২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রমজানের শিক্ষা পরবর্তী জীবনে

রমজানের শিক্ষা পরবর্তী জীবনে - সংগৃহীত

আজ মাহে রমজানুল মোবারকের সাতাইশ তারিখ। মুমিনের প্রবৃত্তিকে অশুভ প্রবণতা থেকে পরিশুদ্ধ করতে, মানব প্রকৃতিকে ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর মোহ থেকে বিমুখ করে আখেরাতমুখী করতে, মুসলমানের জীবনে নিয়মানুবর্তিতা আনতে এবং মানবসমাজে সম্প্রীতি ও সহানুভূতির চেতনা জাগাতে অত্যন্ত কার্যকর ইবাদত সিয়াম সাধনার মাস অচিরেই আমাদের থেকে বিদায় নেবে। তখন আমাদের জীবনে স্বাভাবিকতা আসার পরেও যদি রমজানের বিশেষ নেক আমলগুলো চালু রাখা যায়, তাহলে অনেক সুফল পাওয়া যাবে।

প্রথমেই আসে রোজার কথা। রমজানের বাইরে রোজা রাখা ফরজ নয়; কিন্তু নফল রোজার জন্য কোনো মাস বা দিনের সীমাবদ্ধতা নেই। বছরের পাঁচটি দিন ছাড়া সব দিন রোজা রাখা যাবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা না রেখে কোনো মাস যেতে দিতেন না বলে সাহাবায়ে কেরাম বর্ণনা করেছেন। তিনি প্রত্যেক মাসে কমপক্ষে তিনটি রোজা রাখতেন বলে জানা যায়। অবশ্য এই দিনগুলো তিনি নির্দিষ্ট করতেন না। কখনো মাসের শুরুতে, কখনো মধ্যখানে, কখনো শেষভাগে, কখনো একসাথে, আবার কখনো বিচ্ছিন্নভাবে তিনটি রোজা রাখতেন। 

এরপর নফল সালাতের প্রসঙ্গ আসে। রমজানে দীর্ঘক্ষণ ধরে তারাবিহ নামাজ আদায় করা হয়। রমজানের বাইরে এ নামাজ নেই; কিন্তু তাহাজ্জুদ আছে সারা বছরের জন্য। এ নামাজের মাহাত্ম্য ও পুরস্কার অনেক বেশি। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত দীর্ঘ তাহাজ্জুদ আদায় করতেন যে, তার দুই পা ফুলে যেত। তাকে এ নামাজ আদায়ে বিশেষ আদেশ করা হয়েছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে। নবুওয়াত লাভের প্রথম দিনগুলোতেই নাজিল হয়েছিল সূরা মুজ্জাম্মিল। তাতে রাত জেগে ইবাদত করার জন্য তার প্রতি বিশেষ আদেশ করা হয়েছে। তাই যখন দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়নি তখনো তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার পরেও তাতে শৈথিল্য করেননি। এ জন্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে কোনো পর্যায়েই মুসলিম মনীষীরা তাহাজ্জুদ আদায়ে আলসেমি করেননি। এমনকি অনেক মুসলিম শাসকের জীবনে অন্য অনেক গুণের সাথে তাহাজ্জুদ আদায়ের নিয়মিত অভ্যাস ছিল। 
রমজানের আরেকটি কাজ কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন। এটাও রমজানের সাথে নির্দিষ্ট নয়; কিন্তু রমজান মাসে নাজিল হওয়ার কারণে এ মাসের সাথে কুরআন মাজিদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তাই রমজান মাসে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত ও চর্চার ওপর জোর দেয়া হয়। রমজানের বাইরেও এ অভ্যাস ও নিয়ম চালু রাখা উচিত। আল্লাহর কালামের সাথে সম্পর্ক যতই ঘনিষ্ঠ হবে, আল্লাহর বিশেষ রহমতের ততই আশা করা যাবে। রমজানে এ কিতাবের প্রতি যে মনোযোগ বাড়ে, সেটিকে আল্লাহর রহমত হিসেবেই গণ্য করা উচিত এবং তা ধরে রাখা প্রয়োজন। কুরআন তিলাওয়াত, অধ্যয়ন ও গবেষণায় মুসলমানদের আরো আগ্রহী হওয়া প্রয়োজন।

তাসবিহ-তাহলিল ও ইস্তেগফার মুমিনের প্রাত্যহিক কর্তব্য। রমজানে তা বেড়ে যাওয়া খুবই শুভ আলামত; কিন্তু তা রমজান পর্যন্ত সীমিত রাখা উচিত নয়।

রমজানে মুমিন বান্দাদের মধ্যে দান-খয়রাতের আগ্রহ বেড়ে যায়। এটিও আল্লাহর অনুগ্রহ। সম্পদের মালিক আল্লাহ। বান্দা নিছক আমানতদার। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সম্পদ ব্যয় করা মুমিনের কর্তব্য। ধনীর সম্পদে অভাবী ও বঞ্চিতদের প্রাপ্য রয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে কুরআন মাজিদে। রমজানে মুমিন বান্দারা আল্লাহর এ বিশেষ হুকুম পালনে আরো আগ্রহী হয় অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি সওয়াব লাভের আশায়। এ কারণেই রমজান মাসে জাকাত আদায়ের রেওয়াজ চালু হয়েছে। তা ছাড়া সদকাতুল ফিতর এ মাসের সাথে জড়িত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কখনো সম্পদ জমা থাকত না। এ জন্য তার ওপর কখনো জাকাত ফরজ হয়নি। সদকাতুল ফিতর ওয়জিব হওয়ার মতো সম্পদও তার কাছে থাকেনি; কিন্তু তিনি সব সময় দানের হাত সম্প্রসারিত রাখতেন। আর রমজান এলে তার দানের মাত্রা অত্যন্ত বেড়ে যেত বলে সাহাবায়ে কেরাম বর্ণনা করেছেন। অতএব রমজান শেষ হলেও এসব ইবাদত অব্যাহত রাখা উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement