১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নায়কের মা

-


মিজান, তুমি স্ক্রিপ্ট তো দিলা না।
আন্টি, সব রেডি আছে। এলেই পেয়ে যাবেন। দেরি করবেন না। রওনা হয়েছেন?
এই যে, বের হচ্ছি। মালিবাগ থেকে উত্তরাই তো। সিএনজিতে দু-তিন ঘণ্টার বেশি লাগবে না।
মালিহা বেগম সিএনজির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। অনেক দিন এই যানটাতে চড়া হয় না। হাতে কাজ নেই ছয় মাস হলো। ছোট মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। স্বামী নেই ছয় বছর। মেয়ে একটা বেসরকারি কলেজের প্রভাষক। বাসই এখন তাদের পারিবারিক যান।
ঢাকায় আজ জ্যাম খুব বেশি নেই। সিএনজির চালক ভালোই টেনে যাচ্ছে।
খালাম্মা, একটা কথা কই। কিছু মনে কইরেন না।
হ্যাঁ, বলো।
আপনাকে কোথায় যেন দেখছি। টিভিতে মনে হয়। ভুল কইলাম?
দেশী চ্যানেল তো এখন কেউ দেখে না। সব জলসা, সিরিয়াল। আমাকে দেখলা কিভাবে?
ঠিক কইছেন। আমিও জলসা দেখি। তবে আপনাকে দেখছি মনে হয়। মোশাররফ করিমের মা হইছিলেন না আপনি?
তাই নাকি? হবে হয়তো। এখন তো আর কেউ ডাকে না আমাকে, আমাদের।
দীর্ঘশ্বাস বাতাসে মিলতে মিলতে গাড়ি থামে উত্তরার খুব পরিচিত একটা ভবনের সামনে। সবাই বলে ‘শুটিং বাড়ি’। ভীরুপায়ে মালিহা বেগম ভেতরে ঢোকেন। নিচতলায় শুটিং হচ্ছে। বিজ্ঞাপন হবে মনে হয়। নাকি ‘মিউজিক ভিডিও’? কাউকে চেনা লাগছে না তার। মিজান বলেছে সোজা তৃতীয় তলায় চলে যেতে। সেখানে গিয়ে দেখেন তেমন কেউ এখনো আসেনি।
মিজান, আমি তো এসে পড়েছি। লোকজন কই?
ও, আসছেন? এই আমি আসছি। মনা বলে একটা ছেলে আছে। আমি ফোন দিচ্ছি; চা দেবে আপনাকে।
ফাঁকা ফ্ল্যাটে একা বসে মালিহা বেগম তার শুটিং জীবনের একটার পর একটা ছবি সামনে দেখতে পান। দেশ মাত্রই স্বাধীন হয়েছে। তার বয়স তেরো-চৌদ্দ হবে হয়তো। বাবা ভর্তি করে দিয়েছিলেন গানের স্কুলে। সুবীর কাকু একদিন বললেন, ‘কিরে, তোরা টিভিতে গান গাবি?’ সুবীর কাকু সিনেমার গানের সুর করেন।
জানুয়ারির সন্ধ্যাবেলা। জীবনে প্রথম ক্যামেরার সামনে। মালিহা ঘামছে দরদর করে। আরো দশটা মেয়ের সাথে সে গান গাচ্ছেÑ ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয়রে ছুটে আয়, আয়, আয়।’
মিজান এসে গেছে। মালিহা বেগম হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।
আমার স্ক্রিপ্ট কই, মিজান?
আন্টি, আমাদের পরিচালক অনেক আধুনিক। আপনাকে সিকোয়েন্স বুঝিয়ে দেবে। সংলাপ নিজের মতো করে বলবেন। আপনি সিনিয়র আর্টিস্ট। আপনার আবার স্ক্রিপ্ট লাগে নাকি?
মালিহা বেগম এসব খুব অপছন্দ করেন। আশি-নব্বইয়ের দশকে বিটিভিতে একটার পর একটা নাটকে অভিনয় করে গেছেন তিনি। চেহারা নায়িকা নায়িকা ছিল না তার। নায়িকার বান্ধবী, নায়কের বোন, পাশের বাড়ির মেয়ে, পরে ভাবী, ছোট চাচী, চরিত্রের অভাব হয়নি তার। বাঘা বাঘা প্রযোজক সবাই। চিত্রনাট্য নিয়ে এক মাস, দুই মাস ধরে সে কী মহড়া! দিন যেত রামপুরায়, রাত নামত রামপুরায়। আর এখনকার ছোকরা কী বলে এসব?
তা স্ক্রিপ্ট না হোক, আমার চরিত্রটা কী, বলবা তো?
আপনি নায়কের মা। নায়ক-নায়িকা বিয়ে করে আলাদা ফ্ল্যাটে থাকে। নায়কের একটা পরকীয়া আছে। ডিভোর্স হয়ে যাবে অবস্থা। আপনি নায়ক, মানে ছেলেকে বুঝাবেন, এসব ভালো না। এই আর কি।
চরিত্র শুনে মালিহা বেগম চুপসে যান। এত হালকা চরিত্রও তাকে করতে হবে ভাবেননি কোনো দিন। আবার তিনি চলে যান নব্বইয়ের দশকে। নতুন নতুন প্যাকেজ নাটক হচ্ছে। প্রথম তিনি ‘মা’ চরিত্রে অভিনয় করছেন। চুলে তখন সাদা রঙ দিতে হতো। এখন তার কোনো কালো চুল নেই। সেই দিনও চলে গেছে।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নায়ক এখনো আসেনি। দুপুরে দুটি শিঙ্গাড়া আর চা দিয়েছিল স্পটবয়। ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। একটু কি বাইরে গিয়ে ভাত খেয়ে আসবেন? মেকআপ যদি নষ্ট হয়? এসব ভাবতে ভাবতে ৮টার দিকে নায়ক এসে পড়ে।
ভাই বসেন। এসিটা বাড়িয়ে দে, হুলস্থুল পড়ে যায়।
আরে গাজীপুর থেকে আসছি রাত ৩টায়। সামনের ঈদে চল্লিশটা নাটক যাবে আমার। আর পারি না। দেখি, তোমাদেরটা শেষ করে যাই। সিকোয়েন্স কী?
সিকোয়েন্স শুনে নায়ক তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে।
‘ঘণ্টার নাটক বানানো শিখছো। ছেলেরে বুঝাইতে মায়ের সামনে আসার দরকার কী? ফোন নাই? রাস্তার ফকিরও তো ফোনে কথা বলে, আর তোমরা? আমার নাটকে কোনো মা-বাবার চরিত্র থাকবে না, বুঝছো? এমনি বাজেট নাই, বাজেট নাই করো, আবার রাখছে নায়কের মা চরিত্র। ক্যামেরা রেডি করো। আমি ফোনে কথা বলার সিন কইরা দেই। পরে মহিলা ভয়েস বসাইয়া দিও। দুই ঘণ্টার বেশি আমি সময় দেবো না।’
‘ভাই, আপনি জিনিয়াস। আপনি যেভাবে বলেন সেভাবেই হবে। ওই, ক্যামেরা রেডি কর।’
বাস যাচ্ছে মালিবাগের দিকে। মালিহা বেগমের হাতে একটা বিস্কুটের প্যাকেট। মিজান ছেলেটা মুখ কাঁচুমাচু করে কিছু টাকা আর এই প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। তার ক্ষুধা মরে গেছে। এখন খাবার নামবে না গলা দিয়ে। মালিহা বেগমের চোখে জল। তার ইচ্ছে করছে হাউমাউ করে কাঁদতে।
শুকনো চোখে গ্লিসারিন লাগিয়ে কান্নার চেয়ে চোখ ভরতি জল আটকে রাখার অভিনয় অনেক কষ্টের করে দিয়েছেন বিধাতা।
মাতুয়াইল, ঢাকা

 


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল