২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রিয় স্যার

-

মা-বাবার পরেই আমাদের স্নেহ-মমতা আর ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখেন আমাদের শিক্ষকেরা। কখনো একটু শাসন, কখনো একটু সমর্থন, কখনো একটু একটু করে সাহস জুগিয়ে আমাদের হৃদয় সিংহাসন দখল করে নেন তারা। হ্যাঁ, আমার প্রিয় স্যার ‘বাংলার স্যার’র কথাই বলছি। নামÑ নজরুল ইসলাম। স্যারের নাম জেনেছি আমরা এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর! এর আগ পর্যন্ত বাংলার স্যার হিসেবেই চিনে আসছি। অতুলনীয় পাঠদান কিংবা তাক লাগানো প্রকাশভঙ্গির জন্যই স্যার আমার কাছে প্রিয় নন, মনের মাধুরী মিশিয়ে স্বপ্নজয়ের অবিশ্বাস্য সাহস দান; এত অকর্মঠদের ওপর এত অটল ভরসা রাখা, আর আপন করে নেয়ার মতো আকাশচুম্বী মানসিকতা লালনই স্যারকে প্রিয় করে তুলেছে সময়ে-সময়ে। আমি যখন স্ট্যান্ডার্ড থ্রি-ফোরে পড়ি তখন থেকেই তাকে চিনি। ইছামতি কামিল মাদরাসায় প্রায় বিশ বছর ধরে বাংলা পড়াচ্ছেন। নীরবে-নিভৃতে ছাত্রদের মনে স্বপ্নজয়ের মন্ত্রণা শিখিয়ে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। প্রত্যকটা ছাত্রের কাছেই বাংলার স্যার মানে একটু বাড়তি ভালোলাগা। ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের আগ পর্যন্ত আমরা স্যারের ক্লাস পাইনি। বাংলা পিরিয়ডের জন্য আমরা ওঁৎ পেতে বসে থাকতাম। স্যার ক্যাম্পাসের হোস্টেলেই থাকেন বলে বাবার সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। মজার ব্যাপার হলোÑ স্যার আমার মা-বাবার বিয়েতেও উপস্থিত ছিলেন। অনেক সময় ক্লাসে এ ঘটনা বলতেন।
আমার পড়ালেখার অবস্থান সম্পর্কে বাংলার স্যারের চেয়ে এত বেশি খোঁজখবর আর কেউ নেননি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রত্যেকটা ছাত্রের ব্যাপারে তিনি একইভাবে আন্তরিক। জেএসসি-এসএসসি প্রত্যেকটি পরীক্ষায় আমরা না বলাতেই তিনি নিজ থেকে রুটিন তৈরি করে দিতেন। স্বপ্ন দেখা, আর স্বপ্ন জয়ের ক্ষুধা আমাদের হৃদয়ে চাষ করে দিয়েছেন তিনি। স্যার যখন ক্লাস নিতেন, আমরা সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ নয়, মন-মগজ ও আকর্ষণ করার এক অভিনব ক্ষমতা ছিল তার। স্যারের আরেকটি গুণ হচ্ছে, তিনি কোনো সময় রাগ করতেন না। ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নিতেন সব ভুল। ক্যাম্পাসে দীর্ঘ সাত বছরের মাঝে স্যারকে কোনো দিন রাগ করতে দেখিনি। স্যার আমাদের ওপর এত ভরসা রাখতেন যা বর্ণনাতীত। আমি ফাইভ, এইট, টেন ও ইন্টারমিডিয়েট কোনোটিতেই জিপিএ ৫ পেতে পারিনি, যদিও স্বপ্ন ছিল মা-বাবার। স্যার প্রত্যেকটি পরীক্ষার আগে আমার ওপর এত ভরসা রাখতেন আর রেজাল্ট বের হওয়ার পর এত অকুণ্ঠ সমর্থন করতেন, যা আমাকে আজো ভাবায়।
স্যার এখনো আমাকে ফোন দেন, কেমন আছি জানতে চান। পড়ালেখার খোঁজখবর নেন। স্যারের ভালোবাসার কোনো উপমা নেই। আমার জীবনে সেরা স্যার, আমার ‘বাংলার স্যার’ ।


আরো সংবাদ



premium cement