২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সদাকাতুল ফিতর সিয়ামের অনুষঙ্গ

সদাকাতুল ফিতর সিয়ামের অনুষঙ্গ - ছবি : সংগ্রহ

রমজানুল মোবারকের আজ ২১ তারিখ। বিশ্ব মুসলিমের পারস্পরিক সমবেদনা ও সম্প্রীতির বন্ধন জোরাল করার মাস এটি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা অনুযায়ী মাগফিরাতের ১০ দিন শেষ হয়ে শুরু হয়েছে নাজাতের দশক। রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে মুমিন বান্দারা নিজেদের মধ্য থেকে অহমিকা ও গরিমার মতো অশুভ উপাদানগুলো যেমন দূর করতে সক্ষম হয়, তেমনি খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে অক্ষমদের কষ্ট অনুভব করতে পারে। বিশ্বমানবতা একই আদম-হাওয়ার সন্তান বা একই পরিবারের সদস্য হিসেবে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকবে, একজনের দুঃখ ও আনন্দে অন্যরাও মানসিকভাবে অংশগ্রহণ করবে, একই দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো পরস্পরের সম্পর্ক হবে নিবিড়- এটাই কাম্য আল্লাহর ও তার প্রেরিত মহাপুরুষদের।

আসমানি সব শরিয়তেই বনি আদমের পারস্পরিক মৈত্রী ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক ও আচরণের নির্দেশনা রয়েছে। মাহে রমজান উম্মতে মুহাম্মদির জন্য সম্প্রীতি ও সমবেদনার অমিয় শিক্ষা নিয়ে উপস্থিত হয়। রমজানের শেষে ঈদ উৎসবে যেন সচ্ছল পরিবারের সাথে অভাবী পরিবারের সদস্যরাও অংশ নিতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে বলা হয়েছে বিশেষভাবে। ঈদের আগে সদাকাতুল ফিতর আদায়ের বিধান আনন্দ উৎসবে সবাইকে শরিক করে নেয়ার অনুপম ব্যবস্থা। তেমনি গোটা মাসের রোজা পালনে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায়, তার প্রতিকার এই সদকা। এজন্য মহানবী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে রোজার পরিশুদ্ধি ও অভাবীদের খাবার বলে আখ্যায়িত করেছেন। 

রমজানের শেষ দশকে মুসলিম সমাজে এই আর্থিক কর্তব্যটি পালনে আন্তরিক উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। অবশ্য সদাতুল ফিতর আদায়ের আরো তাৎপর্য রয়েছে। রমজানের রোজা শেষ করে ইফতার বা রোজাবিহীন কাটানোর সময় ঈদ সামনে রেখে আদায় করতে হয় বলে অর্থব্যয়ের এই ইবাদতটির নাম সদাকাতুল ফিতর। 
আরেকটি তাৎপর্য রয়েছে। গোটা মাস পানাহার ও কামাচার বর্জন এবং পাপাচার পরিহার করে যাওয়া নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ। নাতিদীর্ঘ কালব্যাপী এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারা আল্লাহতায়ালার তাওফিকেই সম্ভব হয়। তাই যখন পবিত্র মাস শেষ হয়ে আসে, তখন আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ ও তাওফিকের জন্য তার শোকর আদায় করা মুমিনের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। সামান্য পরিমাণে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে মুমিন বান্দারা কষ্টকর ইবাদতটি পালনে সক্ষমতাদানের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। 

সদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। তবে এজন্য সক্ষমতার মাপকাঠি রয়েছে। কারো কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সমমূল্যের সম্পদ থাকলে তার ওপর ওয়াজিব হয় সদাকাতুল ফিতর আদায় করা। জাকাতের সাথে পার্থক্য এই যে, জাকাতের ক্ষেত্রে প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ বর্ধনশীল হওয়া ও এক বছর স্থিতিশীল থাকা শর্ত। কিন্তু সদাকাতুল ফিতরের বেলায় এ দু’টি শর্ত নেই। এজন্য কারো কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থাবর ও অনুৎপাদনশীল সম্পদ থাকলেও এবং শুধু ঈদুল ফিতরের দিনটিতে থাকলেই তাকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। 
যার বা যাদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব নয়, তিনি বা তারাও তা দিতে পারেন। এজন্য মহানবী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহ দিয়ে বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা এটির জন্য অনেক বদলা দেবেন। এটা আদায় করতে হয় নিজের ও নিজের পোষ্যদের পক্ষ থেকে। সর্বনিম্ন এক কেজি ৬৫০ গ্রাম আটা বা তার মূল্য মাথাপিছু সদাকাতুল ফিতর। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ৭০ টাকা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এটা ন্যূনতম কর্তব্য। কেউ যদি বেশি পরিমাণে দান করেন তাতে দোষ তো নেই-ই বরং তা প্রশংসাযোগ্য দায়মুক্ত হওয়ার জন্য নিম্নতম পরিমাণটি নির্ধারণ করা হয়েছে আদায়কারীদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতি বজায় রেখে। অতিরিক্ত আদায় নফল বা ঐচ্ছিক সাব্যস্ত করা হয়েছে এ যুক্তিতে। নিঃস্ব, দুরিদ্র আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে এ অর্থ পৌঁছে দেয় কর্তব্য।

ঈদের নামাজে রওনা হওয়ার আগেই সদাকাতুল ফিতর আদায় করা কর্তব্য। কেউ তাতে ব্যর্থ হলে ঈদের নামাজের পরে আদায় করতে হবে। সেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যয় ও স্থাপনা নির্মাণ বা আসবাবপত্র খরিদের খাতে সদাকাতুল ফিতর ও জাকাতের অর্থ দেয়া যায় না। তবে ইয়াতিম, দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য তা দেয়া যাবে। এজন্যই ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে জাকাত ও সদাকাতুল ফিতর দান করার সুযোগ রয়েছে। যেকোনো ইবাদতে ঈমান, ইহতিসাব ও ইখলাস বিবেচ্য। সদাকাতুল ফিতর আদায়ের সময়ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য করলে ছওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।


আরো সংবাদ



premium cement