২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পারকি সমুদ্রের ঢেউ দেখতে আনোয়ারায়

-

সময়টা ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সাল। ছুটির দিন। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। উদ্দেশ্য দু’টি। শহীদ মিনারে ফুল দেয়া এবং বেড়ানো। শহীদ মিনার গেলাম, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফুল দিলাম। এরপর রওনা দিলাম পূর্বনির্ধারিত স্থানে। যেখানে বন্ধুদের এক হওয়ার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের টাইগারপাস মোড়ে বন্ধুরা আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আমার সবসময়ই একটু দেরি হয়। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। চার বান্ধবী এবং সাত বন্ধু মিলে মোট ১১ জন একত্র হলাম টাইগারপাস মোড়ে। দু’দিন আগেই এক বন্ধু গাড়ি রিজার্ভ করে রেখেছিল। ওই গাড়িও উপস্থিত। সবাই গাড়িতে চেপে বসলাম। গাড়িতে ওঠার আগে এবং পরে সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত। আমিও কয়েকটা সেলফি নিলাম। এখন গন্তব্য একটাই, পারকির চর।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে পারকি সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রামের দেিণ আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমি কিংবা বিমানবন্দর এলাকা থেকে কর্ণফুলী নদী পেরোলেই পারকি চর। আমরাও আনন্দের সাথে যাচ্ছি এই চরে। যেতে সময় লাগবে এক ঘণ্টা। তবে রাস্তায় কিছুটা জ্যাম ছিল। তাই আমাদের বাড়তি কিছু সময় লেগেছিল।
এটা মূলত কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এবং পূর্ব-দণি তীরে পারকি সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রাম সারকারখানা ও কাফকো যাওয়ার পথ ধরে এই সৈকতে যেতে হয়। এটি একটি উপকূলীয় সমুদ্রসৈকত।
একসময় বাংলাদেশে সমুদ্রসৈকত বলতে শুধু কক্সবাজার ও পতেঙ্গা সৈকতকে মনে করা হলেও বর্তমানে পর্যটদের কাছে পারকি সৈকত বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। যার কারণে আমাদেরও প্রাণ টানছিল যেতে এবং সেই টানেই আমরা পৌঁছালাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান পারকি চরে।
পারকি সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার পথে দেখা মিলে অন্যরকম এক দৃশ্য। আঁকা-বাঁকা পথ ধরে ছোট ছোট পাহাড়, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিউএফল) ও কাফকোর দৃশ্যও পর্যটকদের প্রাণ জুড়াবে। বিচে ঢুকার পথে সরু রাস্তার দু’পাশে সারি সারি গাছ, সবুজ প্রান্তর আর মাছের ঘের দেখা যায়। বিচে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের মতো অসংখ্য ঝাউগাছ আর ঝাউবনও রয়েছে। যা দেখে সত্যি মনে হচ্ছে আমি কক্সবাজারেই আছি।
পৌঁছেই প্রথমে আমরা ফুটবল নিয়ে খেলতে নামলাম বিচে। সাগরের পাড়ে ফুটবল খেলার কী আনন্দ সেটা নিশ্চয়ই সবার অজানা নয়। ফুটবল খেলে নামলাম সমুদ্রের তীরে। যেখানে অসংখ্য পর্যটক আনন্দে মেতে উঠেছে। আমরাও তাদের সাথে আনন্দ ভাগভাগি করতে নেমেছি সমুদ্রে।
পানির ঢেউ আর বন্ধুদের দুষ্টামি এক অন্যরকম আনন্দের স্বর্গে নিয়ে গেছে আমায়। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, আমি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সুখী। এরপর গোসল করে সবাই একটা স্থানীয় হোটেলে বসলাম। ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম। স্থানীয় হোটেলের খাবারগুলো মোটামোটি ভালোই ছিল। ডাল, মাংস আর সবজি দিয়ে দুপুরের খাবার সারলাম সবাই। এরপর সবাই বিচের পাশে ঝাউবাগান ঘুরছি। এখানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্যা ছাত্রছাত্রী বেড়াতে এসেছে। শিক্ষা সফরের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। ওদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানও হচ্ছে। ওসব দেখছি। আবার প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেকেই সময় কাটায়। সমুদ্রের পাশে গিয়ে অনেকেই সূর্যাস্ত দেখবে বলে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকেই পানির মধ্যে হাঁটছে। দেখে সত্যি মন জুড়িয়ে যায়। আমার কিছু বন্ধু আবার মোটরসাইকেলেও চড়ছে। এখানে বিভিন্ন গাড়ি আছে। পর্যটকদের চড়ার জন্য এসব গাড়ি নিয়ে অনেকেই বসে থাকে। এভাবেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। সবাই গাড়িতে আবার উঠে গেলাম। মন চাইছে থেকে যেতে, তবে সেটা তো আর সম্ভব নয়। তাই ফিরে যেতে হচ্ছে। সবাই সেই টাইগারপাসে এসে নামলাম সন্ধ্যা ৭টায়। এরপর সবাই নাশতা করে বিদায় নিলাম। অন্য কোনো দিন অন্য কোনোখানে আবার আমরা বেড়াতে যাব।

যেভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান থেকেই বাস অথবা টেম্পোতে করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু বা কর্ণফুলী সেতু ৩০ টাকা (সম্ভাব্য)। সেখান থেকে আনোয়ারার বটতলী মোহছেন আউলিয়ার মাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠবেন, ভাড়া ৩০ টাকা। (এখানে বৈলতলী ও বটতলীর দুই রকম বাস ছাড়ে। আপনি অবশ্যই বটতলীর বাসে উঠবেন) বটতলীর মোহছেন আউলিয়া মাজারগামী বাসে উঠে হেলপারকে বলতে হবে ‘সেন্টার’ নামক জায়গায় যাতে নামিয়ে দেয়। সেন্টারে নেমে সিএনজি বা রিকশাযোগে যেতে পারেন পারকি সৈকত। ভাড়া ৩০ টাকা।
সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে যাওয়ার খরচ লোকাল ৯০ থেকে ১২০ টাকা।
তবে এখানে রিজার্ভ যাওয়া-আসা বেশি হয়। চট্টগ্রামের যেকোনো জায়গা থেকে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে পারকি সৈকত আসতে পারবেন। এতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া বাস-মাইক্রো ইত্যাদি ভাড়া করলে ৬০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন।

থাকার ব্যবস্থা
গত কয়েক বছরে অনেক পর্যটক আগমনের কারণে এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠছে মোটেল। পারকি রিসোর্ট যার মধ্যে অন্যতম। পারকিতে রাত কাটাতে চাইলে স্থানীয় রিসোর্টেও উঠতে পারেন। তবে এসব অনেকের পছন্দসই নাও হতে পারে, তাই আপনি চট্টগ্রাম শহরে এসেও রাত যাপন করতে পারেন। চট্টগ্রাম শহরে আছে বেশ নান্দনিক হোটেল ও মোটেল।

খাবারের ব্যবস্থা
পারকি সৈকতে খাবারের জন্য অনেক রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় ছোট হোটেল ছাড়াও আছে জনপ্রিয় কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। চাইলে যাওয়ার আগেই টিম বা ফ্যামিলির জন্য এই রেস্টুরেন্টে অগ্রিম খাবার বুকড দিতে পারেন। এ ছাড়াও পিকনিক কিংবা শিক্ষা সফরে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।

 


আরো সংবাদ



premium cement