১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নফল কখনো ফরজের সমান নয়

প্রতীকী ছবি -

‘শবেবরাত’ দু’টি ফারসি শব্দ। ‘শব’ অর্থ রাত বা রজনী। ‘বরাত’ অর্থ ভাগ্য। দু’টো একত্রিত করলে অর্থ দাঁড়ায় ভাগ্যের রজনী। শবেবরাতকে আরবিতে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা মুক্তির রাত বলা হয়। হাদিস শরিফে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ শাবানের মধ্যরজনী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

শাবান মাসের ১৪তম তারিখের দিবাগত রাত হচ্ছে শবেবরাত। শাবান মাস আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসকে রমজানের প্রস্তুতি মাস বলা হয়েছে। নবী করিম সা: অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি নফল রোজা পালন করতেন। রমজান মাসকে স্বাগত জানিয়ে মহানবী নিজেই দোয়াও করেছেন।

শবেবরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে- আম্মাজান আয়েশা রা: বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে না পেয়ে তাঁর সন্ধানে বের হলাম। গিয়ে দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাকিতে অঝোর নয়নে কাঁদছেন। নবীজী আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, হে আয়েশা! ‘তুমি কি মনে করো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার ওপর জুলুম করবেন?’ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! না; আমি ধারণা করেছিলাম, আপনি হয়তো অন্য কোনো স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, হে আয়েশা আজকের রাত সম্পর্কে তুমি জেনে রেখো, মহান আল্লাহ এই রাতে দুনিয়ার প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগপালের পশমের চেয়ে অধিক বান্দাকে তিনি ক্ষমা করেন। কালব হচ্ছে আরবের একটি প্রসিদ্ধ গোত্র, যারা অধিক পরিমাণে বকরি লালন-পালন করত। যেহেতু তাদের বকরির সংখ্যা ছিল বেশি, তাই নবীজী তাদের বকরিপালের পশমের কথা উল্লেখ করে বুঝিয়েছেন। তা হলে বুঝা গেল, এ রাতের ইবাদত নীরবে একাগ্রে করাই শ্রেয়।

ইবনে মাজাহ শরিফের এক হাদিসে এ রাতের মর্যাদা উল্লেখ করে বলা হয়েছে- হজরত আলী রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন শাবানের মধ্য রাতটি আসবে, তখন তোমরা সে রাতে কিয়াম তথা রাতভর নামাজ পড়বে এবং পরদিন রোজা রাখবে। কেননা সেদিন সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন- আছে কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী? যাকে আমি ক্ষমা করব। আছে কি কেউ রিজিক প্রার্থনাকারী যাকে আমি রিজিক দেবো। আছে কি কেউ সমস্যাগ্রস্ত যে আমার কাছে পরিত্রাণ চায়, আমি তাকে উদ্ধার করব।’ এভাবে আল্লাহ ফজর পর্যন্ত বান্দাহকে তাঁর কুদরতি জবান দ্বারা আহ্বান করেন। কুরআনে এসেছে- আল্লাহ বলেন, তোমাদের কেউ কি সাহায্য প্রার্থী আছে?

আল্লাহ এ পুণ্যময় রজনীতে অসংখ্য বান্দা-বান্দীকে স্বেচ্ছায় ক্ষমা করেন, তবে দুই শ্রেণীর লোককে তিনি ক্ষমা করেন না। ০১. ‘মুশরিক’ যারা আল্লাহর সাথে শরিক করে; ০২. যারা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। আল্লাহর কাছে পাঁচটি রাত খুবই মর্যাদার। এর মধ্যে শবেবরাতের রাতও রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে- ‘নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রির দোয়া নিশ্চতভাবে কবুল হয়ে থাকে। ০১. রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া; ০২. মধ্য শাবানের দোয়া; ০৩. শবে কদরের দোয়া; ০৪. ঈদুল ফিতরের রাতের দোয়া ও ০৫. ঈদুল আজহার রাতের দোয়া।’

আমাদের দেশে এখন এসব বরকতময় রাতে শিন্নি বিলানো, রুটি বানানো, কিংবা গোশতসহ ভালো খাওয়ার ব্যবস্থা করা, এমনকি মসজিদের ভেতরেও ইমামসহ এগুলোতে ব্যস্ত থাকেন। নির্দিষ্ট নিয়মে নামাজ পড়ার জন্য কত রকমের বই বাজারে বের হয়েছে যা শরিয়ত এলাও করে না। বিভিন্ন দরগাহে, মাজারে বাতি জ্বালিয়ে চিৎকার করে জিকির করা হয়। এগুলো ঠিক নয়। বরং উত্তম খাওয়ার কারণে যদি বেশি ঘুমে ধরে তা হলে তা বর্জন করাই উত্তম।

আমাদের মনে রাখতে হবে, অন্যের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এ রাতে কোনো ইবাদত করা হলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ রাতে জাগ্রত থাকতে গিয়ে ফজরের নামাজ যেন বাদ না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, শবেবরাতের সারারাতের আমল কখনো ফজরের ফরজ নামাজের সমতুল্য হবে না। সঠিক নিয়ম পালন করে এ রাতের আমল করলেই কেবল এ রাতের বরকত ও ফজিলত লাভ করা যাবে।

লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement