ফুটবল এলিয়েন
- মোনোয়ার হোসেন
- ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
গ্রামের পাশে ছোট মাঠ। মাঠে পড়ে শীতের সোনালি নরম রোদ। বিকেলে মাঠে জড়ো হয় গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। তারা মাঠে হইচই করে। খেলাধুলা করে। ছেলেরা খেলে ক্রিকেট, ফুটবল। মেয়েরা খেলে গোল্লাছুট, কানামাছি আর দড়ি খেলা। অপু আর তপু দুই ভাই। তারা প্রতিদিন সবার আগে মাঠে যায়। আজও সবার আগে মাঠে গেল। মাঠে ঢুকেই চিৎকার করে উঠল অপু। তপু রে!
তপু বলল, কী হলো?
দ্যাখ মাঠের মাঝখানে কী সুন্দর একটা ফুটবল পড়ে আছে।
তপু দেখে অবাক হলো। সত্যিই তো মাঠের মাঝে লাল রঙের সুন্দর একটা ফুটবল পড়ে আছে। মাঠে এত সুন্দর ফুটবল এলো কেমন করে? ভাবল সে। তারপর অপুকে বলল, চল তো অপু, কাছে গিয়ে দেখে আসি।
চল।
দু’জন ফুটবলের কাছে গেল। একেবারে নতুন ফুটবল। মনে হয় ফুটবলের গায়ে এখনো কেউ লাথি মারেনি। প্রথম লাথি মারার লোভটা সামলাতে পারল না অপু। ফুটবলের গায়ে সাঁই করে মেরে দিলো একটা লাথি।
সাথে সাথে কুঁকড়ে উঠল ফুটবল। বলল, উহুঁ..! আমাকে লাথি মারছ কেন? লাগছে তো !
অবাক হলো অপু।
অবাক হলো তপু।
ফুটবল কথা বলছে!
প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষণে ভয় পেয়ে গেল তারা। চিৎকার করে উঠল। ভূ...ভূ...ত ! ভূ...ভূ...ত !
আবার কথা বলল ফুটবলটা। আমি ভূত নই। এলিয়েন। আমি ভিন গ্রহের এলিয়েন।
চমকালো দু’জনই। একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাল। মুখ হা করে। তোতলাতে তোতলাতে অপু বলল, এলিয়েন!
হুম, এলিয়েন। এসেছি ভিন গ্রহ থেকে। তোমাদের পৃথিবীটাকে ঘুরে দেখতে। এসেই পড়েছি শৈত্যপ্রবাহে। খারাপ আবহাওয়া আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে নিজ গ্রহে ফিরে যেতে পারছি না। এদিকে শরীরের চার্জও শেষ হয়ে গেল। হয়ে গেলাম ফুটবল। আমাদের শরীরের চার্জ ফুরিয়ে গেলে আমরা ফুটবল হয়ে যাই। এটাই আমাদের গ্রহের নিয়ম। ফুটবল হয়ে দুপ করে পড়ে গেলাম তোমাদের এই মাঠে।
ফুটবলের কথা শুনে এতক্ষণে ভয় কেটে গেছে অপু আর তপুর। অপু গিয়ে ফুটবলটা কোলে তুলে নিলো। বুকে জড়িয়ে ধরে ফুঁ দিয়ে শরীরের লেগে থাকা বালুগুলো ঝেড়ে দিতে লাগল। আর আলতো করে গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগল।
অপুর হাতের ছোঁয়া পেয়ে ফুটবলটা আবার কঁকিয়ে উঠল। বলল, উহুঁ !
অপু বুঝতে পারল লাথিটা ভালোই লেগেছে এলিয়েনের গায়ে। বলল, সরি এলিয়েন।
তারা ফুটবল এলিয়েনকে নিয়ে বাসায় গেল। মোবাইল চার্জার দিয়ে চার্জ দিলো। এলিয়েন তার শক্তি ফিরে পেল। কিন্তু উড়ে যাওয়ার সাহস পেল না। শৈত্যপ্রবাহ বাড়ছে। সাথে সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। চারদিক ঘন কুয়াশায় ঢাকা। অপু বলল, শৈত্যপ্রবাহ না ছাড়া পর্যন্ত তুমি থাকো আমাদের বাসায়। আমরা অনেক গল্প করব। তোমাদের গ্রহের কথা শুনব।
তপু বলল, অপু ঠিক বলেছে এলিয়েন। চলো আমরা গল্প করি।
এলিয়েন বলল, হুমম, চলো।
তপু বলল, তুমি বাংলায় কথা বলতে পারো কীভাবে ? তোমাদের গ্রহটা কি বাংলাভাষী?
এলিয়েন বলল, না। আমরা যখন যে দেশের সীমানার ওপর দিয়ে যাই, তখন ওই দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস আপনাআপনি আমাদের মেমোরিতে ইনস্টল হয়ে যায়। বলতে পারো এটা আল্লাহ প্রদত্ত। আমাদের জন্য একটা গড গিফট।
বাহ! বলল অপু।
এলিয়েন বলল, তোমরা জানো?
তপু বলল, কী?
আমি যখন তোমাদের দেশের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলাম, তখন তোমাদের দেশের বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি আর ইতিহাস আমার মেমোরিতে ইনস্টল হয়ে গেল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম এই ভাষা মেমোরিতে ইনস্টল হওয়ার সাথে সাথে হৃদয়ে কেমন যেন প্রশান্তি লাগতে শুরু করল। ভালোবাসা জন্মাল। হৃদয়ে আবেগ সৃষ্টি হলো। আমি তোমাদের ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে লাগলাম। তোমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ পড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। তারপর তোমাদের সবুজে ঢাকা দেশটি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। কী সুন্দর দেশ! কী সুন্দর দেশের মানুষগুলো!
এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল শৈত্যপ্রবাহ। আমি আর নিজের দেশে ফিরে যেতে পারলাম না।
বাংলাদেশ আর বাংলা ভাষার প্রতি এলিয়েনের ভালোবাসা দেখে অপু আর তপুও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ল। কারো মুখে কোনো কথা বেরুল না। তপু আস্তে করে বলল, অনেক রাত হয়ে গেছে এলিয়েন। চলো এবার ঘুমিয়ে পড়ি।
এলিয়েন বলল, চলো।
সবাই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো। শরীরের ওপর সারা দিন অনেক ধকল গেছে। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়ল এলিয়েন। ঘুমিয়ে পড়ল অপু আর তপু।
তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখল শৈত্যপ্রবাহ কেটে গেছে। গাছের পাতায়, সবুজ মাঠে ঝলমল করছে সকালের সোনালি রোদ।
সূর্যের আলো দেখে খুশিতে মুখ ভরে গেল এলিয়েনের। বলল, এবার আমাকে যেতে হবে। মা নিশ্চয় আমার জন্য অপেক্ষা করছে। খুব চিন্তা করছে।
এলিয়ে চলে যাবে শুনে মন খারাপ হয়ে গেল অপু আর তপুর। তবুও তারা তাকে হাসিমুখে বিদায় দিলো।
বলল, আবার এসো এলিয়েন।
আসব। নিশ্চয় আসব। তোমাদের এই সবুজে ঘেরা ছোট্ট দেশটা আমার কাছে নিজের জন্মভূমির মতোই প্রিয়। তোমাদের ভাষা আমাকে ভালোবাসা শিখিয়েছে। আবেগ শিখিয়েছে। আর হ্যাঁ, এবার কিন্তু আমি আর একা আসব না।
অবাক হলো অপু আর তপু। দু'জন একসাথে বলল, তাহলে কাকে সাথে নিয়ে আসবে? তোমার বন্ধুদেরকে?
নাহ।
তাহলে?
সাথে নিয়ে আসব তোমাদের জন্য একটা লাল ফুটবল।
এলিয়েনের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো অপু।
সাথে তপুও।
আসি। বলেই এলিয়েন বলটা একটু চ্যাপটা হয়ে গেল। সাথে সাথে তার দুই পাশে দুটো ডানা বের হলো। তারপর এলিয়েন সাঁই করে উড়াল দিলো আকাশে।
অপু আর তপু তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা