কিন্নরীর কান্নার রহস্য
- ইব্রাহীম রাসেল
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
অভিভাবকদের জন্য নির্ধারিত ওয়েটিং রুমে বসে এক নারী অভিভাবক গুন গুন করে কাঁদছেন। চার-পাঁচজন নারী অভিভাবক এ দৃশ্য দেখে এগিয়ে গেলেন তার দিকে। সন্তানকে ক্লাসে প্রবেশ করিয়ে সাধারণত অল্প সংখ্যক অভিভাবক এ রুমে অপেক্ষা করেন। বেশির ভাগই যে যার কাজে চলে যান। স্কুল ছুটির পরে আবার নিতে আসেন। আজও তেমনি কয়েকজন নারী অভিভাবক বসে ছিলেন অভিভাবকদের রুমে। আচমকা গুন গুন কান্নার আওয়াজ শুনে প্রথমে সবাই একে অপেরর দিকে তাকায়। যখন বুঝতে পারল কান্নার আওয়াজটা একটু দূরে বসে থাকা এই অভিভাকের দিক থেকে আসছে। তখন সবাই এগিয়ে গেলেন তার দিকে। একজন তার কাঁধে হাত রেখে বললেনÑ কাঁদছেন কেন আপা? কাঁধে হাত রেখে এ কথা জিজ্ঞেস করাতে তিনি এবার হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন। পাশ থেকে আর একজন অভিভাবক বললেনÑ ভাবী এভাবে কাঁদবেন না? শরীর খারাপ করবে তো। আপনার বেবিটা স্কুলে আছে। ও যদি দেখে ফেলে ওর মনটাও তো খারাপ হবে। এবার উল্টো দিকে বসে থাকা আর এক অভিভাবক মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেনÑ ভাবী পৃথিবীতে মানুষের অনেক রকম কষ্টই থাকে। কান্না করে কী হবে বলুন। কান্না কী কষ্টের সমাধান?
সবার কথা শোনার পর তার কান্নার আওয়াজ আরো বেড়ে যায়। এবার সুরে সুরে কাঁদছেন আর বলছেনÑ গতকাল রাতেও আমি নিজ হাতে ওকে খাওয়ালাম। খাওয়ার পর একবার বমি করল। তারপর আর কোনো সাড়াশব্দ নেই। ও যে এভাবে চলে যাবে, আমি ভাবতেও পারিনি।
আবার অঝোরে কান্না। এবার অন্য এক অভিভাবক কাছে এসে সান্ত¡নার সুরে বললেনÑ দেখুন ভাবী, সবাই তো আর চিরদিন বেঁচে থাকে না। এ দুনিয়া ছেড়ে সবারই তো একদিন চলে যেতে হয়। কান্না করলে কি আর ফিরে পাওয়া যাবে? তা ছাড়া আপনাকেও তো শক্ত হতে হবে। এভাবে ভেঙে পড়লে হবে? আপনার একটা বেবি আছে। ওর দেখভাল করতে হবে।
কোনো অবস্থাতেই কান্না থামছে না তার। যে যত কিছুই বোঝানোর চেষ্টা করছে তিনি কেঁদেই যাচ্ছেন। কাঁদছেন আর সুরে সুরে বলছেনÑ আমি যতক্ষণ বাসায় থাকতাম আমার পিছু ছাড়ত না। সারাক্ষণ গা ঘেঁষে বসে থাকত। এত লক্ষ্মী ছিল। রাতে ঘুমানোর সময় আমার কোলের মধ্যে ঢুকে ঘুমাত। কখনো বিছানায় হিসু করত না। কোনো কথার অবাধ্য হতো না। যা বলতাম তাই শুনত। এত ভালো ছিলরে! এভাবে যে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি।
তার কান্না আর আহাজারি শুনে সবাই ধরে নিয়েছে হয়তো আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কারো বাচ্চা এনে লালন-পালন করত। কোনো কারণে মৃত্যু হওয়ায় ভীষণ শক খেয়েছে। কেউ কানাঘুষা করতে লাগলÑ ওনার কি আর কোনো সন্তান ছিল? সন্তানের কথা শোনামাত্রই তিনি আরো জোরে কাঁদতে লাগলেন আর বললেনÑ একমাস হলো তিনটি বাচ্চা হয়েছে। এমন ফুটফুটে তিনটি বাচ্চা! দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। বাচ্চাগুলোও এতিম হয়ে গেলরে...।
এবার পাশে থাকা অভিভাবকেরা পরস্পরে মধ্যে বলাবলি করতে লাগলÑ তাহলে কি তিন সন্তান রেখে কোনো আত্মীয় মারা গেছেন? ইস কী হবে এখন ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর! এক অভিভাবক সবার মধ্য থেকে উঠে গিয়ে তার গায়ে হাত বুলাচ্ছেন আর সান্ত¡না দিচ্ছেনÑ দেখুন ভাবী, আপনি এভাবে ভেঙে পড়লে ছোট বাচ্চাগুলোকে কে দেখবে বলেন? ওদের দায়িত্ব তো এখন আপনার ওপর। আপনাকে শক্ত হতে হবে। প্লিজ ভাবী এভাবে ভেঙে পড়বেন না। কান্নার ঘটনাটি ইতোমধ্যে পুরো স্কুলে ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুলের একজন শিক্ষক গিয়ে এবার তাকে প্রথমে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করলেন। তারপর জানতে চাইলেন কান্নার কারণ। শিক্ষকের কথায় তিনি কিছুটা কান্না থামিয়ে বলতে লাগলেনÑ স্যার, আমার নাম কিন্নরী। যাকে আমি স্কুলে নিয়ে আসি, ও আমার সন্তান নয়।
আমার বয়স তো চল্লিশ পার হয়ে গেল। এখনো বিয়ে হয়নি। আমি জানি, আমার আর কোনো দিন বিয়েও হবে না। তাই নিজের সন্তানের মতো করে আমি একটি বিড়াল পুষতাম। অফিস থেকে ফিরে ওকে নিয়েই সারাক্ষণ থাকতাম। ওর কথাই এতক্ষণ বলছিলাম। কিছুদিন আগে ওর তিনটা বাচ্চাও হয়েছে। গতকাল রাতে বিড়ালটা মারা গেল। ওর জন্য কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
কিন্নরীর কথা শুনে স্যার ও উপস্থিত অভিভাবকেরা অবাক হয়ে পরস্পরের দিকে তাকাচ্ছিলেন। সবাই একস্বরে বললেনÑ তার মানে ওটা বিড়াল ছিল!
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা