২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিক্রেট রেসিপির সিক্রেট...

-

হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছেন ফাত্তাহ বিন মমতাজ। পাশে বসা তার স্ত্রী। তিনি কেক খাচ্ছেন। সন্তানদের মুখেও তুলে দিচ্ছেন খানিকটা। নিরিবিলি পরিবেশ। গান বাজছে হালকা ভলিউমে। ফাত্তাহ ছাড়া আরো অনেক ভোজনরসিক দেখা গেল। বেশ হাসিখুশিই মনে হলো তাদের। গোছান সব কিছু। রেস্টুরেন্ট মানেই যেখানে ব্যাপক হই চই। এখানে তা নেই। কোলাহল নেই। যে যার মতো খাবারের স্বাদ নিচ্ছে। বাইরে তাকালে খোলা আকাশ চোখে পড়ে। দু-একটা চড়ইয়ের ওড়াউড়ি চোখ এড়ায় না। বলছিলাম সিক্রেট রেসেপি গুলশান শাখার কথা। গতানুগতিক রেস্টুরেন্ট নয়। পরিবেশ, খাবার, পরিবেশনাÑ সব কিছুতেই সিক্রেট রেসিপির ভিন্নতা চোখে পড়ে। সে কথাই বলছিলেন ফাত্তাহ বিন মোমতাজ। বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ফাত্তাহ শুক্রবারে পরিবার নিয়ে বাইরে খেতে যান। সেক্ষেত্রে তিনি প্রায়ই বেছে নেন সিক্রেট রেসিপি। ফাত্তাহ বলেন, এখানকার খাবারের মান ভালো। কেকের স্বাদ সত্যিই অতুলনীয়। তা ছাড়া এখানে খেতে এলে একটা ফুল ম্যানু খাওয়া যায়। বিশেষত ডেজার্টের জন্য বাইরে কোথাও যেতে হয় না। বাংলাদেশে ২০১৭ সালে সিক্রেট রেসিপে যাত্রা শুরু করে। মালয়শিয়ায় অন্যতম জনপ্রিয় ক্যাফে সিক্রেট রেসিপি। ১৯৯৭ সালে কুয়ালালামপুরে শুরু হওয়া ক্যাফেটির এখন সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, চীনে প্রায় সাড়ে ৪০০ শাখা আছে। বাংলাদেশে ৯টি শাখা আছে সিক্রেট রেসিপির। যেগুলোর অবস্থান খিলগাঁও, শান্তিনগর, বেইলি রোড, ওয়ারী, ধানমন্ডি ও গুলশান দুই নম্বর। সিক্রেট রেসিপির শাখাগুলো তিনটি শ্রেণীতে সাজানোÑ ফ্ল্যাগশিপ, স্ট্যান্ডার্ড এবং এক্সপ্রেস। তবে প্রথম শাখাটি চালু হয় ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর খিলগাঁওয়ের চৌধুরীপাড়ায়। ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে মোট ৫০টি শাখা চালু করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সিক্রেট রেসিপি। সিক্রেট রেসিপি ফেয়ার গ্রুপ বাংলাদেশের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পেপারনি লিমিটেডের অধীনে একক ফ্রাঞ্চাইজি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মূলত কেকের জন্য এর খ্যাতি জগৎজোড়া। তবে সকাল, দুপুর, রাতের উপযোগী সব খাবারের স্বাদ এখানে নেয়া যায়। বাংলাদেশে সিক্রেট রেসিপির শাখা স্থাপন যার প্রচেষ্টায় তিনি হলেনÑ রুহুল আলম আলম মাহবুব। চেয়ারম্যান ফেয়ার গ্রুপ। তার মালিকানাধীন ফেয়ার ইলেট্্রনিকস স্যামসাং মোবাইল হ্যান্ডসেট, ফ্রিজ তৈরি করে। জানা যায়, রুহুল আলম আল মাহবুব ভোজনরসিক একজন ব্যক্তি। বিশেষ করে, চিজ কেকের প্রতি রয়েছে তার বাড়তি দুর্বলতা। কাজের প্রয়োজনে বরাবরের মতো মালয়েশিয়াতে গিয়ে এ সিক্রেট রেসিপি রেস্তোরাঁর কেক খান তিনি। তার পরই সিদ্ধান্ত নেনÑ যদি রেস্তোরাঁর ব্যবসায় নামতে হয়, তবে এই চিজ কেক অবশ্যই দেশে নিয়ে যাবেন! এই পথ পরিক্রমায় ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর খিলগাঁওয়ের চৌধুরিপাড়ায় মালয়েশিয়ার সিক্রেট রেসিপি রেস্তোরাঁর প্রথম শাখাটি চালু হয়। সিক্রেট রেসিপির সব শাখার সব খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে জোড় দেয়া হয়। সিক্রেট রেসিপির সবচেয়ে জনপ্রিয় আইটেম হলো তাদের কেকের বিশাল সমাহার। এত বেশি রেসিপির কেক এ দেশে খুব কম আছে বলে জানা যায়। নগরীতে তো রেস্টুরেন্টের অভাব নেই। মানুষ কেন সিক্রেট রেসিপিতে খেতে আসবে? সিক্রেট রেসিপির সিক্রেট টা আসলে কি? এ প্রশ্নটাই রেখেছিলাম ফেয়ার গ্রুপের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা আশফাক আহমেদের কাছে। তিনি সিক্রেট রেসেপির নানা বিষয় দেখাশোনা করছেন। তিনি বলেন, সিক্রেট রেসিপের প্রথম সিক্রেট হলো এর ইনগ্রেডিয়েন্স। আমরা খাবার তৈরিতে যেসব ইনগ্রেডিয়েন্স ব্যবহার করি। তার বেশির ভাগই আমদানি করা। বাজারে নরমাল ভোজ্যতেল ব্যবহার করা হয় না। সানফ্লাওয়ার কিংবা এক্সটা ভার্জিন অলিভ ওয়েল ব্যবহার করা হয়। খাবারের কোয়ালিটির পাশপাশি এখানকার সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্টদের ব্যবহার আপনার মন জয় করে নেয়ার মতো। পেপারনি লিমিটেডের হেড অব বিজনেস কে এস এম মহিত উল বারি জানালেন, ঢাকায় ৯টি শাখা থাকলেও সব ক’টিতে একই ধরনের খাবার মেলে না। বিভিন্ন স্থানে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের কথা ভেবে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়। গুলশান, ধানমন্ডিতে মিলবে প্রিমিয়াম মেন্যু আবার শান্তিনগর, খিলগাঁওয়ে পাওয়া যাবে অন্যান্য সাধারণ মেন্যু। দামটাও খুব বেশি নয়, ছাত্রছাত্রীদের জন্য মাত্র ২৫০ টাকার সেট মেন্যুও আছে। অনলাইনেও খাবারের অর্ডার করা যায়। সিক্রেট রেসিপের ধানমন্ডি শাখায় কথা হলো সাবরিনা হাসানের সাথে। বন্ধের দিন পরিবার নিয়ে এসেছেন। সিক্রেট রেসিপিতে আসার কারণ জানতে চাইলে সাবরিনা বলেনÑ সিক্রেট রেসিপির খাবারের স্বাদ ভালো। মূল ম্যানু তো আছেই। সাথে বিভিন্ন রকম ডেজার্ট খাবার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। পরিবেশটাও সুন্দর। কথার শুরুতে সাবরিনার সামনে এক পিস কেক দেখেছিলাম। কথা শেষ হওয়ার সময় তিনি আরো দুই পিস কেকের অর্ডার দিলেন। স্বাদের ব্যাপারটা বুঝতে তাই একদমই কষ্ট হলো না। মোটামুটি যে খাবারগুলো ভোক্তাদের সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়েছে বলে জানা গেল সেগুলো হলো, বিফ ও চিকেন স্টেক, সি ফুড আইটেম, ডাম্পলিং স্যুপ, আলফ্রেতো পাস্তা, মিক্সড গ্লিল প্লেটার ইত্যাদি।
সিক্রেট রেসিপির ফ্রাঞ্চ ফ্রাইয়ের কথা একটু আলাদাভাবে বলতে হয়। কারণ অর্গানিক আলু থেকে তৈরি করা হয় এখানের ফ্রাঞ্চ ফ্রাই। জানা গেল প্রায় ৫০টির ও বেশি আইটেম সিক্রেট রেসেপি বিক্রি করে। যারা কখনো মালয়শিয়ান খাবার খাননি। তারা অনায়াসে চলে যেতে পারেন সিক্রিট রেসিপির যে কোনো শাখায়। দেশে বসেই মালয়েশিয়ান খাবারের পরিপূর্ণ স্বাদ নেয়া এখন সম্ভব।
কেকের জন্য মূলত সিক্রেট রেসিপির সুনাম বেশি। এ বিষয়ে পেপারনি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক কে এস এম মোহিত উল বারি জানান, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চকোলেট ইন্ডালজেন্স, দাম প্রতিটি ২১০ টাকা। ১.২ কেজি দুই হাজার ১০০ টাকা। অর্ডার দিয়ে নিজের পছন্দ মতো কেক বানিয়ে নেয়ার সুযোগও আছে, তবে তার জন্য সময় দিতে হবে তিন দিন। সিক্রেট রেসিপি খোলা থাকে সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। সর্বোচ্চ বসার ব্যবস্থা আছে ৮৫ জনের, ওয়াইফাই সুবিধা তো থাকছেই।


আরো সংবাদ



premium cement