২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরি আবার ইশকুলে যাবে

-


মিলির বাসায় ঝিয়ের কাজ করে পরি । পরি মানে পরিবানু। দেখতে একবারে টুকটুকে পরির মতো বলেই বাবা মা ওর নাম রেখেছে পরিবানু। কিন্তু সবাই তাকে শুধু পরি বলেই ডাকে। মানুষ হিসেবে মিলি খুব ভালো। শিল্পপতি পরিবারের বউ হয়েও মনে কোনো অহঙ্কার নেই তার । সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে। সবার বাড়ির খোঁজখবর নেয় । মিলি মানুষ হিসেবে যেমন ভালো, তেমনি ব্যক্তি হিসেবেও আদর্শ, সৎ ও নিষ্ঠাবান। পরি কাজের মেয়ে হলেও কখনো তাকে কাজের মেয়ে মনে করে না মিলি। মনে করে পরি এই পরিবারেরই একজন সদস্য। সে নিজে যা খায় পরিকেও তাই খাওয়ায়। ভালো জামাকাপড় পরায়। পরি যে এ বাড়ির একজন কাজের মেয়ে হুট করে দেখে কেউ তা সহজে বুঝতে পারবে না।
একদিন ছুটির দিনে বাসায় এলো মিলির এক বান্ধবী। এসেই তো চোখ একেবারে কপালে উঠল। বড় বড় চোখ করে বলল, এই মিলি?
হুম।
তুই যে বলেছিলি....।
কী?
তোর কোনো মেয়ে নেই।
নেই তো।
এই তো বাসায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে মেয়ে!
ও পরি । পরিবানু।
পরি মানে?
আমার বাসার কাজের মেয়ে।
বলো কী! কাজের মেয়ে?
হুম।
পোশাক দেখে তো মনেই হয় না ও কাজের মেয়ে। গায়ে কি দামি জামাকাপড় রে বাবা!
কেন? কাজের মেয়েদের কী দামি জামা পরতে নেই? পরা নিষেধ?
না, ঠিক তা নয় । তবুও...
আমি ওসব কিছু মনে করি না তুলি। বলল মিলি। আমি মনে করি, আমরা সবাই মানুষ। যোগ্যতা ভেদে হয়তো কাজ করা ছোট বড় হতে পারে, কিন্তু ভালো পোশাক সবাই পরতে পারে। আজ তুই আমি ভালো লেখাপড়া করেছি বলেই ভালো চাকরি করছি, ও লেখাপড়া করতে পারেনি বলেই বাসায় ঝিয়ের কাজ করছে। ভালো লেখাপড়া করলে হয়তো...। আর ঠিক তখনই মিলির মাথায় এলো পরির কথা। পরি এ বাসায় এসেছে তিন মাস হলো, অথচ একবারেও তার মনে হয়নি কথাটা। জিজ্ঞেস করা হয়নি পরি ইশকুলে লেখাপড়া করেছে কিনা?
সেদিন রাতেই জিজ্ঞাসা করল, অ্যাই পরি?
জ্বি আফা?
তুমি কোনো দিন ইশকুলে গেছো?
জ্বি।
কোন কাস পর্যন্ত লেখাপড়া করেছ?
কেলাস টু।
তারপর আর পড়নি?
না।
কেন?
মা কইছে গরিবের লেহাপড়া করে লাভ নাই। আমাদের লাখ লাখ টাকা নাই, যে ঘুষ দিয়া চাকরি নেবো। তার চেয়ে তুমি বাসায় আমার কাজে সাহায্য করো, আমি একটু রাজুরে দেহি। পরিবানুর ছোট ভাইয়ের নাম রাজু।
মিলি পরির কথা শুনে বুঝতে পারল পড়ালেখার প্রতি অনীহার জন্য পরির লেখাপড়া বন্ধ হয়নি, বরং তাকে নিরুৎসাহিত করে একপ্রকার জোর করেই পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও একটু বাজিয়ে নিতে চাইল। বলল, পরি, আমি যদি তোমাকে আবার ইশকুলে ভর্তি করে দিই, তুমি পড়ালেখা করবে?
পরি উদাস গলায় বলল, গরিবের লেহাপড়া করে কী হইবে আফা?
মিলি বুঝতে পারল পড়ালেখা করতে না পেরে এটা ওর মনের অভিমান, ােভ। লেখাপড়ার প্রতি এখনো তার প্রবল টান আছে। আকর্ষণ আছে। মিলি ঠিক করল তাকে আবার ইশকুলে ভর্তি করিয়ে দিবে, পড়ালেখা করাবে। কিন্তু পড়ালেখা করার ব্যাপারে তাকে সরাসরি কিছু বলবে না, বরং উৎসাহমূলক এমন কিছু গল্প শুনাবে, যা শুনে ও নিজে নিজেই পড়ালেখার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
বলল, এইটা কোনো যুক্তি নয়, পরি। পড়ালেখায় কোনো ধনী গরিব নেই। পড়ালেখা সবার জন্য সমান। সরকার এখন পড়ালেখা করার জন্য সবাইকে বই ফ্রি দেয়, বৃত্তি দেয়, মানে খাতা কলম কেনার জন্য টাকা দেন। তাহলে পড়ালেখা করতে সমস্যা কোথায়?
আর বাবা মায়ের কাজের সহযোগিতার কথা বলছ তো? ওটা পড়ালেখার পাশাপাশিও করা যায়। তারপর বলল, আমি যদি তোমাকে এখন ছুটি দিই, বলি বাড়ি যাও, বাবা মাকে দেখে এসো, তুমি বাড়ি যাবে না?
যাবো।
কেন যাবে? রাস্তায় নামলে তো তুমি এক্সিডেন্ট করতে পারো, মারা যেতে পারো বা তোমার অন্য কোনো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাহলে তুমি রাস্তায় নামবে কেন?
পরি বলল, এক্সিডেন্টের ভয়ে তো আর ঘরে বসে থাকলে চলবে না আফা। রাস্তায় না নামলে, কাজকাম না করলে মানুষ খাবে কী? বাঁচবে কেমনে?
মিনি বলল, ঠিক তাই, এক্সিডেন্টের ভয়ে, পকেটের টাকা চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমরা যেমন রাস্তায় নামা বন্ধ করতে পারি না, ঠিক তেমনি চাকরি হবে না ভেবে পড়ালেখাও বন্ধ করাও ঠিক না। আমাদের পড়ালেখা করতে হবে নিজের জন্য। মানুষ হওয়ার জন্য। তারপর মিলি পরিকে কিছু মনীষীর জীবনী শোনাল। যারা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন। বলল, কাজী নজরুল ইসলামের কথা। যিনি সারা দিন রুটির দোকানে কাজ করে রাতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিদ্যুতের আলোয় বই পড়েছেন।
সব শুনে রাতে ঘুমাতে গিয়ে নানা কথা ভাবতে লাগল পরি। ভাবতে লাগল, আফায় তো ঠিকই কইছে, মানুষ হতে হলে কষ্ট করতে হয়। কাজের পর টিভি না দেখে বই পড়লেই তো পারি। তাহলে কাজও করা হলো লেহাপড়া করাও হলো। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল পরি। ঘুমে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখল সে। দেখল, সে ইশকুল ড্রেস পরে ইশকুলে গেছে। ফার্স্ট বেঞ্চে বসে কাস করছে। তার অনেক বন্ধুবান্ধব। টিফিনের সাথে সাথে সবাই হুড়হুড় করে মাঠে বেরিয়ে আসছে। দলবেঁধে গোল্লাছুট, বউচি আর কানামাছি খেলছে। আর ঠিক তখনই ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভেঙে দেখে সে বিছানায় শুয়ে আছে। ফিক করে নিজে নিজেই হেসে দেয় সে। সত্যিই ইশকুল জীবনটা, লেখাপড়ার জীবনটা কতই না আনন্দের, মধুর! সে ঠিক করল বাসায় হলেও আবার লেখাপড়া শুরু করব।
সকালে মিলিকে চা দিতে গিয়ে বলল, আফা?
কিছু বলতে চাও?
জ্বি।
কী?
আমি আবার লেহাপড়া করতে চাই।
আমার বাসায় তো অনেক কাজ। এই কাজ করে কখন বই পড়বে?
সারা দিন কাজ করে রাইতে যহন টিভি দেহি, এহন আর ওই সময় টিভি দেহুম না। বই পড়ুম।
তার কথা শুনে খুব খুশি হলো মিলি । বলল, হ্যাঁ পরি , তোমার ইচ্ছে দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার বাসার পাশে একটা ইশকুল আছে। নাম ঝরে পরা ইশকুল। ওই ইশকুলে বিকালে কাস হয়। তুমি সকালে বাসার কাজকাম শেষ করে দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে ওই ইশকুলে যাবে। আমি ওই ইশকুলের টিচারের সাথে কথা বলে তোমাকে ভর্তি করিয়ে দেবো।
আবার ইশকুলে যেতে পারবে, পড়ালেখা করতে পারবে, শুনে খুব খুশি হয় পরি । আনন্দে চোখ দুটি তার চকচক করে ওঠে।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল