২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বিয়ে কেন এত রহমতময়

বিয়ে কেন এত রহমতময় - ছবি : সংগৃহীত

শীত মওসুমে দেশে বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে বিয়ে-সাদি বেশি হয়। তাই শীত মওসুমকে বিয়ে-সাদির বসন্তকাল বলা যেতে পারে। ফরজ বিয়ে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবনের সিঁড়ি।
শান্তির ছোঁয়া: স্বল্প খরচে যৌতুকবিহীন বিয়েতে রয়েছে আল্লাহর রহমত, বরকত ও শান্তি। মূলত নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একমাত্র বৈধ উপায় ও বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা হচ্ছে বিয়ে। এ ফরজ বিয়ের নিয়ম-নীতি যত সহজ হবে, খরচ যত কম হবে, সমাজে ততই নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশা কমে আসবে। এ জন্য সমাজে স্বল্প খরচে সুন্নতি বিয়ের প্রথা সর্বত্র চালু করতে হবে। বিষয়টির প্রতি সমাজের হৃদয়বান মুমিন বান্দা ও সরকারের নজর দেয়া উচিত। এতে নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, অবৈধ প্রেম, ব্যভিচার, ধর্ষণ ইত্যাদি হ্রাস পাবে। কন্যা দায়গ্রস্ত মা-বাবা হাফ ছেড়ে বাঁচবে। দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের ঘরে শান্তির ছোঁয়া লাগবে। কারণ বৈধ বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মিল-মহব্বতে রয়েছে শান্তি। যে ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য নেই, যৌতুকের বাড়াবাড়ি নেই, অশান্তির আগুনে ঘরে-বাইরে পুড়ছে না তারা।

আল্লাহর হুকুম: মহান আল্লাহ তায়ালা ‘বৈবাহিক সম্পর্ককে বংশ ও আত্মীয়তার অন্যতম মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন।’ (সূরা ফোরকান-৫৪)। আল্লাহ পাকের হুকুম হচ্ছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা (বিবাহযোগ্য কিন্তু) বিবাহহীন তোমরা তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ, যোগ্য তাদেরও । তারা যদি দরিদ্র হয় তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী করে দেবেন। আল্লাহ অসীম ক্ষমতাবান সর্বজ্ঞ।’ (সূরা নূর-৩২)। ‘আর যারা বিবাহ করতে অসমর্থ, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে (মানসিক ও আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে চেষ্টা করে) যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেন।’ (সূরা নূর-৩৩)।

বিয়ের শর্ত : ইসলামে বিয়ের শর্ত হলো ছেলেমেয়ে দুইজন দুইজনের অবশ্যই পছন্দ হতে হবে। অর্থাৎ তাদের মতামতের ও পছন্দের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে। অভিভাবকদের বর-কনে পছন্দের ক্ষেত্রে ধন-সম্পদ ও বংশ মর্যাদার চেয়েও দ্বীনদারিকে বেশি প্রাধান্য দেয়া আবশ্যক। বিয়েতে সাক্ষী থাকবে দুইজন। মেয়েকে বরের যোগ্যতা অনুসারে বিবেকসম্মত ন্যায্য দেনমোহর দিতে হবে। এ বিষয়ে ছেলের সামর্থ্য মতো যে দেনমোহর দিতে সক্ষম, তা মেয়ে ও মেয়ের পক্ষ মেনে নিলেই হবে ইসলামী মতে বিয়ে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই পক্ষকেই যৌতুক দেয়া থেকে রহিত থাকা জরুরি। স্বল্প খরচে সুন্নতি বিয়ে নিয়মমাফিক মসজিদেও সম্পন্ন করা যায়।

এতে নেই বিয়ে আয়োজনের হাজারো রকমের জোগাড়যন্ত্র। নেই বাড়ি-গাড়ি সাজানোর বাড়াবাড়ি, বর কনের ফ্যাশনের ঘনঘটা, গায়ে হলুদের নামে নারী-পুরুষের মাখামাখি, নাচানাচি, যন্ত্র সঙ্গীতের মাতামাতি, অশ্লীলতার ছড়াছড়ি এবং খানা খাদ্যের ও অর্থের অহেতুক অপচয় এবং নেই বিধর্মীদের অনুকরণ-অনুসরণ। রাসূল সা:-এর কলিজার টুকরা জান্নাতের রানী মা ফাতেমার রা: বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল সামান্য ব্যয়ে, একবারে সাদামাটা। তার বিয়ে অনুষ্ঠানের মতো সাদামাটা বিয়ের অনুষ্ঠানই হওয়া উচিত মুসলিম সমাজের বিয়ের অনুষ্ঠানের মূল শর্ত। মা আয়শা রা:- হতে বর্ণিত। নবীজী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘স্বল্প খরচের বিবাহ সর্বাপেক্ষা বরকতময়।’ (মুসনাদে আহমাদ, শুআবুল ইমান)। তিনি আরো বলেন, ‘স্বল্প খরচের বিবাহ সর্বাপেক্ষা উত্তম।’ (আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান)।

ফরজ বিয়ে হচ্ছে- আল্লাহ পাকের হুকুম পালন করা। নবীজী সা:- এর সুন্নাহর অনুসরণ করা। যা উন্নত চরিত্র গঠনে, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় একান্ত সহায়ক শক্তিরূপে কাজ করে। ফরজ বিয়ে চোখের কুদৃষ্টির হেফাজত করে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে জেনার হাত থেকে রক্ষা করে এবং আত্মার সংশোধনের মাধ্যমে ইবাদতে মনোযোগী করে তাকওয়ার রাজপথে হাঁটতে সাহায্য করে।
লেখক : প্রবন্ধকার

 


আরো সংবাদ



premium cement