২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ত্বক ও চুলের যতেœ ডিম

-

আপনি যদি কখনো ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকেন যে প্রাকৃতিক
উপাদান দিয়ে ত্বক ও চুলের যতœ কিভাবে নেয়া যায়, ডিম দিয়ে রূপচর্চার কথা শুনেছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাজারে পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন পণ্যের উপাদান খেয়াল করলে সেখানেও দেখা যায় ডিমের কথা উল্লেখ আছে। চীনের প্রাচীন রূপচর্চার উপাদান আজো ব্যবহার হয়। এমনকি জানা যায় যে দেশী-বিদেশী জনপ্রিয় সেলিব্রেটিদের রূপচর্চার প্রিয় উপাদান ডিম। ঠিক কিভাবে ব্যবহার করলে ডিম আপনার ত্বক ও চুল সুন্দর করবে?
লিখেছেন কাজী তানজিলা মেহনাজ
চুলের জন্য ডিমের উপকারিতা
হ ডিমের হাই প্রোটিন চুলের ফলিকল স্ট্রেইট করে।
হ ডিমের কুসুমে আছে ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’ ও ‘ই’। যার ফলে ডিমের কুসুম হলো একটি পারফেক্ট কন্ডিশনার।
হ ডিমে থাকা ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ই’ চুলকে রুক্ষ হওয়া থেকে বাঁচায়।
হ ডিমের ভিটামিন ‘বি’ মাথার তালুর ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়।
হ ডিমে থাকা ফ্যাট চুলকে ডিপ ময়েশ্চারাইজিং করে।
হ ডিমের ফ্যাটি এসিড খুশকি দূর করতে ও চুলপড়া বন্ধ করতে সহায়ক।
হ ডিমে থাকা এনজাইম মাথার তালু স্বাস্থ্যবান রাখে।
হ স্বাস্থ্যবান চুল পেতে হলে প্রতিদিন একটি করে ডিম খান। ডিমের কুসুম বাদ দেয়া চলবে না। ডিমে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, সালফার, জিঙ্ক, আয়রন, সোডিয়াম আরো কত কী! চুলের স্বাস্থ্যের জন্য এসব উপকরণ খুবই জরুরি।


ত্বকের জন্য ডিমের উপকারিতা
হ শুষ্ক ত্বকে প্রাণ ফিরিয়ে আনে ডিমের ফেসপ্যাক, এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে।
হ ডিমে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ত্বককে জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ ব্রণের প্রকোপ কমায়।
হ ব্ল্যাকহেডস সমস্যার সমাধানেও ডিমের প্যাক খুবই কার্যকর।
হ বলিরেখা দূর করতে ডিমের মতো কার্যকর উপাদান খুব কমই আছে।
হ ত্বকের দাগ দূর করতে ডিমের কুসুম একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। দাগ দূর করার পাশাপাশি এটি ত্বককে নরম ও কোমল করে।

চুলের জন্য ডিমের প্যাক
বাজার ভরে গেছে বিভিন্ন পণ্য দিয়ে, যেগুলো দাবি করে যে আপনার চুলপড়া বন্ধ করবে, চুল ঝলমলে করবে বা চুলের গ্রোথ বাড়াবে। এর মাঝেও অনেকে আছেন, যারা প্রাকৃতিক উপাদানেই ভরসা করেন। চুলের যতেœ জনপ্রিয় উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম কাঁচা ডিম। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ থাকে, যা চুলের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই চুলের হারানো স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে বা ঝলমলে চুল পেতে ডিমের বিকল্প নেই। এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়াতে নেই কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং বেশ সাশ্রয়ীও।
হ নরম, মসৃণ ও সিল্কি চুলের জন্য শুধু কাঁচা ডিমই খুব ভালো প্যাক হতে পারে। প্রথমে চুল ভিজিয়ে নিন। চুলের আকার অনুযায়ী একটি বা দু’টি ডিম গুলে পুরো চুলে লাগান। তালু থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগান। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন আর পান নরম ও মসৃণ চুল।
হ নরম, মসৃণ ও সিল্কি চুলের জন্য তিনটি ডিমের কুসুমের সাথে তিন টেবিল চামচ অলিভঅয়েল মিশিয়ে নিন। ভালোভাবে বিট করুন। তারপর এতে আধা কাপ হালকা গরম পানি মিশিয়ে নিন। ভেজা চুলে লাগান। ১০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
হ নরম, মসৃণ ও সিল্কি চুলের জন্য আরেকটি প্যাক বানাতে দু’টি ডিম, এক কাপ টকদই ও একটি লেবুর খোসা একসাথে ব্লেন্ড করে প্যাক বানিয়ে নিন। পুরো চুলে প্যাকটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
হ চুলপড়া রোধ করতে দু’টি ডিমের কুসুমের সাথে এক টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল মেশান। এ প্যাকটি মাথার তালুতে হালকা ঘষে ঘষে লাগান। আধা ঘণ্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে হলে সপ্তাহে একবার এ প্যাকটি লাগাতে হবে।
হ চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য দু’টি ডিম, এক কাপ টকদই, এক টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ লেবুর রস একসাথে ভালোভাবে মেশান। চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
হ চুলের ড্যামেজ সারাতে এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ মেয়নিজ, ১/৩ কাপ আমন্ড অয়েল, দু’টি ডিম একসাথে ব্লেন্ড করে পেস্ট করে নিন। পুরো চুলে লাগিয়ে একটি শাওয়ার ক্যাপ বা তোয়ালে দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
হ খুশকি সারাতে ডিমের কুসুম খুবই কার্যকরী। দু’টি ডিমের কুসুম ফেটে ভালোভাবে মাথায় লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের জন্য ডিমের প্যাক
হ ব্ল্যাকহেডস দূর করতে এ প্যাকটি খুবই উপকারী। প্রথমে মুখে গরম পানির ভাপ নিন। তারপর একটি ডিমের সাদা অংশ অনেকক্ষণ বিট করুন, যেন ফোমের মতো প্যাক তৈরি হয়। এটা মুখে অল্প অল্প করে লাগিয়ে নিন। প্যাকের ওপর টিস্যু পেপার বিছিয়ে দিন সারা মুখে, যেন ডিমকে আঠা হিসেবে ব্যবহার করে টিস্যু লাগাচ্ছেন। প্রয়োজনে কয়েক লেয়ার টিস্যু লাগান মুখে। এবার শুকাতে দিন। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে টিস্যু ধরে নিচ থেকে ওপর দিকে টেনে তুলুন। ভালোভাবে মুখ ধুয়ে বরফ ঘষে নিন।
হ ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে ডিম ও লেবুর এ প্যাকটির জুড়ি নেই। একটি ডিমের সাদা অংশ, সাথে এক চা চামচ লেবুর রস মেশান। একসাথে অনেকক্ষণ বিট করুন, যেন ফোমের মতো প্যাক তৈরি হয়। এটা মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস ত্বকের মৃত কোষগুলো আলগা করে, এই আলগা হয়ে যাওয়া কোষ ডিমের সাথে আটকে যায়, মুখ ধোয়ার সময় এই মৃত কোষগুলো দূর হয়ে যায়।
হ বলিরেখা প্রতিরোধ করার জন্য একটি ডিমের সাদা অংশ, গাজরের পেস্ট দুই চা চামচ ও দুধ দুই চা চামচ একসাথে মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এ প্যাকটি লাগান।
হ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য ডিমের সাদা অংশ, দুই টেবিল চামচ ময়দা, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন। যাদের ত্বক শুষ্ক, তারা লেবুর রসের বদলে মধু ব্যবহার করবেন। এটি শুধু ত্বক ফর্সা করে না, ব্রণ এবং ব্রণের দাগও দূর করে।
হ শরীরের বিভিন্ন অংশও, যেমন ঘাড়ের কালো দাগ দূর করে ত্বককে সুন্দর করতে বেসন ও ডিমের সাদা অংশ একসাথে মিশিয়ে আলতোভাবে ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে একটি ভেজা রুমাল দিয়ে ঘষে তুলে তারপর পানি দিয়ে ধুতে হবে।
খেয়াল রাখবেন :
হ চুলে কাঁচা ডিমের প্যাক লাগালে কখনো গরম পানি দিয়ে ধোবেন না। এতে বাজে গন্ধ হবে চুলে।
হ চুল সিল্কি বা নরম করার প্যাক লাগালে মাথার তালুর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন চুলের ডগার দিকে।
হ চুলে ডিমের প্যাক লাগালে তা কখনো ৩০ মিনিটের বেশি চুলে রাখবেন না। ডিমের প্রোটিন চুলের জন্য উপকারী। তবে বেশিক্ষণ রাখলে সেটা চুলের ক্ষতিও করতে সক্ষম।
হ চুলে ডিমের প্যাক সপ্তাহে একবারের বেশি লাগালে তা চুলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
হ চুলে ডিমের প্যাক লাগালে অবশ্যই শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুতে হবে।
হ কখনোই কাঁচা ডিম খাবেন না। কাঁচা ডিম খেলে শরীরে বায়োটিন ডেফিসিয়েন্সি দেখা দেয়, যার ফলে চুলপড়া বৃদ্ধি পায়।
হ ত্বকে ডিমের প্যাক লাগানোর আগে অবশ্যই ভালোভাবে মুখ ধুয়ে মুছে নিতে হবে।
হ ফেসপ্যাক লাগানোর পর শুকিয়ে এলে তা প্রথমে পানি দিয়ে এবং পরে ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে।
হ ত্বকে কোনো ধরনের এলার্জি থাকলে ডিমের প্যাক লাগানোর আগে হাতের কব্জিতে অল্প একটু লাগিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে।


মডেল : সাফা কবির, ছবি :মহসিন আহমেদ কাওসার

 


আরো সংবাদ



premium cement