২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মেশিন

-


২০০৭-০৮ সালের কথা, টিভিতে সাক্ষাৎকার দেখছি অভিনেত্রী সম্পা রেজার। উনি বলছেনÑ
বাচ্চারা বড় হলো, স্কুলে ভর্তি করাব, কিন্তু ভালো স্কুল খুঁজেই পাই না। কি করব কি করব? অতঃপর একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করলাম, সেখানেই বাচ্চাদের ভর্তি করালাম।
আমি শুনে হা করে বসে আছি। মনে মনে বলিÑ
- বাপরে, বেটির খেমতা আছে। একেবারে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়লেন।
যাক ভাবছেন হঠাৎ এত বছর পর এই কাহিনী লিখি কেন? নিশ্চয়ই কারণ একটা আছে।
মা মেয়ে তিনজন আমরা, আজ এর জামা বানানো কাল ওর। আবার নিজের তো আছেই। ঘরে পরার বাইরে পরার কত্ত কি?
আর পুরনো কাপড়ের কাজ তো আছেই। বান্ধবীর দোকানে দেই, সেও দিতে দেরি করে। পাশের এক মহিলাকে দেই, সেও কথা দিয়ে কথা রাখে না। আজ কাল পরশু করে ঘুরায় আর ঘুরায়। ইচ্ছা করেই মহিলাদের দেই, ঘরে বসে কিছু টাকা তারা আয় করুক। কিন্তু তারা এটা বোঝে না। দারোয়ান সেলাইয়ের কাজ করে, দিলাম তার কাছে চাদর বালিশের কিছু, ওমা সেও দেখি একই অবস্থা করে। মেজাজ গেল খিটখিটিয়ে। সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেই সেলাই মেশিন কিনব। টাকা পকেটে নিয়ে ঘুরছি ১৫ দিন। একি তেজগাঁও এলাকায় সেলাইয়ের মেশিন নাই। তিনবার কিছু কিছু টাকা খরচও করেছি। তাহলে কি সেলাই মেশিন কেনা হবে না।
গেলাম সাভারে বেড়াতে, পকেটে করে নিয়ে গেলাম টাকা। মা কে বলিÑ কে আমারে মেশিন কিনে দিবে?
- তোর আব্বাকে বল, যাবে দেখবি তোর সাথে।
আব্বাকে যেই বললাম, আব্বা রাজি। সাথে সাথে বাবা আর মেয়ে চলে যাই বাইরে। সেদিন কি আনন্দ হচ্ছিল আমার। এই বয়সেও বাবাকে নিয়ে নিজের কাজে যাচ্ছি। আব্বাকেও আমি খুব উৎফুল্ল দেখলাম। সেলাইয়ের মেশিন কিনেই ঘরে ফিরি আব্বা আর আমি। কি আনন্দ আমার, খুব দামি কাপড় হলে বাইরে সেলাই করতে দেব। বাকিগুলো নিজেই পারব ইনশাআল্লাহ।
আগে বলত- ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’, আজ বলবেÑ
‘যে হাতে কাজ করে নিজের নামের সাথে সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট শব্দগুলো যোগ করেছি, সেই হাতেই সুঁইয়ে সুতা ভরছি।’
নিখিলেশকে কল দিলামÑ
দোস্ত মেশিন কিনেছি, তোমারে একটা ফতুয়া বানাইয়া দিমু।
আমারে দিতে হইব না, যিনি টাকা দিছে উনারে সেলাই করে দাও।
দিমু দিমু, তারেও দিমু। আগে তোমারে দিমু।
নাহ, আগে তুমি আহসান সাহেবকেই দাও।
না, তোমারেই দিমু।
কইলাম না, আগে উনারে দাও।
তুমি কত্ত দয়ালু, নিজের কথা ভাব না, হের কথাই ভাব।
দয়ালু না ছাই, হেরে বানাইয়া দিয়ে আগে তুমি সেলাই শিখো, হাত পাকা হোক, পরে আমারে দিবা (গুন গুন করে কইল)।
আমি তো হুইনাই ফেলাছি।
কি কইলা এটা, তুমি কি ভাবছ আমি পারি না। চোখ খুইলা দেখো তিনটা বানাইছি। আচ্ছা তুমি এত চালাক হইলা কবে?
কেন তুমার সাথে আছি কতদিন দেখতে হইব না।
আছ মানে? তুমি থাও কুমিল্লা আর আমি থাই ঢাকা। সাথে আছ কইলা ক্যা।
একদানা ভুল হইছে, বুইজ্জা নিলেই হয়। সাথে আছি মানে অদৃশ্যভাবে আছি তো।
এইবার ঠিক আছে। শুন, ফতুয়া বানামু। বাইরে বানাইতে তোমার কাছে নেয় ২০০ টাকা, আমি বানাই দিমু দিবা ৪০০ টাকা + কাপড়ের মূল্য।
এডা কি কতা। ডাবল দিমু কেন?
কেন মানে, আমার হাতের ছোঁয়া থাকব যে।
এই তোমার বাড়ি কই জানি?
কেন জানো না, ভুইলা গেছ। তোমগো বাইর দক্ষিণ দিয়ে। বুইজ্জনি। এবার ঘুমাও।
শুভ রাত্রি।


আরো সংবাদ



premium cement