২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শীত ফ্যাশনে শাল : রঙের ঝলক

-

উত্তরের জানালাটা খুলতেই যেন এক চিলতে হিমেল হাওয়া দোলা দিয়ে যাচ্ছে ঘরের কোণে। ভোরের কুয়াশার চাদর মোড়া প্রকৃতি, গাছের পাতাঝরা আর মিষ্টি রোদ জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীত ঋতুতে আমাদের জীবন ধারায়ও কিছু পরিবর্তন আসে। বিশেষ করে পোশাক-পরিচ্ছদে। শীত নিবারণের জন্য প্রয়োজন হয় শীতের পোশাকের। সোয়েটার, জ্যাকেট, ব্লেজার, শাল প্রভৃতি শীতবস্ত্র হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। শীতবস্ত্র হিসেবে শালের প্রচলন বেশ পুরনো। সোয়েটার বা জ্যাকেট যাই থাকুক না কেন, একটি শাল না হলে শীতকালটা ঠিক জমে না।
শালের ফ্যাশন ট্রেন্ডেও আসে নতুনত্ব। দেশী-বিদেশী সব রকম শাল বেশ জনপ্রিয়। শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, জিন্স, ফতুয়া ও স্কার্টসহ সব কিছুর সাথে মানিয়ে যায় শাল। বিভিন্ন রঙ ও নকশা সব বয়সী নারীদের আকৃষ্ট করে। পোশাকের সাথে ম্যাচিং করে নেয়াও যায়। কর্মজীবী নারী, স্কুল-কলেজপড়–য়া কিশোরী-তরুণী, এমনকি গৃহিণীরাও হাল ফ্যাশনের এ শালগুলো ব্যবহার করছেন। আগে শাল ছিল দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বেশ বড়। যা এখন কমে এসেছে। বেশি শীতে তরুণ-তরুণীরা যেমন মোটা শাল গায়ে জড়াচ্ছে, তেমনি হালকা শীতে বেছে নিচ্ছে পাতলা আর খানিকটা ছোট আকারের শাল। তবে এক রঙের শালের সাথে উজ্জ্বল রঙের বিভিন্ন ডিজাইন করা শালও চলে বেশ ভালো, যা সব ধরনের পোশাকের সাথে মানানসই। শীত কম হলে আর শীতের শুরুতেই হালকা-পাতলা শালের কদর বেড়ে যায় সবার কাছে।
নারী-পুরুষ উভয়ের ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে এসব শাল। বিদেশী শালও বাজারে রয়েছে প্রচুর। তবে ঢাকা শহরের শীতের সাথে তাল মিলিয়ে গত বছর দু-তিন বছর ধরে হালকা বা পাতলা শাল ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে বেশ ভালোভাবেই। হালকা শীতে এই শালগুলো যেমন আরাম দেয়, তেমনি বহন করতেও সুবিধা। অনেকে দোপাট্টার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন নানা রঙ আর ডিজাইনে তৈরি এসব শাল। ফ্যাশন হাউজগুলো পাতলা শালের জনপ্রিয়তার প্রতি লক্ষ রেখে তৈরি করছে শাল। তাতে থাকছে এপল্কি, ব্লক, টাই-ডাই, এমব্রয়ডারিসহ জরির কাজ। প্রতিদিনের ব্যবহারে হোক অথবা পার্টিতে মানানসই এসব শালের ফ্যাশন এককথায় অনন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শাহীন বলেন, যেনতেন কিছু একটা পরলেই তো ফ্যাশন হয় না। চাই হাল ফ্যাশনের সাথে তাল মেলাতে। শীত নিবারণ এবং ফ্যাশনের জন্য একই সাথে সবচেয়ে যুগোপযোগী হচ্ছে শাল। শীতের শুরুতে সোয়েটার বা ব্লেজার পরার মতো ঠাণ্ডা থাকে না, তাই হালকা শীতে পাতলা শালের বিকল্প নেই। আর এ সময়ের শালগুলো বেশ ফ্যাশন্যাবল। এক রঙের পাশাপাশি, প্রিন্টের পাতলা শাল, নিচে দু’পাশে ঝুল দেয়া, কোনোটায় আবার পমপম দেয়া আবার কিছু আছে পাতলা ও খানিকটা ছোট আকারের শাল। শাড়ি, টপস, জিন্স সব পোশাকের সাথেই এগুলো মানানসই। তবে কয়েকটি আবার কামিজের সাথে নির্দ্বিধায় পরা যাবে। যেমন- ওড়না টাইপ কাশ্মিরি শাল, যা দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ছোট এক রঙা এবং সাথে মোটা নকশা করা পাড়। হালকা রঙের পাশাপাশি গাঢ় রঙের শালের সমারোহ দেখা যাচ্ছে মার্কেটগুলোতে। মেরুন, সিগ্রিন, নীল, লাল, বেগুনি, সাদাকালো এবং বিভিন্ন শেডের শাল। ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা হয় এ শালগুলো।
দেশীয় শালের মধ্যে খাদি পছন্দ করেন অনেকেই। নানা ধরনের কাপড়ে শাল তৈরি হচ্ছে। তবে কুমিল্লা ও টাঙ্গাইলের শালই বেশি জনপ্রিয়। খাদি কাপড়ের দোকানদার জানান, কুমিল্লার খাদির শাল বেশি জনপ্রিয়। বিক্রিও বেশি হয়। খাদি ছাড়াও তাঁতের শাল, উলের শাল, পশমি চাদর বা শাল টাঙ্গাইলের শাল বাজারে বেশ জনপ্রিয়। দাম তুলনামূলকভাবে কম বলে এ শালগুলো সব শ্রেণীর মানুষ কিনতে পারে। দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো এরই মধ্যে নানা রকম শালের কালেকশনে সাজিয়েছে তাদের শীত সমাহার। শালের নকশায় উঠে আসছে দেশীয় ঐতিহ্য। কাপড়ের মধ্যে গ্রামীণ খাদিও ব্যবহার হচ্ছে, আর পছন্দ করছে অনেকেই। এ ছাড়াও হালকা সুতা ও মোটা সুতার তৈরি লিলেন কাপড়ের ওপর অ্যাপ্লিক, মেশিন এম্ব্রয়ডারি, লেসের প্যাচওয়ার্ক ও উইভিংয়ের ডিজাইন করা হচ্ছে শালগুলোতে। বাজারে প্লেন ও গর্জিয়াস দুই ধরনেরই কালেকশন আছে। নানা রকম রঙের ওপর তৈরি শালগুলো ফ্যাশন্যাবল তরুণীদের আকৃষ্ট করে। কম শীতে এ শালগুলোর বেশ কদর। ফ্যাশন হাউজগুলোও তাদের নিজেদের তৈরি শালে সাজিয়েছে তাদের শোরুমগুলো। ডিজাইন ও কাপড়ের ভিন্নতায় দামও আলাদা।
দামটা যেমন : বাজারে নানা ধরনের শালের ছড়াছড়ি। আর তাই দামটাও হয় বিভিন্ন রকম শাল ও মার্কেটের ভিন্নতায়। শীতের শুরুতেই দাম এক রকম, আর পরবর্তী সময়ে শীত বাড়ার সাথে দামও বেড়ে যায়। ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকৃত শালগুলোর দামÑ চায়না শাল ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা। কাশ্মিরি পাতলা শাল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। উচ্চতায় ও প্রস্থে ছোট কাশ্মিরি শাল ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। কুমিল্লার খাদি ও টাঙ্গাইলের শাল ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা। অভিজাত শপিং মলগুলোতে শাল কিনতে পারেন ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে। ফ্যাশন হাউজগুলোতেও ভিন্ন দামে শালগুলো পাওয়া যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement