১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তেলের তেলেসমাতি

-


নারকেল তেলের গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না। এটি যেমন ত্বকের জন্য ভালো, এটি চুলের জন্যও দারুণ উপকারী। এই তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। কারণ এতে আছে ন্যাচারাল ফ্যাট। এই ফ্যাটি এসিডে রয়েছে লিনোলেইক এসিড যা একনে-প্রোন স্কিনের জন্য দারুণ কার্যকরী এবং এতে আরো রয়েছে ৫০ শতাংশ লোরিক এসিড যা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে, ত্বক শুষ্ক হতে দেয় না।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, নারিকেলের ভেতরের শাঁস থেকে তৈরি করা এই তেলে রয়েছে এন্টি-ইনফ্লেমেটোরি এবং এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ না ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, একসাথে ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখে। চলুন আজ বিস্তারিতভাবে জেনে নেই নারকেল তেলের গুণাগুণ ও নারকেল তেলের কিছু অজানা ব্যবহার।
চুলের ডিপ কন্ডিশনিং
বেশির ভাগ কন্ডিশনারেই আছে নারকেল তেল কারণ এটি খুব সহজেই চুলের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। নারকেল তেল চুলের ভেতরের প্রোটিনের সুরক্ষা করে। চুল থেকে প্রোটিন লস হওয়া মানে চুল শেষ পর্যন্ত দুর্বল এবং অস্বাস্থ্যকর হয়ে যাওয়া। আর এটা থেকেই চুলকে রক্ষা করে নারকেল তেল। চুল ডিপ কন্ডিশনিং করার জন্য রাতে সারা মাথার তালুতে ও সারা চুলে নারকেল তেল লাগিয়ে সারা রাত রাখতে হবে। প্রয়োজনে বালিশে একটি তোয়ালে বিছিয়ে অথবা মাথায় একটি শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে ঘুমাতে হবে। সকালবেলা হালকা কোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুই থেকে দিনবার এভাবে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। চুল হবে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যবান।
প্রাণহীন রুক্ষ চুলের জন্য
নিষ্প্রাণ চুলে তাৎক্ষণিকভাবে ঝলমলে ভাব আনতে আঙুলের ডগায় নারকেল তেল লাগিয়ে সারা চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে নিন। এতে করে রুক্ষ চুল ঝলমলে দেখাবে ও চুল শক্তিশালী হবে। তেল ব্যবহার করতে না চাইলে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন নারকেল তেলসমৃদ্ধ হেয়ার সেরাম।
খুশকি দূর করতে
চুলের রুক্ষতা ও খুশকি দূর করতে নারকেলে তেলের জুড়ি নেই। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান যা খুশকির জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া দূর করে। নারকেলের তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে সামান্য গরম করে নিন, বেশি গরম করবেন না। হালকা গরম করে মাথার তালুতে লাগিয়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন ১ ঘণ্টা। তার পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন চুল। সপ্তাহে অন্তত একদিন এভাবে চুলে তেল লাগান, অচিরেই খুশকি দূর হবে।
দূষণ থেকে মুক্তি
প্রতিদিন তো চুল ধোয়া সম্ভব নাও হতে পারে সবার জন্য। অনেকেই হয়তো জানেন না, চুলে তেল দিলে দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তেল চুলের উপরিভাগে একটি পরত বা লেয়ার তৈরি করে। এতে ধুলা, ময়লা, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চুল নিরাপদে রাখা যায়। ফলে চুলের সৌন্দর্য বজায় থাকে।
চুলের আগা ফাটা রোধে নারকেল তেল
অনেকেই চুলের আগা ফেটে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। দুই হাতের তালুতে একটু নারকেল তেল নিয়ে চুলের নিচের অংশে অর্থাৎ আগায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ধীরে ধীরে চুল ফাটা সমস্যা দূর হবে আর বাড়তি হিসেবে আপনি পাবেন ঝলমলে চুল।
চেহারার এক্সফলিয়েটর হিসেবে নারকেল তেল
মুখের মৃত কোষ তুলে নতুন কোষ তৈরি করতে এক্সফলিয়েটরের ভূমিকা অপরিসীম। নারকেল তেলের সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে মুখের ওপর লাগানো যেতে পারে। এটি খুব ভালো স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। তবে সেনসেটিভ স্কিনে বেকিং সোডার ব্যবহার না করে নারকেল তেলের সাথে চিনিও ব্যবহার করতে পারেন।
বডি স্ক্রাব হিসেবে নারকেল তেল
কোমল ত্বক পেতে বা ত্বকের কালো দাগ দূর করতে, সারা শরীরের ত্বক এক্সফলিয়েট করা অত্যন্ত জরুরি। আধাকাপ সি সল্ট অথবা চিনির সাথে সমপরিমাণ নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি পুরো শরীরে আলতো করে ঘষে ঘষে লাগান ১০ মিনিট। এতে আপনার শরীরের ডেড সেল বা মৃত কোষগুলো ঝরে পড়বে। এভাবে সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করুন। আপনার ত্বক হবে উজ্জ্বল ও কোমল
শুষ্ক ত্বকের যতেœ নারকেল তেল
যাদের ত্বক খুব বেশি শুষ্ক তাদের চামড়া গোসল বা হাতমুখ ধোয়ার পর শুকিয়ে যায়। শীতকালে এ সমস্যা বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে গোসলের পানির সাথে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যাবে।
মুখের ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার
ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে সব ময়লা দূর করে তার পর মুখে নারকেল তেল মাখতে হবে। নারকেল তেল ব্যবহারে ত্বক আরাম পায়, এনজাইমকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং লাল ছোপ ছোপ দাগ ও চুলকানি থেকে রক্ষা করে।
বডি অয়েল হিসেবে নারকেল তেল
নারকেল তেল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। গোসলের পর সামান্য একটু নারকেল তেল বডি অয়েল হিসেবে ব্যবহার করুন। আপনার সারা শরীরের ত্বকের চকচকে ভাব বেড়ে যাবে। ত্বক হবে মসৃণ ও কোমল।
আইক্রিম হিসেবে নারকেল তেল
রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তুলায় করে নারকেল তেল নিয়ে চোখের ওপর লাগান। আঙুল দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে নিন। এই উপায়টি দারুণ কাজে দেয় চোখের চার পাশের বলিরেখা দূর করতে। এ ছাড়াও নারকেল তেল চোখের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর হয়। হাতের কাছে খাঁটি নারকেল তেল থাকলে দামি আইক্রিম কিনে টাকা নষ্ট করার প্রয়োজন পড়বে না।
বলিরেখা দূর করতে
নারকেল তেলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা সব ধরনের মুক্ত মৌলকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং বলিরেখাকে বাধা দেয়। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে নিজস্ব একটা আর্দ্রতা তৈরি হয়, যা ত্বককে নরম রাখে। চেহারায় বলিরেখার ছাপ পড়তে শুরু করলে নারকেল তেল লাগিয়ে আঙুলের সাহায্যে পুরো মুখ ও গলায় ম্যাসাজ করুন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে অন্তত একবার এটি করুন। দেখবেন দুই সপ্তাহের মধ্যে মুখের বলিরেখা অর্থাৎ বয়সের ছাপ কমে যাবে।
পা ফাটা রোধে নারকেল তেল
শীতকালে পা ফাটা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে নারকেল তেল খুব ভালো কাজে দেয়। প্রথমে পা দুটো হালকা গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এবার পানি থেকে পা উঠিয়ে পিউমিক স্টোন বা ঝামা দিয়ে ফাটা অংশ ঘষে নিন। তারপর পা মুছে নিন। এবার দুই হাতে নারকেল তেল নিয়ে পায়ের পাতা খুব ভালো করে ম্যাসাজ করুন পাঁচ মিনিট। সপ্তাহে অন্তত একবার এভাবে পায়ে নারকেল তেল লাগান। পা ফাটা সমস্যা কমে যাবে। আর পুনরায় পা ফাটা রোধে রোজ রাতে ঘুমানোর আগে পায়ে নারকেল তেল লাগিয়ে ঘুমাবেন।
মেকআপ রিমুভার
মেকআপ তুলতেও নারকেল তেল খুব কার্যকর। বর্তমান সময়ে সবাই ওয়াটার প্রুফ মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। যাতে করে অনেক সময় মুখে মেকআপ রাখা যায়। কোনো প্রকার টাচ-আপ করারও প্রয়োজন পড়ে না। এই মেকআপ পরে পরিষ্কার করতেও অনেক কষ্ট হয়।
তাই মেকআপ তোলার জন্য প্রথমে ত্বকে নারকেল তেল লাগিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করুন। মেকআপ সব একা একাই উঠে আসবে। আলতো করে টিস্যু পেপার দিয়ে তেল ও মেকআপ শুষে নিয়ে আরেকবার নারকেল তেল লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। আরেকবার টিস্যু দিয়ে তেলটুকু তুলে ফেলুন। এবার পছন্দমতো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণ দূর করতে নারকেল তেল
নারকেল তেলে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপকরণ রয়েছে, যা ত্বকের ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। নারকেল তেলের ফ্যাটি এসিড ব্রণের ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে পারে। তাই ত্বকে ব্রণের জীবাণু আক্রমণ করতে পারে না।
ওজন কমাতে নারকেল তেল
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলা ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুই টেবিল চামচ করে নারকেল তেল খান তাদের তলপেটের চর্বি কমে। মেটাবলিজম বাড়ায়। যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।


খাঁটি নারকেল তেল চেনার উপায়
১. নারকেল তেলের সব থেকে বড় গুণ হচ্ছে এটি ঠাণ্ডা হলে জমে যায়। নারকেল তেল খাঁটি কি না তা বোঝার জন্য ৩০ মিনিট ফ্রিজে জমতে দিন। তেল যদি পুরোপুরি জমে গিয়ে থাকে, তা হলে বুঝবেন আপনার তেল একদম খাঁটি। খাঁটি নারকেল তেল একদম পানির কালার হয়ে থাকে।
২. নারকেল তেল যদি হলুদ বা ধূসর রঙের হয়ে থাকে তা হলে বুঝতে হবে এতে কেমিক্যাল মেশানো আছে। এসব ভেজাল তেল ব্যবহার করার কারণে চুল পড়ে যায় ও চুলে ময়লা জমে খুশকি হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement