বিশেষ ব্যবস্থায় মক্কা যাচ্ছেন ফ্লাইট মিস করা দেড়শ’ হজযাত্রী
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ১৮ জুলাই ২০১৯, ১৯:৫০
আশকোনার হজক্যাম্পে তিনদিন অপেক্ষার পর এবার বিশেষ সুবিধায় মক্কা যাচ্ছেন ফ্লাইট মিস করা দেড়শ’ হজযাত্রী। বৃহস্পতিবার দিনভর বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স ও ধর্মমন্ত্রণালয়ের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকের পর ফ্লাইট মিস করা হজযাত্রীদের জরিমানার (প্রতি টিকিটের জন্য সাড়ে তিনশ ডলার) ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার সাত শ’ টাকা মওকুফের ঘোষণা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ। একই সাথে বিশেষ সুবিধায় ফ্লাইট মিস করা একশ’ ৫১ জন হজযাত্রীকে বৃহস্পতিবার থেকেই বিমানের বিভিন্ন ফ্লাইটে মক্কায় পৌছে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে বিমান। আগামী ২৩ জুলাইয়ের মধ্যেই এই হজযাত্রীদের মক্কায় পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
উল্লেখ্য গত ১৪ ও ১৫ জুলাই সৌদী দূতাবাসের অনলাইন সার্ভারের জটিলতায় সঠিক সময়ে ভিসা হাতে না পেয়ে বিমানের দুটি ফ্লাইট মিস করেছেন এই হজযাত্রীরা। দু’দিন পরে মঙ্গলবার ভিসা হাতে পাওয়ার পর বিমানের অন্য ফ্লাইটেও কোনো শিডিউল পাচ্ছিলেন না তারা। ফলে কবে বা কোন ফ্লাইটে এই ১৫১ জন হজযাত্রী মক্কায় যেতে পারবেন সেটিও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যেই ছিল।
বৃহস্পতিবার আশকোনাস্থ হজক্যাম্পে গিয়ে নিয়ে জানা গেল, বেশ কয়েকটি হজ এজেন্সির মোট ১৫১ জন হজযাত্রী বিলম্বে ভিসা পাওয়ার কারণে তারা বিমানের ফ্লাইট মিস করেছেন। নির্ধারিত ফ্লাইটে তারা হজে যেতে পারেননি। এর মধ্যে মিনার এয়ার ট্রাভেলস তাদের ৬৭ জন হজযাত্রীর ভিসা দূতাবাসের সার্ভারের সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে অর্থাৎ নির্ধারিত ফ্লাইটের আগে হাতে পাননি। এই ৬৭ জন হজযাত্রীর যাত্রার নির্ধারিত ফ্লাইট ছিল মঙ্গলবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ৩০৩৩ ফ্লাইটে। এটি মঙ্গলবার সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটে ঢাকা ছেড়েছে; কিন্তু এজেন্সির পক্ষ থেকে দূতাবাসে হজযাত্রীদের সব ধরনের কাগজপত্র সাবমিট করার পরেও সার্ভারে সমস্যার কারণে ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ের আগে ভিসা পাওয়া যায়নি। এদিকে বিমানের টিকিট আগেই কনফার্ম করার কারণে বিমানকেও নির্দিষ্ট ফ্লাইটে ঐ ৬৭ আসন খালি নিয়েই মক্কার উদ্দেশ্যে উড়াল দিতে হয়েছে। ফলে এই হজযাত্রীরা মঙ্গলবার দুপুরের পরে যখন ভিসা হাতে পেয়েছে তখন বিমানে চড়ার সুযোগ ছিল না।
অন্যদিকে এফ এম ট্রাভেলস নামের আরেকটি এজেন্সির ১১ জন হজযাত্রীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক সময়ে সৌদী দূতাবাসে জমা না দেয়ার কারণে ঐ ১১ জন হজযাত্রীও নির্ধারিত ফ্লাইটের আগে ভিসা পাননি। একই ভুলে সাবিব ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস নামের আরেকটি এজেন্সির ৪ জন হজযাত্রী নির্ধারিত ফ্লাইটের আগে ভিসা হাতে পাননি।
এই দুই এজেন্সির মোট ১৫ জন হজযাত্রীর যাত্রার তারিখ ছিল বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টায়; কিন্তু মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তারা ভিসা হাতে না পাওয়ায় বুধবার ভোরে বিমানের নির্দিষ্ট ফ্লাইটটি ঐ ১৫টি আসন খালি নিয়েই মক্কার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে।
এছাড়াও আরো কয়েকটি এজেন্সির কাগজপত্র জমা দেয়ার বিলম্বের কারণে হজযাত্রীরা নির্ধারিত সময়ের আগে ভিসা পাননি। ফলে তারাও বিমানের ফ্লাইট মিস করেছেন। সব মিলিয়ে ফ্লাইট মিস করা হজযাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫১ জনে।
ভিসা জটিলতায় বিমানের ফ্লাইট মিস করা এসব এজেন্সির এই ১৫১ হজযাত্রী এখন আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পেই অবস্থান করছেন। অনেকেই কান্নাকাটিও করছেন বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। হজক্যাম্পের ডরমেটরিতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও দুশ্চিন্তায় অনেকে না খেয়েই সময় পার করছেন। অবশ্য তাদেরকে অন্য একটি বা দুটি ফ্লাইটে মক্কায় পাঠানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ বিমান ও ঢাকা হজ অফিস।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পের পরিচালক (হজ অফিসার) মো: সাইফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা ফ্লাইট মিস করা হজযাত্রীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্য ফ্লাইটে মক্কায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। ইতোমধ্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবরে আজ সকালেই চিঠি দিয়েছি। আমরা টেলিফোনেও সার্বক্ষণিক বিমানের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তারা (বিমান) আমাদের জানিয়েছেন, সিডিউল ফ্লাইটের মাধ্যমেই এই ১৫১ হজযাত্রীকে মক্কায় পৌছানোর দায়িত্ব নেবে সংস্থাটি।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ৩৫ জনকে বিমানের একটি ফ্লাইটে মক্কায় পৌছে দেয়ার কথা বলেছে। এভাবে আগামীকাল শুক্রবার ও পরের দিন শনিবারও কিছু হজযাত্রী যেতে পারবে। আমরা আশা করছি আগামী ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে ফ্লাইট মিস করা বাকি সবাই মক্কায় পৌছে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
হজ অফিসার আরো জানান, ইতোমধ্যে বিমানের পক্ষ থেকে বিমানের প্রতি টিকিটের জন্য জরিমানা (ফ্লাইট মিস করার কারনে) সাড়ে তিনশ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ২৮ হাজারের কিছু বেশি) মওকুফের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এটা হজযাত্রী ও এজেন্সি মালিকদের জন্যও একটা ভাল দিক।
অন্যদিকে হজ এজেন্সি’স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তকে জানান, হজযাত্রীদের নিকট থেকে এজেন্সিগুলো যে টাকা নিয়েছে তার বাইরে আর কোন টাকা নেয়ার সুযোগ নেই।
কয়েকদিন দেরিতে মক্কায় পৌছার কারণে যদি হোটেল ভাড়া বা অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কোন খরচ বাড়েও তাহলে সেই খরচ দেবে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো। কোন অবস্থাতেই হজযাত্রীদের একটি টাকাও অতিরিক্ত খরচ হবে না। এ বিষয়ে হাবের পক্ষ থেকে সদস্য প্রত্যেকটি এজেন্সিকে সতর্ক করে দেয় হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা