১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রাক-নিবন্ধনের পরও হজে যাচ্ছেন না অনেকে!

হজ - সংগৃহীত

বর্ধিত সময়ের মধ্যেও চলতি বছরের হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনে ধীরগতি লক্ষণীয়। সরকারি ব্যবস্থাপনার ৭১ হাজার কোটার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত নিবন্ধিত হয়েছেন ৫ হাজার ৪৫৯জন। অন্য দিকে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৬জনের কোটার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছেন মাত্র ৪৩ হাজার ৪৬০জন। বর্ধিত সময় অনুযায়ী এ বছরের জন্য প্রাক-নিবন্ধিতদের সিরিয়াল থেকে চূড়ান্ত নিবন্ধনের সর্বশেষ সময় আগামী ২১ মার্চ। এরপর পরবর্তী সিরিয়াল উন্মুক্ত করে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হবে। পরবর্তী সিরিয়ালের নিবন্ধিতদের বেশির ভাগই ২০২০ সালে হজ পালনের টার্গেটে নিবিন্ধত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের বেসরকারি হজযাত্রীর কোটা পূরণ হওয়া নিয়ে কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করছেন। 

হজ ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছরই হজে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রাক-নিবন্ধিত হয়েছেন এমন হজযাত্রীদের অনেকে এ বছর হজে যাচ্ছেন না বলেই চূড়ান্ত নিবন্ধনে হজযাত্রী হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারণ। এ ছাড়াও পাসপোর্ট পেতে দেরি হওয়া, একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে এজেন্সিপ্রতি হজযাত্রী পাঠানোর কোটা ১৫০ থেকে কমিয়ে ১০০জন করার ঘোষণা দেয়ার কারণে কিছুু এজেন্সি হজযাত্রীদের নিবন্ধন করতে দেরি হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাবের মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, আসলে এবার হজযাত্রীদের নিবন্ধনের ধীরগতি লক্ষণীয়। এর আগে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাকনিবন্ধিত হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন না করার তেমন লক্ষণ দেখা যায়নি। এবার নির্ধারিত সময়ে সরকারি ব্যবস্থাপনার কোটা পূর্ণ হয়নি। এ জন্য সময় বৃদ্ধির পাশাপাশি আগের ও পরের সিরিয়ালের প্রাক-নিবন্ধিতদের চূড়ান্ত নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পাসপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় লাগা ও নিবন্ধনের ধীরগতি বড় কারণ। যদিও হজযাত্রীদের পাসপোর্ট দ্রুত ডেলিভারি দিতে সর্বশেষ বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম দফায় উন্মুক্ত করা সিরিয়াল থেকে কোটা পূরণ না হলেও পরবর্তী সিরিয়াল উন্মুক্ত করার পর কোটার সংখ্যায় হজযাত্রী নিবন্ধিত হবে বলে আশা করি। 

হাবের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও বর্তমান ইসি কমিটির সদস্য ফরিদ আহমেদ মজুদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনার কোটা পূর্ণ হওয়া না হওয়া নিয়ে আমিও কিছুটা সন্দিহান। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা, দীর্ঘমেয়াদে প্রাক নিবন্ধের নিয়মের কারণে তাৎক্ষণিক হজ পালনের মনোভাবে পরিবর্তন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় গ্রুপ লিডাররা ধর্মপ্রাণ মানুষকে হজের চেয়েও স্বল্প খরচে ওমরাহ পালনে উৎসাহিত করাসহ নানা কারণ থাকতে পারে এর পেছনে।

চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য হজযাত্রী পাঠানোর কোটা রয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮জন। এর মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার ১৯৮জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৭ হাজার সরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য নির্ধারিত। এজেন্সিগুলোর গাইড বাদ দিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৬জনের নিবন্ধন করা হবে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনার এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হয়। গত ১০ মার্চ ছিল নিবন্ধনের শেষ দিন। কিন্তু বেশির ভাগ হজযাত্রী নিবন্ধনের বাইরে থেকে যাওয়ায় সময় বৃদ্ধি করে আগামী ২১ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে।

প্রথম ধাপে প্রাকনিবন্ধিত হজযাত্রীদের আগের বছরের ধারাবাহিকতা থেকে চলতি বছরের কোটার সমপরিমাণ সংখ্যাকে সর্বশেষ সংখ্যা ধরে নিবন্ধনের এই সময়সীমা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কোটা সমপরিমাণ নিবন্ধিত না হলে পরবর্তী সংখ্যা উন্মুক্ত করে কোটা পূরণ করার কথা রয়েছে হজনীতিতে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৪ লাখ ৭৯ হাজারের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য বলা হয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক নিবন্ধিত হজযাত্রীদের সিরিয়াল ছিল ৬ লাখ ১৯ হাজার ৭৪০। এর মধ্যে বেশির ভাগই ২০২০ সালে হজ পালনের লক্ষ্যে প্রাক-নিবন্ধিত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। চলতি বছর আগের বছরের তুলনায় হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমলেও গড়ে হজ প্যাকেজের মূল্য প্রায় ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে। অবশ্য হাবসহ এজেন্সি মালিকরা প্যাকেজমূল্য বৃদ্ধি হজের যাওয়ার ব্যাপারে প্রাক-নিবন্ধিতদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ বলে মনে করেন না বলেই মত দেন। 

রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকার একটি হজ এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গতকাল বিকেলে এই প্রতিবেকদের সাথে আলাপকালে জানান, তাদের তিনটি হজ লাইসেন্সে ৪০০ হজযাত্রীর প্রাক-নিবন্ধন রয়েছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত মাত্র ৮০জনের চূড়ান্ত নিবন্ধন হয়েছে। তিনি জানান, শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ২০০জন হতে পারে। তিনি বলেন, গ্রুপ লিডাররা জানাচ্ছেন, তাদের মাধ্যমে নিবন্ধিতরা এ বছর যেতে চাইছেন না। তিনি বলেন, আমাদের প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের পাসপোর্টজনিত জটিলতা কিংবা এজেন্সি প্রতি কোটার সমস্যাও নেই। তবে কিছু এজেন্সির এই সমস্যা থাকতে পারে।

কারণ, আগে সিদ্ধান্ত ছিল ১৫০ জনের কম হলে অন্য এজেন্সিকে লিড এজেন্সি ধরে তাদের সাথে যুক্ত করে কোটা পূর্ণ করে নিবন্ধন করতে হবে। সর্বশেষ বুধবার এই কোটা ১০০ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে আগামী ২১ মার্চের মধ্যে নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ৮০হাজার ছাড়াতে পারে বলে তার ধারণা। তবে এই হজ এজিন্সের কর্ণধার মনে করেন,পরবর্তী সিরিয়ালের কোটা উন্মুক্ত করলেও তাদের থেকে বাকি প্রায় ৪০ হাজার এ বছরই হজ করতে প্রস্তুত কি না- সেটা বলা মুশকিল। ফলে এবারের বেসরকারি প্রাক-নিবন্ধিত আগে পরের পুরো সিরিয়াল উন্মুক্ত করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত কোটা পূরণ করা লাগতে পারে। 

হাবের কোষাধ্যক্ষ মাওলানা ফজলু রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোটা হয়তো খালি থাকবে না। যেহেতু প্রাক-নিবন্ধনের সিরিয়াল অনেক লম্বা। কোটা খালি থাকলে পরবর্তী সিরিয়াল থেকে কোটা পূরণের সুযোগ দিলে কোটা পূরণ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘এজেন্সি প্রতি কোটা ১০০ জনের’ সিদ্ধান্তটি এসেছে মাত্র বুধবার। অনেক এজেন্সি কোটার এই অংকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ ছাড়া, পাসপোর্টের জটিলতাও রয়েছে। আবার অনেকে গ্রুপ লিডার হজযাত্রীদের টাকা দিতে গড়িমসি করার কারণেও এজেন্সিগুলো চূড়ান্ত নিবন্ধন করা থেকে বিরত রয়েছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তিনি বলেন, কিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে আগের হজের অনিয়মের অভিযোগের নিষ্পত্তি হতে দেরি হওয়ার কারণে তাদেরও নিবন্ধন করতে দেরি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত প্রথম দফার সিরিয়ালের মধ্যেই ৮০ থেকে ৯০ হাজারের প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন হতে পারে বলে তিনিও মনে করছেন। 

হাবের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ফরিদ আমদে মজুমদার মনে করেন, প্রাক-নিবন্ধনের মাধ্যমে হজ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আসলেও হজযাত্রীদের মধ্যে একটি গাছাড়া ভাব এসে থাকতে পারে। তিনি বলেন, আগে হজযাত্রীরা যে বছর হজে যেতো সে বছরই এমনকি নিবন্ধনের সময়ও সিদ্ধান্ত নিতো। ফলে তখন হজ পালনের তাৎক্ষণিক একটি তরতাজা মনোভাব ও আবেগ কাজ করত। এখন দুই বছর আগেই প্রাক-নিবন্ধনের বিষয় এসে দাঁড়ানোর কারণে সেই মনোভাব ও আবেগে পরিবর্তন এসেছে বলে মনে হচ্ছে। এ ছাড়া, গ্রুপ লিডাররা কম খরচে ওমরাহ করার ব্যাপারে ধর্মপ্রাণ মানুষকে বেশি উৎসাহিত করার কারণে অনেকে হজ পালন বিলম্বিত করছেন। বাংলাদেশ থেকে যেখানে বছরে ওমরাহযাত্রী ৪০ থেকে ৬০ হাজারের বেশি হতো না সেখানে গত বছর তা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এ বছর ওমরাহ পালনকারীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে যেখানে হজ পালন করতে সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়। আমরা এজেন্সিগুলো ৬০ থেক ৬৫ হাজার টাকার মধ্যেই ওমরাহ প্যাকেজ করেছি।

হজযাত্রীদের বিমান ভাড়ার টাকাসহ প্যাকেজমূল্যের একটি নির্ধারিত অংক জমা দিয়ে হজযাত্রীদের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হচ্ছে। নিবন্ধিত হজযাত্রীরাই এ বছর হজ পালনের সুযোগ পাবেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০আগস্ট (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ পালিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল