২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঘুরে এলাম মুরাদপুর

-

কবি জীবনান্দ দাস, মাইকেল মধুসুদন দত্ত আর কবি আবদুুল হাকিমের এই বঙ্গদেশে কত রূপের পসরা সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতি তা ঘর থেকে না বেরুলে আন্দাজই করা যাবে না। দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের বন্ধুরাও অপার্থীব মায়াবি প্রকৃতির সন্ধানে, একদিন হুট করেই বের হয়ে যাই সীতাকুণ্ডের পথে। সদস্য সংখ্যা ছয়জন। তাও আবার সব পুরনো জাক্কাসগুলো (ভ্রমণে পরীক্ষিত বন্ধু)। এবার গাড়ি কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাটের দিকে টার্ন নিলো। খুব অল্প সময়েই চলে গেলাম। গাড়ি রেখে এগিয়ে যাই। আরে এই দেখি আরেক জগৎ। সোজা সমুদ্রের বুকে পায়ে হাঁটা ব্রিজ চলে গেছে। এখান থেকেই সন্দ্বীপ যাওয়ার ট্রলার ছাড়ে। যাত্রীদের সুবিধার্থেই এই ব্রিজ করা। কিন্তু এখন তা ভ্রমণপিপাসুদের মিলনমেলার আদর্শতম স্থানে রূপ নিয়েছে। আছড়ে পড়া ঢেউয়ের দোল আর মাছ শিকারিদের বড়শিতে বিঁধা নানান মাছ বাড়তি আনন্দের জোগান দেয়। ওই ঘাটেই বিশ্বের নানা সমুদ্রে বীরদর্পে চলা জাহাজের ইতি ঘটে, অর্থাৎ স্ক্র্যাব করা হয়। স্ক্র্যাব করার আগের মুহূর্তের নোঙর করার দৃশ্য সে আরেক অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হওয়ার মতো কাহিনী। ঠিক বিকেল বেলা কুমিরা ঘাটে ঘোরার সুবর্ণ সময়। সেখানে কাটানো মাত্র একটি বিকেল, স্মৃতির পাতায় থাকবে বহুকাল জ্বলজ্বল।
গন্তব্য সৌন্দর্যের আধার গুলিয়াখালী। সীতাকুণ্ড পৌঁছে এবার গুলিয়াখালী বাজারের দিকে ছুটছি। যাব নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত মুরাদপুর।
এখনো এই সৈকত অনেকের কাছেই অচেনা-অজানা। ছোট্ট একটা বাজারে গাড়ি রেখে খানিকটা কাদা পানি মাড়িয়ে পৌঁছে যাই সাগরের উত্তাল জলরাশির ধারে! ওয়াও! ওয়াও! প্রথম দর্শনেই চোখ জুড়িয়ে যায়। অপরূপ সব দৃশ্য, ছলাৎ ছলাৎ আছড়িয়ে পড়া ঢেউ আর ঝির ঝির বাতাস মন ছুয়ে যাবে প্রেয়সীর পানে। পুরো মুরাদপুর সৈকতজুড়ে কচি ঘাসের বিস্তীর্ণ মাঠ, অবারিত জলরাশি, দৃষ্টির সিমানায় সবুজ পাহাড়, আহ! সে এক অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি। গলা ছেড়ে তখন গাইতে ইচ্ছে করবেÑ ওই দূর পাহাড়ের ধারে/ দিগন্তেরই কাছে / নিঃস্বঙ্গ একটি মেয়ে / গাইছে আপন সুরে / আপন সুরে। প্রকৃতি যেন সব উজাড় করে মেলে ধরেছে এই মুরাদপুর সৈকতে। ইচ্ছে করলে নামমাত্র খরচে বোট দিয়ে ঘোরা যাবে সমুদ্রের অথৈই জলে। চমৎকার সূর্যাস্ত।
ঢেউয়ে গড়িয়ে আসা নোনা জলে যখন ভিঁজবে, পা তখন মনে হবে, কী দেখি নাই আমি এতটা বছর। অথচ এর পাশ দিয়েই গেছি কত শতবার। উচ্ছ্বাস যখন চরমে তখনি সূর্যমামা সেদিনের মতো লাল আভা ছড়িয়ে টুপ করে ডুব দিলো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, আমরাও ফিরতি পথ ধরি তবে হেঁটে নয়, বোট দিয়ে। সত্যি বলতে কি, যদি বোটে না ফিরতাম, তাহলে ভ্রমণের অপূর্ণতাই রয়ে যেত। সৈকত থেকে যখন তীরে ফিরছি তখন মনে হলো যেন সোয়াম্প ফরেস্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। সে এক অভূতপূব দৃশ্য ভিন্নরকম শিহরণ। জলমগ্ন গাছের ফাঁক গলে অর্ধচন্দ্রের আলোতে বোট যতই এগিয়ে যায়, ততই যেন মনে হয় এই বাংলার রূপ আমি তো এখনো কিছুই দেখিনি! সৈকত পেছনে ফেলে যখন সামনে এগোতে থাকবেন, তখন এক অন্যরকম টানে পিছু ফিরে তাকাবেন। মনে হবে কেউ হয়তো গেয়ে উঠছে ‘আরো কিছুক্ষণ কী রবে বন্ধু/আরো কিছু কথা কী হবে/বলবে কী শুধু ভালোবাসি তোমায়। হ্যাঁ, ভালোবাসি বলেই তো বারবার তোমার পরশ খুঁজে বেড়াই।

কিভাবে যাবেন : বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে ঢাকা থেকে চট্টগাম। চট্টগ্রাম যাওয়ার আগেই সিতাকুণ্ড নেমে যাবেন। সুবিধা হবে নিজস্ব গাড়ি বা রেন্ট-এ কার নিয়ে গেলে।

থাকবেন কোথায় : যারা পরিবারের বিভিন্ন বয়সের সদস্য নিয়ে যাবেন, তারা দুই দিনের সময় নিয়ে আগেই চট্টগাম শহরের কোনো হেটেলে রুম বুকিং দিয়ে যাবেন। কারণ সিতাকুণ্ডে ভালো মানের কোনো আবাসিক হোটেল নেই। আর যারা শুধুই বন্ধুমহল নিয়ে যাবেন, তারা আগের দিন রাতে রওনা দিয়ে পরের দিন ঘুরে, সন্ধার পরই ফিরতে পারবেন।

আরো কি কি দেখবেন : নয়দুয়ারী উজিলা পাহাড়, কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট ও মহামায়া লেক।

ছবি : দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ ও ওমর ফারুক


আরো সংবাদ



premium cement