২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আমাদের অগ্রজ বিশেষ আয়োজন

-

রাশিদুল হাসান একজন প্রকৃতিপ্রেমী। বন, পাহাড়, সমুদ্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন যৌবনকালের দীর্ঘ সময়। এখন তার বয়স পঁচাত্তর। ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভ করার মতো শারীরিক অবস্থা আর নেই। তাই তিনি তার বাড়ির মধ্যেই প্রকৃতিকে সাজিয়ে নিয়েছেন নিজের মতো করে। বাড়ির ছাদে বাগান করেছেন। সেখানে রয়েছে নানা ধরনের ফল আর ফুলের গাছ। পাশেই রয়েছে একটি পাখির ঘর। বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৭০-৮০টি পাখি আছে তার। সেই পাখিগুলোর উড়োউড়ি আর কিচিরমিচির শব্দে মুখর থাকে সারা বাড়ি। জীবনের এ সময়ে এসে বাগান আর পাখিদের নিয়ে দিনগুলো তার ভালোই কাটে। দুই সন্তান, নাতি-নাতনী আর স্ত্রীকে ঘিরে রয়েছে তার পারিবারিক জীবন। অন্যদিকে, ষাটোর্ধ্ব বয়সী আব্দুল মজিদ। জীবনের চাকা সচল রাখতে আজো তাকে কাজ করতে হয়। কখনো রিকশা চালান, কখনো ফেরি করে বেড়ান। সারা জীবনে এতটা সঞ্চয় করতে পারেননি যে, এখন আরাম করবেন। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া দুর্বল শরীর নিয়ে রোজগারের চেষ্টা তাকে এখনো করে যেতে হয়। দুমুঠো অন্ন জোগানই বড় চেষ্টা। অসুখ-বিসুখে চিকিৎসা করাতে পারেন না। কষ্ট করেই জীবনটা প্রায় কেটে গেল।
সবার জীবনে বার্ধক্য এক রকম হয় না। কারো জীবনে অবসরের এ সময়টা খুবই আনন্দের। পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিন কাটে। অন্যদিকে, অনেকে জীবন সায়াহ্নের এ সময়ে এসে হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। পরিবার-পরিজন হয়ে যায় দূরের মানুষ। নিঃসঙ্গতা, অসুস্থতা ও অর্থকষ্টে জীবনে ভর করে বিষণœতা। অবেহেলা, অযতœ যেন নিত্যসঙ্গী।
বলা হয়, সময় কখনো থেমে থাকে না। তাই তো সময়ের সাথে বেড়ে যায় মানুষের বয়স। শৈশব-কৈশোর-যৌবন পেড়িয়ে মানুষ বার্ধক্যে এসে পৌঁছায় এক সময়। বার্ধক্য এমন একটি সময়, যখন মানুষের ছুটে চলার গতি স্থিমিত হয়ে আসে। শারীরিক শক্তির সাথে সাথে মানসিক শক্তিও কমে আসে। দৃষ্টিশক্তি হতে থাকে ক্ষীণ। ধীরে ধীরে হয়ে পড়েন পরনির্ভরশীল। জীবনযাপন করাটাই যেন খুব কষ্টকর। জীবনের এ প্রান্তে এসে মানুষ খোঁজে একটু আরাম, একটু শান্তি ও স্বস্তি।
জীবনের জটিলতায় আজ ভেঙে পড়েছে পারিবারিক বন্ধন। মানুষ এখন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে ক্রমেই। নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার সময় নেই যেন। তাইতো প্রবীণ অনেকের ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে অথবা অন্য কোথাও। কিন্তু এটা মানুষের মানবিক গুণ হতে পারে না। আমাদের সমাজে প্রবীণ যারা রয়েছেনÑ তাদের প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। শুধু পরিবারের মধ্যে নয়, সামাজিকভাবেও এ দায়িত্ব পালন করা উচিত।
এক সময় এ প্রবীণরাই রচনা করেছে আগামীর সোপান। তাদের শ্রম, মেধা, চেষ্টা আর চিন্তাশক্তিতেই এগিয়ে গেছে সমাজ-সংসার। আজ আমরা যা কিছু পাচ্ছি, এগুলো আমাদের পূর্বসূরিরাই সৃষ্টি করেছেন। সমাজ ও পরিবার উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে তাদের অসামান্য অবদান। সেই কথাগুলোই আমাদের অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে।
এ ক্ষেত্রে পরিবারের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে বয়স্ক সদস্যদের সম্মান ও সেবা করার শিক্ষা থাকা প্রয়োজন। যে বাবা-মা সন্তানদের মানুষ করেছেন, সেই সন্তানরা যদি বৃদ্ধ বাবা-মাকে অবহেলা করেÑ তাহলে এর থেকে ধিকৃত কাজ আর হয় না। শুধু বাবা-মা নয়, বরং একই সাথে অন্য বৃদ্ধ আত্মীয়দেরও একইভাবে সেবা করা ও সম্মান দেখান উচিত।
শুধু পরিবারের মধ্যে নয়, বাইরেও বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি আমাদের সম্মান দেখানো প্রয়োজন। তাদের সহযোগিতা করা উচিত। পথে-ঘাটে কত প্রবীণ আমাদের চার পাশে থাকেন। যতটা সম্ভব তাদের সহযোগিতা করতে হবে। দীর্ঘ সংগ্রাম করে তারা আজ জীবনের এই প্রান্তে পৌঁছেছেন। তাদের সীমাবদ্ধতাটুকু যদি অনুভব করা যায় তাহলেই তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারব। সেটাই আমাদের বুঝতে হবে।
বাস, ট্রেনে বৃদ্ধদের জন্য পৃথক বসার আসন থাকা প্রয়োজন। একই সাথে তাদের ভাড়ায়ও ছাড় রাখা যেতে পারে।
হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ছাড় রাখার ব্যবস্থা করা যায়। বয়স্ক ভাতা যেন সবার কাছে পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বার্ধক্য যেন কারোর জন্য অসহায়ত্বে পরিণত না হয় সেই চেষ্টাই অন্য সবার করা উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান

সকল