১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি রাজধানীর বুকে সবুজ ক্যাম্পাস

-

রাজধানী ঢাকার বাড্ডায় নতুন বাজার সংলগ্ন মাদানী এভিনিউয়ে ২৫ বিঘা জমির ওপর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে। চারপাশে সবুজ খোলা জায়গা। দখিনা বাতাস অনবরত প্রবহমান। মূল সড়ক থেকে নেমে গেছে প্রশস্ত রাস্তা। একটু দূরে আট লাখ বর্গফুটের ১৩ তলা সুদৃশ্য ভবন। মুগ্ধকর প্রকৃতির সাথে সখ্য গড়ে যেন এর অংশ হয়ে গেছে ভবনটি। ভবনের সামনেই আছে ২০ বিঘার বিশাল মাঠ। এ মাঠে রয়েছে একসাথে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার সুবিধা। শিক্ষার্থীদের খেলার উৎসব চলে পড়ন্ত বিকেলে। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস। মাঠের পাশেই রয়েছে লেক।

মাল্টিমিডিয়া ও স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ এবং অন্যান্য সুবিধা
এখানে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের মাল্টিমিডিয়া ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১০০টি স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ। পড়ালেখার ফাঁকে গ্রুপ স্টাডি ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনার জন্য নানা রকম বইসমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও স্টাডিরুম। সপ্তম তলায় আছে প্রার্থনাগার, শারীরিক অনুশীলনের জন্য বেজমেন্টে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ জিমনেসিয়াম ও খেলার রুম। বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য আছে ৫০০ আসনবিশিষ্ট অডিটোরিয়াম। ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, আইসি তৈরির জন্য রয়েছে ভিএলএসআই (ভেরি লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেশন) ল্যাব, কম্পিউটার শিক্ষার্থীদের জন্য আছে অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্ট মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সিস্টেমস বা এইমস ল্যাব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি গবেষণার জন্য আছে সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ বা জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্র। এ ছাড়াও আছে সার্কিট ল্যাব, ফিজিক্যাল ল্যাব, কেমিস্ট্রি ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, মেশিন অ্যান্ড পাওয়ার সিস্টেম ল্যাব, কমিউনিকেশন ল্যাব, ডিজিটাল ডিজাইন ল্যাব, মাইক্রোপ্রসেসর ল্যাব ও ইলেকট্রনিকস ল্যাবসহ ৩০টি ল্যাব।

আলোর পথে যাত্রা শুরু
২০০৩ সালের অক্টোবরে মাত্র দু’টি অনুষদ আর ৭৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। বর্তমানে এখানে ছয় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। গত ১৫ বছরে ছয় হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন বিষয়ে পাস করে সাফল্য দেখাচ্ছেন কর্মজীবনে। সব কিছুর পেছনে কর্তৃপক্ষের রয়েছে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর চেষ্টা। বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানোর জন্য বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইডি ডিগ্রিধারী ৪৫ জন নিয়মিত শিক্ষকসহ আছেন দুই শতাধিক ফ্যাকাল্টি।

বিভাগসমূহ
বর্তমানে ব্যবসায় প্রশাসন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংসহ মোট ছয়টি বিষয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম রয়েছে। স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে আছে এমবিএ, ইভিনিং এমবিএ, অর্থনীতিতে মাস্টার্স, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, মাস্টার ইন ইন্টারন্যাশনাল এইচআরএম ও কম্পিউটার সায়েন্সসহ ছয়টি বিষয়ে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির সুবিধা। এ ছাড়া ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক রিসার্চ (আইবিইআর) পিজিডি এইচআরএমসহ বিভিন্ন ধরনের ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করে থাকে।
বিশ^বিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব আইটি প্রফেশনালস বা সিডিআইপির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে গ্রাফিকস ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, গেম ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ডিজিটাল মার্কেটিং ও প্রফেশনাল জাভা প্রশিক্ষণসহ ১০টি কোর্স করার সুযোগ।

ইউআইইউ গ্রন্থাগার
শুরু থেকেই ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রন্থাগার সেবা দেয়ার ওপর জোর দিয়ে আসছে। সপ্তাহে পাঁচ দিনÑ শনি থেকে বুধ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং ছাত্রছাত্রীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে পরীক্ষার সময় সপ্তাহে সাত দিনই গ্রন্থাগার সেবা দেয়া হয়। গ্রন্থাগারের প্রত্যেক সদস্য রেফারেন্স বই এবং সংরক্ষিত উপকরণ ছাড়া দু’টি বই আট দিনের জন্য ধার নিতে পারে এবং সেই সাথে দুই দিনের জন্য নিতে পারে একটি সিডি বা ডিভিডি। এ ছাড়া, ব্যবহারকারীরা গ্রন্থাগারের ভেতরে রেফারেন্স বই ও সংরক্ষিত উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন।
ইউআইইউ গ্রন্থাগার গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থিত। এর আয়তন ১৬ হাজার ৫৫০ বর্গফুট। একসাথে ৪০০ জন শিক্ষার্থী বসে পড়াশোনা করতে পারেন। দৈনিক সংবাদপত্র, রিজার্ভ ও রেফারেন্স বই পড়ার জন্য রয়েছে আলাদা কর্নার। গ্রন্থাগারে ছয়টি দৈনিক পত্রিকা (যার মধ্যে তিনটি বাংলা ও তিনটি ইংরেজি) রাখা হয়। খুব সহজে উপকরণগুলোতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে ব্যবহারকারীদের জন্য ডিউই ডেসিম্যাল ক্লাসিফিকেশন অনুসরণ করে কল নম্বর অনুযায়ী বই সাজানো হয়েছে। বর্তমানে ১৪ হাজার ৭১৪টি বই এবং জার্নাল-ম্যাগাজিন আছে ছয় হাজার ৫৩১টি। এ ছাড়া গ্রন্থাগারে ব্যবহারকারীদের সহায়ক সেবা দেয়ার জন্য রয়েছে গবেষণা প্রতিবেদন, বিশ্বকোষ, অভিধান, হ্যান্ডবুক, ম্যানুয়েল ও এনজিও প্রকাশনা। গ্রন্থাগারে রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, কম্পিউটার বিজ্ঞান, অর্থনীতি, পরিবেশগত গবেষণা, বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মনোবিজ্ঞান, ধর্ম, সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বই।

গ্রন্থাগার ও ই-রিসোর্স
গ্রন্থাগারে রয়েছে ইলেকট্রনিক সম্পদের (ই-রিসোর্স) বিশাল সম্ভার। ইউআইইউয়ের সব শিক্ষার্থী, অনুষদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এতে প্রবেশ করতে পারেন। ব্যবহারকারীরা ই-বুক, ই-জার্নাল ও ই-ম্যাগাজিন পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারেন। বর্তমানে গ্রন্থাগারে সাড়ে তিন হাজার ই-বুক ও ১১ লাখ ৭৫ হাজার ই-জার্নাল গ্রাহক। ব্যবহারকারী নাম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে যেকোনো স্থান থেকে রিমোট অ্যাক্সেস ও ডিসকভারি সেবার মাধ্যমে ই-রিসোর্সে প্রবেশ করতে পারেন।

গ্রন্থাগার ও স্বয়ংক্রিয় তথ্যসেবা
গ্রন্থাগ্রারে ব্যবহারকারীদের জন্য রয়েছে ওয়াইফাই সংযোগসহ ১৫টি কম্পিউটার। ইউআইইউ গ্রন্থাগার তার ব্যবহারকারীদের স্বয়ংক্রিয় তথ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য লাইব্রেরি সফটওয়্যার ‘কোহা’ চালু করেছে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা গ্রন্থাগারে না এসেও যেকোনো বইয়ের শিরোনাম, লেখক, কল নম্বর, কি-ওয়ার্ড, প্রকাশক ও প্রকাশকাল অনুযায়ী খুঁজতে পারেন। গ্রন্থাগারে শিক্ষকদের জন্য রয়েছে পৃথক বসার ব্যবস্থা। যেখানে একসাথে ১৬ জন শিক্ষক বসে পড়াশোনা এবং তাদের গবেষণার কাজ করতে পারেন।

গ্রন্থাগারে বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কর্নার
ইউআইইউ গ্রন্থাগারে বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ নামে একটি কর্নার আছে, যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য সব বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র, মুক্তিযুদ্ধ কোষ, মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান, মুক্তিযুদ্ধপঞ্জি, বীরাঙ্গনা সমগ্র, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, ২৬৬ দিনে স্বাধীনতা, শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম, সংবাদপত্রে ভাষা আন্দোলন ১৯৪৭-১৯৫৬ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারি রয়েছে, যা ব্যবহারকারীরা গ্রন্থাগারে বসে দেখতে পারেন অথবা বাড়িতে ইস্যু করে নিয়ে যেতে পারেন।

জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্র ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ইউআইইউয়ের সাফল্য
পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে কাজ করছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্র। নবায়নযোগ্য ও টেকসই জ্বালানি গবেষণার জন্য ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। এর উদ্দেশ্য ছিলÑ জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, নীতিমালা গঠন এবং এর যথাযোগ্য ব্যবহারের উপায় নিয়ে গবেষণা করা। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জলবায়ু মোকাবেলায় ৫০টি প্রকল্প পরিচালনা করা হয়েছে গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ সোলার হোম সিস্টেমের বাতি, চার্জার, এসি-ডিসি কনভার্টার ও ব্যাটারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় ল্যাবে। এ ছাড়া, দেড় হাজার প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে সোলার প্রযুক্তির ওপর।
জ্বালানি খাত নিয়ে বিভিন্ন দেশের ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কাজ করছে ইউআইইউয়ের জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্র। পেয়েছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কার। বিশ্বব্যাংক, জিআইজেড ও সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ দেশী-বিদেশী অনুদানে বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকল্প চলছে এই কেন্দ্রে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরীর হাত ধরেই এর যাত্রা। বর্তমানে তিনি এর পরিচালক। ২০০৭ সালে তিনি যোগ দেন ইউআইইউতে। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চালু হয় সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ। বর্তমানে সরকারের নবায়নযোগ্য শক্তি নীতিমালা প্রণয়নেও যুক্ত রয়েছেন শাহরিয়ার।

উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে
২০১৭ সালে তার হাত ধরেই সূর্যের আলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যুক্ত হলো বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে পিডিবি প্রাঙ্গণে আট একর জায়গার ওপর বিশাল এক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে ওঠে। সূর্যের আলো যখন থাকবে, তখন এখানে উৎপাদিত হয় ৩.২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যা সরাসরি যোগ হয় জাতীয় গ্রিডে। এনগ্রিন পাওয়ার প্লান্টের পরামর্শক হিসেবে এই বিশাল সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডিজাইন করেছেন শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী। শাহরিয়ার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাঢ়ীদহে মিনি গ্রিড সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও সরবরাহ ব্যবস্থারও নকশা করেন। এ ছাড়া, কাপ্তাইয়ে নির্মিতব্য সোলার প্যানেলের নকশাসহ বাংলাদেশের প্রায় বেশির ভাগ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা করেছেন তিনি। দেশের বাইরে নাইজেরিয়া, কেনিয়াতে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা করেন তিনি। ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তার ‘পিয়ার টু পিয়ার স্মার্ট ভিলেজ গ্রিড’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্প মরক্কোতে জাতিসঙ্ঘের ২২তম জলবায়ু সম্মেলনে ‘ইউএন মোমেন্টাম ফর চেঞ্জ’ অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৬ সালের ২২-২৪ জুন জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টার সোলার অ্যাওয়ার্ড ২০১৬’ জিতেছে। ২০১৬ সালের ৭-১০ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৬ উপলক্ষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনজি সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত আন্তঃবিশ্ববদ্যিালয় প্রতিযোগিতায় ইউআইইউয়ের ‘অটোমেটেড ইরিগেশন সিস্টেম ইয়ুথ স্মার্ট মনিটরিং’ প্রকল্প ‘অদম্য বাংলাদেশ-২০১৬’ পুরস্কার অর্জন করে। ওই প্রকল্পের দলনেতা ও প্রধান পর্যবেক্ষক ছিলেন শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী।
যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছানো অসম্ভব, সেখানে এ সেবা দিতে উদ্ভাবনী নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে ইউআইইউয়ের জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্র। ২০১৭ সালে জাতীয় বিদ্যুৎ সপ্তাহে ইন্টার ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন কম্পিটিশনে রানারআপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী। ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিদ্যুৎ সপ্তাহ-২০১৮ উপলক্ষে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ইনোভেশন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘ডিমান্ড রেসপন্স এনাবলড স্মার্ট গ্রিড’ প্রকল্প। এই উদ্ভাবনী প্রকল্প স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের লোড ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ চুরির বার্তা সেবাদাতার কাছে পাঠাতে পারবে। এ ছাড়া মোবাইলের মাধ্যমে গ্রাহকের বৈদ্যুতিক সেবার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যাবে। ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর ওই প্রকল্প গবেষণার জন্য প্রথমবারের মতো প্রায় চার কোটি টাকার গবেষণা অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কেন্দ্র।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর শিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষকতায় অবদানের জন্য গত বছরের ৫ ও ৬ জুলাই মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত সপ্তম ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেসে শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী অর্জন করেন ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেসের সম্মানজনক ‘এডুকেশনাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’।

ভিএলএসআই প্রশিক্ষণ একাডেমি
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চাকরির বাজারে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে চালু করেছে ভিএলএসআই কোর্স। এ জন্য ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছে ক্যাডেন্স টুল, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এনালগ ও ডিজিটাল উভয় ধরনের আইসি বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট তৈরি করতে পারে।

এইমস ল্যাব ও এর সাফল্য
ইউআইইউতে ২০১৪ সালে স্থাপন করা হয় অ্যাডভান্সড ইন্টেলিজেন্ট মাল্টিডিসিপ্লিনারি সিস্টেমস ল্যাব বা এইমস ল্যাব। এর দ্বারা কম্পিউটার সায়েন্স, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ করা হয়। এ ছাড়া এখানে মেশিন লার্নিং, ডাটা মাইনিং ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োইনফরমেটিক্স নিয়েও গবেষণা করা হয়। এ ছাড়া আইটি খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে যৌথভাবে কাজ করে এইমস ল্যাব। এই ল্যাবের মূল লক্ষ্য প্রযুক্তির সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারের মাধ্যমে জীবন মান উন্নত করা। জাতীয় পর্যায়ে তিনটি আইসিটি অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল সিডস্টার আয়োজিত বিশে^র সেরা ১২টি উদ্ভাবনীর মধ্যে একটি উদ্ভাবনীর জন্য পুরস্কার লাভ করে এইমস ল্যাব। বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো হিড ফাউন্ডেশন উদ্ভাবনী সামাজিক উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্লাউডভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা স্টার্টআপ সিএমইডি হেলথ। ১৫ থেকে ১৮ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিবিএস ফাউন্ডেশন। এশিয়ার ৪২টি দেশ থেকে ৮৭০টি সামাজিক উদ্যোগ প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। ইউনাইডেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এইমস ল্যাবের গবেষণার ফসল সিএমইডি স্বয়ংক্রিয় ডিভাইসের মাধ্যমে শরীরের রক্তচাপ, ব্লাড সুগার এবং বিএমআই নিরূপণ করতে পারে।

সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ও ক্লাব এবং ফোরাম
শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ও বাজার উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে ইউআইইউতে ১২টি ক্লাব ও ১৬টি ফোরাম রয়েছে। এসব ক্লাব ও ফোরাম বছরজুড়েই জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। ইউআইইউয়ের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল হ্যাকাথন, বিতর্ক উৎসব, রোবোটিকস প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন আয়োজনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বর্তমানে এখান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা সরকারি-বেসকারি ব্যাংক, বীমাসহ দেশ-বিদেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

শিক্ষার্থীদের সাফল্য
২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল ব্যবসায়িক সমস্যার সমাধানবিষয়ক প্রতিযোগিতা এইচএসবিসি-আইবিএ বিজনেস কেইস কম্পিটিশনে চ্যাম্পিয়ন হয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দল টিম আরকেইন। এ কম্পিটিশনে দেশের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২টি দল প্রতিযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে। ২০১৪ সালে হ্যাকাথন প্রতিযোগিতায় দুই লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার লাভ করে ইউআইইউয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। ২০১৪ সালে পলিসি ডায়ালগ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় ইউআইইউয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। ২০১৪ সালে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড আয়োজিত ‘ফিউচার লিডারশিপ প্রোগ্রাম’-এর দ্বিতীয় সেশনে ইউআইইউয়ের নুজহাত শাহজাদি প্রথম স্থান অর্জন করেন।

শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি
ইউআইইউতে প্রতি বছর তিনবার অর্থাৎ স্প্রিং, ফল ও সামার সেমিস্টারে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পৃথকভাবে ন্যূনতম ২.৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি বৃত্তি দিচ্ছে ইউআইইউ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে ২৫ শতাংশ এবং গোল্ডেন ৫ প্রাপ্তদের জন্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি ছাড় সুবিধা। প্রতি সেমিস্টারের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী বৃত্তি পান। এর মধ্যে ৪ শতাংশ শতভাগ, ৬ শতাংশ ৫০ ভাগ, আর বাকি ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী পান ২৫ ভাগ বৃত্তি। ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পান মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বৃত্তি।

ক্যান্টিন
মূল্যতালিকাসহ শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে খান কিচেন, ইম্পেরিয়াল ও অলিম্পিয়া প্যালেস নামে তিনটি ক্যান্টিন বা ক্যাফেটেরিয়া।

পরিবহন সুবিধা
শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ধানমন্ডি, মোহাম্পদপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ লোকেশন থেকে ১২টি বিআরটিসি দ্বিতল বাস রয়েছে। এ ছাড়া বিশ^বিদ্যালয় থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ফ্রি দু’টি শাটল বাস সার্ভিস সুবিধা।

হোস্টেল সুবিধা
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে চালু হচ্ছে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল সুবিধা। বিশ^বিদ্যালয়ের পাশেই প্রাথমিকভাবে ৪০০ শিক্ষার্থীর জন্য থাকছে এ সুবিধা। এ ছাড়া ইউনাইটেড গ্রুপের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হবে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য হোস্টেল।


আরো সংবাদ



premium cement