২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বেসরকারি হজ প্যাকেজ মূল্য ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা

বেসরকারি হজ প্যাকেজ মূল্য ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা - ছবি : সংগৃহীত

চলতি বছরের জন্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার হজের সর্বনিম্ন খরচ জনপ্রতি ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা নিধারণ করে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনের হোটেল ভিক্টোরীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেনে হাবের মহাসচিব এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজে যেটুকু ভোগান্তি মধ্যস্বত্তভোগিদের কারণেই হয়, হজ এজেন্সির কারণে নয়। তিনি বলেন, সরকার এ বছর বিমান ভাড়া ১০ হাজার ১৯১ টাকা কমিয়ে হাবের দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছে। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে হাব মনে করে, হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের দেড়গুণ হওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মতো সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের হজযাত্রীদের টিকিটও সরাসরি হজ এজেন্সির কাছে বিক্রি করতে সরকার হস্তক্ষেপ করবে আশা করি।

হাবের সভাপতি আব্দুস ছোবহান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে হাব মহাসচিব এম শাহাদাত হোসেন তসলিম হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ঘোষিত প্যাকেজে বিমান ভাড়া ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া ১ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা, সৌদি আরবে প্রদেয় বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও পরিবহন ভাড়া ৪০ হাজার ৮৮২ টাকা ৫০ পয়সা, জমজমের পানি ২৬০ টাকা, অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট ৩৫ হাজার ৪৩৭ টাকা ৫০ পয়সা, স্থানীয় সার্ভিস চার্জ ৮০০ টাকা, হজযাত্রীদের কল্যাণ তহবিল ২০০ টাকা, প্রশিক্ষণ ফি ৩০০ টাকা, চিকিৎসা কেন্দ্র ফি ১০০ টাকা, খাওয়া খরচ ৩০ হাজার, অন্যান্য খরচ ১ হাজার ২১৫ টাকা ও প্রাক-নিবন্ধন ফি ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

হাবের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহসভাপতি আবদুস সালাম আরেফে, যুগ্মমহাসচিব রুহুল আমিন মিন্টু, জনসয়যোগ সচিব রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য এম.এন এইচ খাদেম দুলাল, মুৃহাম্মদ আব্দুল কাদিরসহ নির্বাহী কমিটির নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

হাব মহাসচিব বলেন, হজ এজেন্সির কারণে হজযাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন না। মধ্যস্বত্বভোগী দালাল ও ফড়িয়াদের কাছে টাকা জমা দিয়েই তারা বিপদ পড়েন। বাড়ির পাশের লোকটির কাছে টাকা জমা দিয়ে তারা মনে করেন নিরাপদে হজযাত্রা করতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে পড়েন বিপাকে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাবের সম্মিলিত উদ্যোগ সর্বোপরি হজ গমনেচ্ছুদের সচেতন হতে হবে।

সরকার কিছুটা বিমান ভাড়া কমানোর পর হাব থার্ড ক্যরিয়ারের দাবি থেকে সরে এসেছে কিনা- সাংবাদিকদেও প্রশ্নের জবাবে হাব মহাসচিব বলেন, আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিমান ভাড়া কমানোর মধ্য দিয়ে দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা মনে করি হজযাত্রীদের আসা যাওয়ার বিমান ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুনও হওয়া উচিত নয়। এখনো দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। কারণ স্বাভাবিক সময়ে অনেক সময় বিমান আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে সিট খালে থাকে। কিন্তু হজের সময় ৯৯%-এর বেশি ক্যাপাসিটি থাকে। ফলে বিমান ভাড়া এখনকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় জোর দেড়গুণ হওয়া উচিত। এছাড়া থার্ড ক্যারিয়ার চালুর মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহনকে উন্মুক্ত করার দাবি থেকেও হাব সরে আসেনি। আমরা চাই হজযাত্রী পরিবতন ওয়াইড হোক। অন্যান্য ক্যারিয়ারও আসুক। সৌদি এয়ারলাইন্সের হজের টিকিট হজ এজেন্সির মাধ্যমে বিক্রি না করার বিষয়ে তিনি বলেন, বিমানের মতো সৌদি এয়ারলাইন্সও যাতে হজের টিকিট সরাসরি হজ এজেন্সির কাছে বিক্রি করে তার জন্য সরকার প্রেসারাইজড করবে বলে আমরা আশা করি।

তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক নিবন্ধনধারী হজ গমনেচ্ছুদের নিবন্ধন ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। নিবন্ধনের সময় প্রত্যেক হজগমচ্ছেুকে বিমানভাড়া বাবদ ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং সৌদি আরবে প্রদেয় বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও পরিবহন ফি ১৪ হাজার ৬৪৫ টাকাসহ সর্বনিম্ন মোট ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৬ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তবে হজযাত্রীদের আগামী ২০ মার্চের মধ্যে প্যাকেজ মূল্যের সম্পূর্ণ টাকা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিকে পরিশোধ করতে হবে।’

হাব মহাসচিব জানান, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি বছর সর্বনিম্ন প্যাকেজ হবে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা। সর্বোচ্চ প্যাকেজের কোনো নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নির্ধারণ করা হয়নি। সুযোগ সুবিধামতো তিন থেকে চার ধরনের প্যাকেজ হতে পারে।

এ বছর নিবন্ধনের পর হজযাত্রীরা যে ভাউচার পাবেন তার নিচে নিয়মাবলীতে বাকি টাকা সরাসরি হজ এজেন্সির কাছে জমা দেয়ার কথা উল্লেখ থাকবে বলে জানান হাব মহাসচিব।

চলতি বছর মিনার ময়দানের তাবুতে শতকরা ৩০ ভাগ দ্বিতল খাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি। বাংলাদেশের কিছু কিছু এজেন্সির হজযাত্রীকে ওই দোতলা খাট থাকতে হতে পারে। এ কারণে প্রত্যেক হজযাত্রীকে ১৮৭ দশমিক ৫০ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় চার হাজার ১৬ টাকা ২৫ পয়সা) অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া যেসব হজযাত্রী ২০১৫, ১৬, ১৭ ও ২০১৮ সালের হজ সম্পাদন করেছেন ২০১৯ সালের হজ সম্পাদনের তাদের অতিরিক্ত দুই হাজার ১০০ সৌদি রিয়াল (৪৮ হাজার ২৫০ টাকা) অতিরিক্ত গুণতে হবে। এছাড়া কুরবানির খরচ বাবদ প্রত্যেক হাজিকে কমপক্ষে ৫২৫ সৌদি রিয়াল (১১ হাজার ৮১২ টাকা) পৃথকভাবে খরচ করতে হবে।

এর আগে গত সোমবার মন্ত্রী সভায় হজ প্যাকেজ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ প্যাকেজ ঘোষিত হয়। তাতে দুটি প্যাকেজ ঘোষনা করে বলা হয়। বেসরকারি এজেন্সিগুলো সরকার ঘোষিত সর্বনিন্ম প্যাকেজের কমে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবেনা। সরকার ঘোষিত হজ প্যাকেজে প্রথমটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। আর দ্বিতীয়টিতে ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজারে টাকা। বেসরকারি প্যাকেজ সর্বনিন্ম প্যাকেজ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮০০ টাকা ধরা হয়েছে। তবে এজেন্সিগুলো কাস্টমাইজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। তবে কেউ ঘোষিত প্যাকেজের কমে প্যাকেজ ঘোষণা করতে পরবে না বলে হাব মহাসচিব জানান। চাঁদ দেখা সাপোক্ষে আগামী ১০ আগষ্ট পবিত্র হজ পালত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement