২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
উ ড়ে যা ই দূ রে যা ই

পাখি আর প্রকৃতি

-


কেউ ভাবের পাগল। কেউবা আবার ভবের পাগল। কিন্তু এই দুই পাগল ছাড়াও, দুনিয়াতে আরো এক শ্রেণী রয়েছে ভ্রমণ পাগল। ভ্রমণ নেশা একবার যার মনন-মস্তিষ্কে জেঁকে বসবে, তাকে আর ফেরায় কে? জাগতিক সব দায়-দায়িত্ব পালনের ফাঁকফোকড়েই বেরিয়ে পড়বে, নয়নাভিরাম প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভে। এই লাভ টাকার অঙ্কের অনেক ঊর্র্ধ্বে। সেরকম লাভের লোভেই দে-ছুট ভ্রমণ সঙ্ঘ, গত শুক্রবার ছুটে গিয়েছিল প্রকৃতির নির্যাসে ডুবে থাকা বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রতি বছর এই সময়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। গতবারের চেয়েও এ বছর পাখির বিচরণ অনেক বেশি। প্রায় ১০-১২টি জলাশয়ের মধ্যে, চার-পাঁচটিতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখা যায়। দর্শনার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পার্কিংয়ের দুই ধারের জলাশয়ে, সম্ভবত সবচেয়ে কাছাকাছি ও বেশি পাখি দেখে মুগ্ধ হবেন। সেই সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল ও চীন থেকে আসা পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে সারাক্ষণ মুখরিত থাকে চারপাশ। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে পাখি আর প্রকৃতি মিলেমিশে একাকার। এসব জলাশয়ে হাঁস প্রজাতির সরালী, পচার্ড, ফ্লাই ফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক, পাতারি ও অন্য প্রজাতিগুলোর মধ্যে মানিকজোড়, কলাই, ছাট নগ, জলনাগতা, খঞ্চনা, চিতাটুপি জলপিপি এবং লালগুড়গুটি অন্যতম। এ ছাড়া সচরাচর জলময়ূরী, ডুবুরি, খোঁপা ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি ও বড় পানকৌড়ি পাখির দেখা মেলে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতি বছর জানুয়ারির প্রথম ও দ্বিতীয় শুক্রবার কর্তৃপক্ষ পাখিমেলার আয়োজন করে থাকেন। তখন পাখিপ্রেমীরা প্রায় ২০-২৫ জাতের অতিথি পাখি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক ছাত্র আবু রাইহান রিয়াদের সাথে আলাপচারিতায় জানা হলো, ক্যাম্পাস এরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা বিষয়ে বরাবরের মতোই যথেষ্ট সচেতন। যার ফলে এবার নির্ধারিত সময়ের অনেক আগ থেকেই এসব জলাশয়ে অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত হয়েছে। এই শীতে যারা বাইক্কা বিল কিংবা টাঙ্গুয়ার হাওরে যেতে পারবেন না, তারা অনায়াশে পাখি দেখার স্বাদ নিয়ে আসতে পারেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস ঘুরে। পাখি দেখা শেষে ঢুুঁ মারতে পারেন সাভার বাজার রোড হয়ে নামাবাজার ব্রিজের অপর প্রান্ত রূপনগর। ভ্যানে চড়ে ছুটে যান কাজিয়ালকুণ্ড গ্রামে। দেখবেন, দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা ফুলের ক্ষেত। পথের দুধারে দৃষ্টিনন্দন বনায়ন। বংশী নদীর অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে করবে মুগ্ধ। ঢাকার পাশে অথচ কোলাহল মুক্ত আবহমান বাংলার গ্রামীণ পরিবেশ। সব মিলিয়ে সুন্দর একটি দিন কাটিয়ে, ফিরা যেতে পারে আপন নিবাসে।

কিভাবে যাবেন : ঢাকার বঙ্গবাজার, মতিঝিল, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী এবং সদরঘাট থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে সাভার বাজারস্ট্যান্ড যাওয়ার জন্য। সেখান থেকে অটো বা রিকশায় কাজিয়ালকুণ্ড।

ভাড়া : ঢাকা থেকে সাভার জনপ্রতি ৩৫ থেকে ৭০ টাকা। সাভার স্ট্যান্ড থেকে নামাবাজার পর্যন্ত পাঁচ থেকে ২০ টাকা অথবা সরাসরি চলে যান বড় কুশিয়ারা গ্রামের রূপনগর হয়ে কাজিয়ালকুণ্ড। ভাড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা। উল্লেখ্য, কাজিয়ালকুণ্ড ধামরাই উপজেলা।

তথ্য : সরষে ক্ষেতে ঘুরার জন্য সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে গেলে সূর্যের আলোতে সরষে ফুল দেখতে বেশ লাগবে। এরপর কাজিয়ালকুণ্ড খেয়াঘাট থেকে ট্রলারে বংশী নদী পার হয়ে চলে যেতে পারবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেলা ৩টার পর থেকে ক্যাম্পাসের জলাশয়ে পাখি দেখার সুবর্ণ সময়।
ছবি : দে-ছুট ভ্রমণ সঙ্ঘ

 

 


আরো সংবাদ



premium cement