২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শাবান মাসের ফজিলত

শাবান মাসের ফজিলত - সংগৃহীত

শাবান মাস অতি গুরুত্বপূর্ণ মাস। আরবি মাসের অষ্টম মাস। শাবান আরবি শব্দ অর্থ শাখা প্রশাখা। এ মাসে আল্লাহ মুমিন বান্দাদের বিভিন্ন প্রকার রহমত-বরকত দান করেন। তাই এ মাসের নাম শাবান রাখা হয়েছে। এ মাসে যেসব রহমত ও বরকতের জন্য গুরুত্ব বহন করে তার মধ্যে একটি হলো ‘শবেবরাত’। শবেবরাত আরবি পরিভাষা নয়। শবেবরাতের আরবি নাম হলো ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’। তবে বরাত আরবি থেকে গৃহীত। অর্থ ভাগ্য, বিমুক্তি। ফার্সিতে শবেবরাত আরবিতে লাইলাতুল বারায়াত অর্থ মুক্তির রজনী। এ রাতকে মুক্তির রজনী বলা হয় এ কারণে যে, এ রাতে মহান আল্লাহ অসংখ্য বান্দাকে দোজখ থেকে মুক্তির সনদ দেন, যে বিষয়টি জানা যায় নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা।

হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, এক রাতে আমার পাশে রাসূল সা:-কে না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হই। একপর্যায়ে তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে পাই। তিনি আমাকে দেখে বললেন, আয়েশা! তুমি কি মনে করেছ যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করেছে? তখন আয়েশা রা: বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সা:! আমি মনে করেছি হয়তো আপনি আপনার অন্য কোনো স্ত্রীর নিকট গমন করছেন। অতঃপর রাসূল সা: বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাবানের মধ্য রাতে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বনু কালব গোত্রের ছাগলের লোমের চেয়েও অধিকসংখ্যক লোককে ক্ষমা করে দেন (তিরমিজি)। এই হাদিসটি ইমাম বায়হাকি তার ‘শুয়াবুল ঈমান’ গ্রন্থে সঙ্কলন করেছেন।

শবেবরাত সম্পর্কে আরো হাদিস : হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা: থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল থেকে বর্ণনা করেন- রাসূল সা: বলেছেন, শাবান মাসের মধ্যরাত্রিতে মহান আল্লাহ (তাঁর রহমতের ভাণ্ডার নিয়ে) সব সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং ওই রাতে মুশরিক অথবা হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া সবাইকেই ক্ষমা করে দেন (তিররানি)।

হজরত আবু মুসা আশআরী রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা নিসফে শাবানের রাতে অবতীর্ণ হন। সেই রাতে মুশরিক অথবা হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। (ইবনে মাজা)। এ সব হাদিস শবেবরাতের দিকনির্দেশ করে এবং তার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। তাই এ রাতের প্রতি গুরুত্ব দেয়া আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। রাসূল সা: নিজে গুরুত্ব দিতেন এবং আমলসহ রাত কাটাতেন। তবে প্রথম হাদিস দ্বারা বোঝা যায় এক সাথে জমা হয়ে নয়, একাকীভাবে নফল ইবাদত করা, তাহাজ্জুদ পড়া, পরের দিন রোজা রাখা- এ সব আমলে সম্মিলিত ব্যাপার থাকলে রাসূল অবশ্য সব স্ত্রীকে বলতেন, সাহাবিদের বলতেন, কিন্তু তিনি এমনটি করেননি। তিনি একাকী আমলে বেরিয়ে গেছেন। সুতরাং তাঁর আমল অনুযায়ী আমাদের আমল করতে হবে। রাত জেগে ইবাদত, শেষ রাতে তাহাজ্জুদ, পরের দিন রোজাসহ অন্য সব ইবাদতে শবেবরাত পালন করতে হবে। এসব ইবাদতের ভেতর দিয়ে সামনে আগত রমজান মাসের প্রস্তুতি নিতে হবে।

শবেবরাত উপলক্ষে আমাদের সমাজে বহু জাহিলিয়াত পরিলক্ষিত হয়, যা কখনো কাম্য নয়। এসব জাহিলিয়াত পরিত্যাগ করা উচিত। যেমন- শবেবরাত উপলক্ষে সম্মিলিত এক স্থানে জমা হয়ে জিকির করা। এরূপ আমলের কোনো ভিত্তি শরিয়তে নেই। এটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

শবেবরাত উপলক্ষে মসজিদে মসজিদে প্রচুর টাকা ব্যয় করে আলোকসজ্জা করা হয়। যার দ্বারা শুধু অর্থ আর সময়ের অপচয় ছাড়া অন্য কিছুই নয়। এর থেকে বহু গুণে লাভ হবে নিজেদের ইবাদতে আলোকসজ্জা করলে। ইবাদতের আলোকসজ্জা আল্লাহর নিকট গ্রহণীয়, মসজিদের আলোকসজ্জায় নয়। অযথা মোমবাতি আগরবাতি এগুলোও অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত।

যে ফেতনা আমাদের শহর ও গ্রামে সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়, তা হলো শবেবরাত উপলক্ষে হালুয়া, রুটি, মিষ্টি, পায়েস, ফিরনিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার। এটা মানুষের মধ্যে এমনভাবে সয়লাব করছে যে, অনেক সাধারণ মানুষ আছে যারা হালুয়া রুটিসামগ্রী পাকানো শবেবরাতের অবিচ্ছিন্ন অংশ মনে করে নিয়েছে। এটা বদ্ধমূল ধারণায় পরিণত হয়েছে, যা মোটেই ঠিক নয়। তাই শবেবরাতের আবশ্যকীয় করণীয় হলো এই কুসংস্কার দূরীভূত করা। নফল ইবাদতের পাশাপাশি কুসংস্কার দূর করা।

তাই আসুন, শবেবরাতের প্রতি গুরুত্ব দেই, হাদিস মোতাবেক আমলে শবেবরাত পালন করি। সাথে সাথে শবেবরাতকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কুসংস্কার দূরীভূত করিÑ সেøাগান তুলি শবেবরাত হোক কুসংস্কারমুক্ত শবেবরাত। 
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement