২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছোট্ট ঢিবিতে ময়না-শালিক

-

ময়নার গায়ে হলুদ জামা। শালিকেরও তাই। তারা পিঠাপিঠি দুই বোন। যেখানে যায়, একসাথে যায়। দু’জন ভালো বান্ধবীও। পড়েও একই কাসে। দু’জন একখাটে জড়াজড়ি করে ঘুমায়। আজ তারা একটু দেরিতেই ঘুমিয়েছে। তারা দেখতে পায় তাদের সামনে গভীর ঘন জঙ্গল। নানা রকম নাম না জানা ফলের গাছ। কিছু পরিচিত ফলের গাছ। তারা হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। যত দেখছে তত বিস্ময়াভিভূত হচ্ছে। সব কিছু কেমন যেন অপার্থিব। শান্তিময়। ফলবাগানের পর বিশাল বড় দীঘি। দীঘিতে নিস্তরঙ্গ নীল জল। তাতে রঙ-বেরঙের বাহারি নৌকা। নৌকায় কোনো মাঝি নেই। নৌকাগুলো এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। দীঘির পাড়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফুলের বাগান। বাগানটা খুব পরিপাটি। নানা রঙের ফুল। বাগানের একটা অংশজুড়ে শুধু সাদা ফুল। দেখে মনে হয় আকাশের মেঘ নিচে নেমে এসেছে। পূবালী বাতাসে দোল খাচ্ছে। আরেকটা অংশজুড়ে শুধু লাল ফুল। দৃষ্টিকাড়া লাল। কোনো ফুলে কোনো অলি নেই। ফুলের সৌন্দর্য ঘুরে দেখতে দেখতে তারা কান্ত হয়ে গেল। ময়না বললÑ চল, আমরা কোনো নৌকায় উঠে বসি। শালিক সাহস পেল না। তারা একটি গাছের গুঁড়িতে বসল। একটু জিরিয়ে আবার হাঁটা শুরু করল। সামনে বিশাল অংশজুড়ে হলুদ ফুলের বাগান। এ ফুলের নাম তারা জানে না। মায়াবী হলুদ। ফুলের গা একটু একটু ভেজা। কী রকম যেন সম্মোহন করে। তারা হাঁটছে আর হাঁটছে। বাগানের শেষ হয় না। হঠাৎ সামনে পড়ল একটি ছোট্ট ঢিবি। চার দিকে সুমসাম নীরবতা। গমগমে বাতাস। তারা দৌড়ে ঢিবিতে উঠে গেল। খুব সুন্দর একটা ছোট্ট ঘর দেখতে পেল। দরজা খোলা। তারা ভেতরে ঢুকে গেল। ভেতরটা খুব পরিপাটি। একপাশে একটি রুপার খাট। মনে হয় কোনো রাজকুমার এখানে ঘুমায়। তারা কান্ত দেহে সেই খাটে শুয়ে পড়ল। সাথে সাথে রুমের দরজা ঠাস করে বন্ধ হয়ে গেল। তারা ভয়ে জড়সড় হয়ে গেল। এখন কী হবে!
শালিক প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেল। ময়না তাকে সাহস দিয়ে বলল, ‘ভয়ের কিছু নেই। যে দরজা এমনি এমনি বন্ধ হয়ে যায়, তা আবার এমনি এমনি খুলেও যায়। দেখ, আবার হঠাৎ করে খুলে যাবে। চল, আমরা একটু ঘুমাই। ঘুম থেকে উঠে দেখব দরজা খুলে গেছে।’ ময়না নিজেও খুব ভয় পেয়েছে। কিন্তু প্রকাশ করছে না। সে জানে ভয় ছোঁয়াচে। একজনের ভয় আরেকজনের মাঝে ছড়ায়। শালিক ভীতকণ্ঠে বলল, ‘যদি দরজা না খোলে!’ ময়না বলল, ‘আমরা চেষ্টা করব খোলার। যদি খুলতে না পারি, তাহলে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেরিয়ে যাবো।’ কোনো কথায়ই শালিকের ভয় কাটছে না। সে বুঝে ফেলেছে,এ মজবুত দরজা কিছুতেই তাদের পক্ষে খোলা সম্ভব না। তা ছাড়া তাদের হাতে কিছুই নেই। সুড়ঙ্গই বা কী দিয়ে খুঁড়বে!
ছোট্ট জানালা দিয়ে উত্তুরে হাওয়া আসছে। বাইরে রোদেলা দুপুর। জানালার পাশে একটি কড়ই গাছ। পাতায় পাতায় আলোর ঝিলিমিলি। ঝিরঝিরে বাতাসে পাতার চাঞ্চল্য। সব দেখেও মন থেকে ভয় দূর হচ্ছে না। শালিক কাঁদতে লাগল। এবার ময়না তাকে ধমকের স্বরে বলল, ‘কাঁদবে না তো। কান্না কোনো সমাধান নয়। এই দুনিয়া বড় নিষ্ঠুর। এখানে তোমাকে বাঁচতে শিখতে হবে। মানুষ মৃত্যুকে এড়িয়ে চলতে পারে না। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে পারে। মৃত্যুকে এত ভয় পেলে, মৃত্যু তোমাকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়াবে। তুমি মরার আগে বারবার মরবে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব বাঁচার। তার পরও যদি মৃত্যু আসেÑআমাদের মেনে নিতে হবে। এত ভেঙে পড়ার কিছু নেই।’ তারা দু’জনই খাট থেকে লাফ দিয়ে নামল। নামার সাথে সাথে দরজা খুলে গেল।
তারা আনন্দে আত্মহারা। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার আনন্দে উদ্বেল। তারা বুঝে গেল খাটে উঠলে দরজা বন্ধ হয়, নামলে খুলে যায়।
দুজনেরই ঘুম ভেঙে গেল। তাদের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তারা দু’জনই তাদের স্বপ্ন নিয়ে উচ্ছ্বসিত। নিজেদের মাঝে কথা বলতে লাগল। একে একে সব মিলে যাচ্ছে। তারা দু’জন একই স্বপ্ন দেখেছে। পরদিন তাদের দু’জনেরই পা ব্যথা হয়ে গেলÑ স্বপ্নে হাঁটাহাঁটির জন্য।


আরো সংবাদ



premium cement
বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে মৃত হাতি উদ্ধার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলির নিন্দা জামায়াতের রাজধানীতে তৃষ্ণার্তদের মাঝে শিবিরের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ রাজশাহীতে সাড়ে ৬ কোটি টাকার হেরোইনসহ যুবক গ্রেফতার এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা গাজার বালিতে আটকে পড়েছে ইসরাইলি বাহিনী : হামাস মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন : যা বলছে আওয়ামী লীগ মান্দায় বিদ্যুতের আগুনে পুড়ল ৮ বসতবাড়ি রিজওয়ানকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্র্যাডম্যান বললেন আফ্রিদি

সকল