২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হুট করেই তিতাসের তীরে

-


হুট হাট, দে-ছুট! যখন যেমন তখন তেমন ? আশ্চর্য কিংবা প্রশ্নের উদ্রেক হওয়ার কোনো কারণ নেই। মন চাইল আর ওমনি ছুটলাম তিতাস নদীর তীরে। বাইক চলছে সিলেট মহাসড়কে। চায়ের তৃষ্ণা পেতেই পথের পাশে চায়ের স্টলে ব্রেক। গভীর রাতে সুমসাম নিরিবিলি পথে হঠাৎ বহু চাকার লরিগুলো যেন সাক্ষাৎ যমদূতের মতো ভোঁ করে এসে শাঁ করে পাশ দিয়ে চলে যায়। ব্যাপারটা পুরাই ভিন্ন আঙ্গিকেরÑ লাইভ ফিলিংসে ভরপুর। ভৈরব পৌঁছার ঠিক ১০-১২ মিনিট আগে ঘুটঘুটে অন্ধকারÑ আশপাশে জনমানবের বসতি নেই, এমন ভূতুড়ে পরিবেশে পেছনের চাকা পাংচার, আহ্ কী মজা। অতঃপর বাইক চড়ল পিকআপের উপরÑ ওয়াও! ভৈরব গিয়ে দেখি ভলকানাইজিংয়ের দোকান সব বন্ধ। দুর্যয়ের মোড়ে এক চা দোকানির কাছে বাইক বুঝিয়ে দিয়ে পাশেই আবাসিক হোটেলে গিয়ে উঠি।
সকাল সকাল চাকা মেরামত, ডিম-পরোটা দিয়ে ভরপুর নাশতা। অতঃপর ডাবের পানি পানে দেহে ফুয়েল নিয়ে আবারো ছুটছি নাসিরনগর। সৈয়দ নজরুল ইসলাম নামে দৃষ্টিনন্দন সেতুতে কিছুক্ষণ ফটো শুট।
সরাইল পার হতেই বিস্তীর্ণ হাওড়ের মধ্যে পিচঢালা পথÑ ওসাম! প্রথমে ঢুঁ মারি গৌকর্ণ উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদার বাড়ি।
অযতœ-অবহেলায় জীর্ণশীর্র্ণ, দায়িত্বশীল কাউকে না পাওয়াতে বাড়িটি সম্পর্কে বিস্তর ধারণা নেয়া গেল না। ওদিকে জুমার নামাজের তাড়া, তাই এগিয়ে যাই তিতাস নদীর পারে হরিপুরের দিকে। নামাজ আদায় করে জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরীর বাড়িতে ঢুকি। নয়নাভিরাম তিতাস নদীর তীর ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছিল বাড়ির স্থাপনা। দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীই বলে দেয়Ñ জমিদার খুব শৌখিন ছিলেন। ত্রিশ শতকে ২০ একর নিয়ে জায়গা গড়া দুই তলা বাড়টি মোট ২০০ কক্ষবিশিষ্ট। এখনো বাড়িটি হরিপুর গ্রামে শীর উঁচু করে দাঁড়িয়ে জানান দেয় জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরীর আভিজাত্য। জমিদারের বংশধরদের কেউ আর এখানে থাকেন না। এখন বেশ কিছু হিন্দু পরিবারের আবাসস্থল। বাড়িটি সংস্কারের অভাবে দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহম্মেদের শেষ ছবি ঘেটু পুত্র কমলা ছায়াছবির চিত্রায়ন হয়েছিল। সেবারই শুটের প্রয়োজনে কিছুটা চুনকাম করানো হয়েছিল। দৈনন্দীন জীবনে শেখার অন্যতম মাধ্যম হলো ভ্রমণ, বিশেষ করে রাজা, নবাব, জমিদারদের মহলে গিয়ে একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলেই নিজের ভেতরের পশুত্বকে নির্মূল করা যাবে। কিসের এত বাহাদুরি, হিংসা, বিদ্বেষ, প্রতিপত্তি কিছুই তো রবে না, যা থাকে তা শুধু যুগ-যুগান্তর সৎ ও অপকর্মের আলোচনা-সমালোচনা। ইতিহাস থেকে মানুষ শিক্ষা নিলে সমাজ হবে আরো সুন্দর আরো বেশি গতিময়। বেশ কিছুটা সময় বাড়িটির ভেতরে-বাইরে ঘুরে ঘাটলা বাঁধা তিতাসের পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করে শরীরের দাবদাহ কমিয়ে নেই।
বেলা প্রায় ৩টা, পেটে এবার টান পড়েছে, যাই হরিপুর বাজারে। খাবার শেষে খাঁটি দুধের দই চেখে যাই এবার সরাইলের দক্ষিণ আরিফাইল গ্রামে। এইখানে মোগল আমলে নির্মিত একটি দর্শনীয় মসজিদ রয়েছে। যার স্থাপত্যকাল ১৬৬২ খ্রিস্টাব্দ। মসজিদটির আয়তন ৭র্০-২র্০র্ দেয়ালের পুরুত্ব র্৫-র্৬র্ । ৩৫০ বছর আগে নির্মিত মসজিদটি দেখতে অনেকটাই তাজমহলের মতো। স্থানীয়রা আঞ্চলিক ভাষায় আইড়ল মসজিদ নামে ডাকেন। আসরের কসর নামাজ আদায় করে কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়াই মসজিদ লাগোয়া দীঘির সামনে। বিশাল আয়তনের দীঘি। সব মিলিয়ে মনে রাখার মতো ভ্রমণের বেশ কিছু অসাধারণ সুখস্মৃতি নিয়ে আপন নীড়ে ফেরার পথ ধরি।

যোগাযোগ : বিভিন্ন কোম্পানির বাস ও ট্রেন দুভাবেই যাওয়া যাবে, কমলাপুর থেকে ট্রেনে বা বাসে। এ ছাড়া মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকেও বাসে যাওয়া যাবে, ভাড়া সরাইলের আবদুুল কুদ্দুস মাখন [ বিশ্ব রোড ] চত্বর পর্যন্ত বাসে ২০০- ৩০০ টাকা পর্যন্ত। নাসিরনগর ও সরাইল ভ্রমণে চত্বরে নেমে সিএনজিতে যেতে হবে, ভাড়া নেবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার জন্য ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা। সবচেয়ে সুবিধা হবে নিজস্ব গাড়ি বা রিজার্ভ মাইক্রো নিয়ে গেলে, আর গণপরিবহনে গেলে নামতে হবে বিশ্ব রোড [মাখন] চত্বরে।

থাকা-খাওয়া : দিনে দিনেই ঘুরে আসা সম্ভব। তবে রাতে থাকতে চাইলে শহরের কুমারশীল মোড়, সড়কবাজার ও নিউ সিনেমা রোডে বেশ কিছু মানসম্পন্নসহ কিছু সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলও রয়েছে এবং খাবারের জন্য ভালো মানের রেস্টুরেন্টও পাবেন। তবে আর যাই খান না কেনÑ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিখ্যাত স্বাদে ভরা ছানামুখী খেতে কিন্তু ভুল যেন না হয়।
ছবি : লেখক


আরো সংবাদ



premium cement