মান লাল টকটকে সূর্যটা দেখিনি। আমি পশ্চিমাকাশের গোধুলি লগ্নের মায়াবী সৌন্দর্য দেখিনি। দেখিনি দখিনা বাতাসে শত শত কাশফুলের নৃত্যাভিনয়। দেখিনি উত্তরে বয়ে চলা নদীর মৃদু স্রোতধারার অপার মহিমা। অন্ধকারে যে প্রদীপ তুমি আামার হাতে দিয়েছ সে প্রদীপের মৃদু আলোয় আমি কেবল দেখেছি তোমার কপালের সেই লাল টিপের সম্মোহন। তোমার দু’ঠোঁটে লেপ্টে থাকা মুলায়েম হাসির ঝিলিক। দুই গালের ওপর ভেসে ওঠা টোলের আহ্বান। তাই তো আমি দেখতে চাইনি নাটোরের বনলতা সেনের চুলের ঝলকানি; কিংবা যাচাই করতে চাইনি শিরি-ফরহাদের ভালোবাসার গভীরতা কতটুকু।
কবিতায় রুবির প্রশংসা করছিল রাসেল। আর রাসেলের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে তা শুনছিল রুবি। কবিতা শেষে রাসেলের চোখে চোখ রেখে মুচকি হাসল রুবি। রাসেলের গাল টেনে বলল, হয়েছে; আর প্রশংসা করতে হবে না।
সত্যি কথা বলতে কী, তোমার মতো একজন মহীয়সী নারী আমার পাশে না থাকলে, তোমার অনুপ্রেরণা না পেলে, আমি এতদূর আসার ধৈর্য ও শক্তি হয়তো পেতামই না।
রাসেলের ঠোঁটে হাতের আঙুল চাপা দিলো রুবি। বলল, এমন করে বলো না। তোমাকে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্যই যে আমার জন্ম।
রাসেল রুবির বিয়ের বয়স এখনো বছর পূর্ণ হয়নি। ছয় মাস হলো এই ছাদওয়ালা একতলা বাসায় উঠেছে তারা। সাধারণত তারা রাতে ছাদে উঠে না। আজই প্রথম জোৎস্না রাতে ছাদে উঠেছে। রাতের আকাশ খুব পরিষ্কার। চার দিকে তারা আর মধ্যমণি চাঁদের আলোয় পৃথিবী যেন অবগাহন করছে। হঠাৎ রুবি লাফিয়ে উঠল।
ওই দেখো, আকাশ থেকে একটি তারা খসে পড়ল যেন।
হুম আকাশের তারা খসে পড়লেও আমাদের মনের আকাশের তারা কিন্তু উদিত হচ্ছে।
আবারো ফাজলামো, রাসেলের পিঠে আলতো চড় দিয়ে রুবি বললÑ জানো, আজ কিন্তু তোমার চাকরির বছর পূর্ণ হয়েছে।
তাই নাকি? একটু চঞ্চল হয়ে উঠে রাসেল। কিন্তু হঠাৎ করেই তার কপালে একটি ভাঁজ পড়ে। মিনমিন করে বলতে থাকে, রুবি, চাকরি পাওয়ার আগেও সময়ের কথা মনে পড়লে আমি এখনো আঁতকে উঠি।
কেন কেন?
কারণ, তখন প্রতিটি নিঃশ^াস ছিল আমার জন্য কঠিন যন্ত্রণার। একদিকে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে দিতে জুতার সোল ক্ষয়। অন্য দিকে চাকরির ব্যাংক ড্রাফট কিনতে কিনতে একেবারে ফতুরে অবস্থা। তখন তোমার ঘাটের পয়সা খরচ করে আমাকে বই কিনে দিয়েছ; এমনকি আমার মাসের খরচটা পর্যন্ত তুমি ম্যানেজ করেছ। আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম প্রায়। সে সময় তোমার অনুপ্রেরণাই ছিল আমার একমাত্র চালিকাশক্তি। একসময় আমার মনে হয়েছিল অভাবের তাড়নায় তোমাকে হারাতে বসেছি বুঝি।
আমার কিন্তু মোটেও তেমন মনে হয়নি। কারণ আমি তোমার চাকরিকে ভালোবাসিনি। আমি ভালোবেসেছিলাম তোমার চেতনা আর আদর্শকে। তুমি সেদিন চাইলে তোমার হাত ধরে আমি চলে আসতাম। কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম, তোমার বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য অন্তত তোমার একটা চাকরি হোক। জানো রুবি, তোমার বাবা সর্বশেষ যেদিন আমাকে তোমাদের বাসায় ডেকে নিয়েছিল, সেদিন কী বলেছিলেন?
কী বলেছিলেন?
তিনি অত্যন্ত নরম স্বরে বলেছিলেনÑ দেখো বাবা, আমার একমাত্র মেয়ে তোমাকে ভালোবেসেছে। তোমাদের ভালোবাসাকে আমি অবহেলা করতে পারি না, বরং শ্রদ্ধাই করি। ভালোবাসা খারাপ নয়। আমরাও তো ভালোবেসে বিয়ে করেছি। কিন্তু বাবা, তোমার পরিবারের অবস্থা তেমন সচ্ছল না। তোমার চাকরি হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিতে পারি না। আমি কেন, কোনো বাবার পক্ষেই এটা সম্ভব নয়। এদিকে মেয়েরও বয়স বাড়ছে, সেই সাথে আমাদের চিন্তাও। আমি তোমাকে ছয় মাস সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে চাকরির কোনো ব্যবস্থা করতে না পারলে আমার মেয়ের আশা তুমি ছেড়ে দিও। জানো, সেদিন রাতে আমার দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। ভয়ানক একটা রাত আমি কাটিয়েছিলাম। সারারাত ছাদের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম পৃথিবী এত নিষ্ঠুর কেন? মা বলেছিলেন, তার এক দূরসম্পর্কের খালাতো ভাই নাকি সরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা। তিনি নাকি আমার চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবেন, বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ চান। একবার ভেবেছিলাম ভিটেমাটি বিক্রি করে কথিত ওই মামাকে ঘুষ দিয়ে একটা চাকরি নিয়ে নিই। কিন্তু পারিনি। বিবেক আমাকে বাধা দিচ্ছিল। এত ভালো রেজাল্ট করেও দুর্নীতির মাধ্যমে আমাকে চাকরি নিতে হবে? বলতে বলতে রাসেলের দু’চোখ পানিতে ভাসতে থাকে।
ওড়না দিয়ে আলতো করে রাসেলের চোখ মুছে রুবি। বলে, আমার একটা কথা রাখবে? এ দেশ ভালোবেসে যেহেতু তোমাকে একটি সম্মানজনক চাকরি দিয়েছে। তোমাকে সম্মানের আসনে আসীন করেছে। সুতরাং সবসময় চেষ্টা করবে নিজে ঘুষ, দুর্নীতি থেকে বিরত থাকতে; অন্যকে ঘুষ, দুর্নীতি থেকে দূরে রাখতে। কখনো অন্যায়ের আশ্রয় নেবে না। কারণ আমরা আমাদের অনাগত শিশুর জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই।
অবশ্যই। রুবি, এ দেশ আমায় ভালোবাসার পরশ। এ দেশ আমার মায়ের মমতা। আমার মাকে যেমন আমি কলঙ্কিত করতে পারি না, তেমনি এ দেশকে আমি কলঙ্কিত করতে পারি না। রাসেল রুবির থুতনিতে ধরে বলল, এই রুবি, এবার একটু হাসো তো। কতক্ষণ তোমার এই চাঁদ রূপ মুখে হাসি দেখি না।
অতঃপর তারা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। তাদের হাসির ঝিলিকে চাঁদের আলো যেন ম্রিয়মান মনে হলো।
প্রিয়জন-১৬৩৮
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইস্ফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ১৪ বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি এসআই গৌতম রায়ের পবিবার

সকল