২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভিনগ্রহে প্রাণ খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা

ভিনগ্রহের প্রাণী দেখতে উদ্ভট হবে সেরকম ধারনাই মূলত প্রচলিত রয়েছে - বিবিসি

পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও কি আমাদের কোনো প্রতিবেশী আছে? মানুষ শত শত বছর ধরে এমন প্রশ্ন করে আসছে।

এ নিয়ে রয়েছে বিজ্ঞানীদের গবেষণা, প্রচলিত গল্প, কল্পকাহিনী, নানা ধারণা ও উদ্ভট তত্ত্ব।

গ্যালিলিয় ও তার টেলিস্কোপ

বলা হয়, গ্যালিলিয় ১৭ শতকের শুরুর দিকে যখন তার অধিক শক্তিশালী টেলিস্কোপটি আবিষ্কার করেন, তখন থেকে মানুষের মধ্যে আকাশে কি আছে সেনিয়ে কৌতূহল অনেক বেশি বেড়ে যায়।

খালি চোখে মহাকাশের তারা দেখার চেয়েও টেলিস্কোপে চোখ রাখা অনেক বেশি চমকপ্রদ হয়ে ওঠে।

চাঁদের গায়ে যে কালো ছোপ দেখা যায় সেসময় সেগুলো সামুদ্রিক পানি বলে মনে করা হতো।

পৃথিবীর সমুদ্রের মতো সেখানেও কি নানা ধরনের প্রাণী গিজগিজ করে? এমন প্রশ্ন উঠেছিলো।

ল্যাটিন ভাষায় 'মারিয়া' অর্থ সমুদ্র। চাঁদের বুকের সেই সমুদ্রকে বলা হয়েছিলো 'লুনার মারিয়া'।

তবে এখন বিজ্ঞানীরা জানেন যে চাঁদের বুকে যে কালো ছোপ দেখা যায় তা আসলে আগ্নেয় শিলা।

মঙ্গলগ্রহের প্রতিবেশীরা মানুষের চেয়ে লম্বা হবে?

হলিউডের সিনেমায় প্রায়শই ভিনগ্রহের মানুষ বা 'এলিয়েন' কেমন হবে তার একটি নিয়মিত চরিত্র দেখা যায়।

যেমন তার গায়ের রঙ সবুজ, বিশালাকার মাথায় ঘিলুর পরিমাণ অনেক, লম্বাটে মুখ, চকচকে কালো চোখ চোখ ইত্যাদি।

১৮৭০ এর দিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্শেল একটি তত্ত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মঙ্গলগ্রহের প্রাণীরা মানুষের থেকে লম্বা হবে।

তিনি গ্যালিলিয়র সময়ের চেয়েও আরো শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে মঙ্গলগ্রহের আকার ও মৌসুম পর্যবেক্ষণ করতেন।

তার হিসেবে মঙ্গলগ্রহ যেহেতু পৃথিবীর চেয়ে আকারে ছোট, তাই তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর চেয়ে কম হবে।

অতএব সেখানে যে প্রাণ রয়েছে তাদের পক্ষে লম্বা হওয়া সম্ভব হবে। অর্থাৎ মার্শানরা মানুষের চেয়ে লম্বা।

বোকা ও বুদ্ধিমান এলিয়েন

ভিন গ্রহের প্রাণীরা কেমন হবে এ নিয়ে যে শুধু বিজ্ঞানীরাই কৌতূহলী ছিলেন, তা নয়। দার্শনিকরাও আগ্রহী ছিলেন। যেমন- ধরুন দার্শনিক ইম্যানুয়েল কান্ট তাদের একজন। তিনি বলতেন, সূর্য থেকে দূরত্বের উপর ভিনগ্রহের প্রাণীদের বুদ্ধি নির্ভর করে।

তার মতে, যেহেতু বুধ গ্রহ সূর্যের সবচাইতে কাছে তাই সেখানে যেসব প্রাণী আছে তারা হাবাগোবা বা গবেট ধরনের হবে। আর শনি গ্রহের প্রাণীরা অত্যন্ত উর্বর মস্তিষ্কের হবে।

এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণী শুমারি

আপনি আদম শুমারি সম্পর্কে নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিন্তু ভিন গ্রহের প্রাণী শুমারি সম্পর্কে কিছু জানেন?

১৮৪৮ সালের দিকে স্কটল্যান্ডের চার্চের একজন আচার্য ছিলেন থমাস ডিক।

তিনি একই সাথে বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন।

সৌর জগতে কত ভিনগ্রহের প্রাণী আছে তার একটি শুমারি করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলেন।

ইংল্যান্ডে তখন প্রতি স্কয়ার মাইলে ২৮০ জন বসবাস করতো।

ইংল্যান্ডের জনবসতির ঘনত্বের সাথে তুলনা করে তিনি হিসেব দিয়েছিলেন যে তাহলে মহাশূন্যে ২২ হাজার কোটি অধিবাসী রয়েছে।

কেমন হবে চাঁদের জীবন?

এতদিন পর এমন একটা ধারণা পাওয়া গেছে যে, সৌর জগতে যদি প্রাণের অস্তিত্ব থাকেই তবে তাদের বাস সম্ভবত মঙ্গলগ্রহের মতো পৃথিবীর কাছের গ্রহে হবে না।

বরং আরো দুরের চাঁদ যেমন ইওরোপা অথবা এনসেলাদাসে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ইওরোপা বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে। আর এনসেলাদাস শনির একটি উপগ্রহ।

এই দুটি চাঁদেই রয়েছে পুরু বরফে আচ্ছাদিত আবরণ। যার নিচে রয়েছে তরল সমুদ্র।

ধারনা করা হয় যে বরফের আবরণের নিচের অংশটি তরল থাকার কারণ নিশ্চয়ই সেখানে কোন ধরনের তাপের কোন উৎস রয়েছে।

পৃথিবীতে সমুদ্রের তলদেশে এক ধরনের তাপ নির্গমন হওয়ার ফাটল বা রন্ধ্র রয়েছে।

যার ফলে সেখানে এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। যা জলজ জীবের জন্য খাদ্য প্রস্তুতে সহায়তা করে।

ইওরোপা অথবা এনসেলাদাস চাঁদেও হয়ত এই একই প্রক্রিয়া থাকতে পারে বলে মনে ধারনা করা হচ্ছে।

এসব চাঁদে যদি প্রাণের অস্তিত্ব সত্যিই থাকে তাহলে তারা দেখতে কেমন হবে সেনিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা।

অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কল্পনা শক্তি ভিনগ্রহের প্রাণীদের উদ্ভট, কুৎসিত অথবা হিংস্র ধরনের প্রাণী বলেই আশংকা করে

মিথেন গ্যাসের সন্ধান

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, ছায়াপথে পৃথিবীর মতো ৪০ বিলিয়ন গ্রহ থাকতে পারে।

বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বাইরে প্রায় চার হাজারের মতো গ্রহ সনাক্ত করেছে। যাকে বলা হচ্ছে 'এক্সোপ্ল্যানেট'।

এত বিপুল সংখ্যক গ্রহে কিভাবে প্রাণের উৎস খোঁজেন বিজ্ঞানীরা?

পৃথিবীতে যত জীবজন্তু রয়েছে তাদের সবার শরীর থেকে বর্ণ ও গন্ধহীন মিথেন গ্যাস নির্গমন হয়।

উইপোকা থেকে গরু সকল জীবজন্তুর শরীর থেকেই মিথেন গ্যাস বের হয়।

বিজ্ঞানীরা মিথেন গ্যাস, অক্সিজেন, ওজোন ইত্যাদির মিশ্রণের উৎস সনাক্ত করার চেষ্টা করেন।

তবে আগ্নেয়গিরি থেকেও মিথেন গ্যাস বের হয়।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবীর বাইরে প্রাণের উৎস থাকার সবচাইতে আদর্শ যায়গা হল 'এক্সোপ্ল্যানেট'।

কারণ হল এর পরিবেশ। 'এক্সোপ্ল্যানেট' নিজেদের নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে খুব বেশি দুরে নয় অথবা খুব কাছেও নয়।

তাই তাদের আবহাওয়া খুব গরম নয় অথবা ঠাণ্ডাও নয়। তাই এসব 'এক্সোপ্ল্যানেটেই' প্রাণের উৎস থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন অনেক বিজ্ঞানীরা।

অতএব এখানেই আপাতত বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement