২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হজের ধারাবাহিক কার্যক্রম

হজ পালন : কোন তারিখে কী করবেন? - ছবি : সংগৃহীত

হজের বাংলায় লেখা বইগুলো পড়লে বেশ মুশকিলে পড়তে হয়। সাধারণের জন্য কিভাবে হজের মৌলিক কার্যক্রমগুলোকে পালন করতে হয় তা বুঝতে বেশ কষ্ট হয়ে যায়। আর তাই হাজীদেরও অপেক্ষা করতে হয় প্রত্যেক প্রহরে ‘মুয়াল্লিম’ কী দিকনির্দেশনা দেবেন তার জন্য। কিন্তু এসব কার্যক্রম, তার গুরুত্ব এবং পালনের দিনক্ষণ ও নিয়মাবলি যদি আগেই জানা যায় তাহলে পূর্ব প্রস্তুতি যেমন গ্রহণ করা সম্ভব হবে তেমনি কার্যক্রমগুলো যথাযথ গুরুত্বের সাথে পালন করা শুধু সহজই হবে না বরং তা আনন্দেরও হবে।

ইহরাম (নিয়ত করা): আমাদের মিকাত হলো ‘ইয়ালামলাম’ পাহাড়। এখান থেকে নিয়ত করতে হবে। নিয়ত করা ফরজ। ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকেও করা যায়। কিন্তু কেউ যদি আগে মদিনায় যায় তাহলে সেখান থেকে মক্কার যাওয়ার পথে ইহরাম বাঁধা উত্তম। আমরা বাংলাদেশীরা যেহেতু ‘হজে তামাত্তু’ করে থাকি তাই প্রথমে ওমরাহের নিয়ত করতে হবে। নিয়ত করেই তালবিয়া পড়তে শুরু করতে হবে। তিনবার জোরে পাঠ করা সুন্নত। ইহরামের পোশাক পরাই ইহরাম নয় বরং নিয়তটাই ইহরাম।

ওমরাহ করা : মক্কায় প্রবেশ করেই সম্ভব হলে ওমরাহ শেষ করে নেয়া। তা না হলে হোটেলে মাল-জিনিসপত্র রেখে অহেতুক সময় নষ্ট না করে ওমরাহের জন্য কাবা শরিফে চলে যেতে হবে। ওমরাহের কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো: তাওয়াফ করা (ফরজ) (সহিহ মুসলিম, ২১৩৭)। সাত চক্করকে এক তাওয়াফ বলা হয়। প্রথম তিন চক্করে রমল (বীরত্ব প্রদর্শনে দ্রুত হেঁটে চলা) (সহিহ বুখারি, ১৫০১) ও ইজতিবা করা (ইহরামের কাপড় ডান হাতের নিচে দিয়ে বাম কাঁধের ওপর রাখা) জরুরি। পরবর্তী চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে শেষ করা। (সুনানুত তিরমিজি, ৭৮৭)

সাঈ করা (ওয়াজিব) : সাফা থেকে শুরু করে মারওয়া পাহাড়ে শেষ হবে। সর্বমোট সাতবার প্রদক্ষিণ করা। হালক করা বা মাথা মুণ্ডন করা (ওয়াজিব)। হজ শুরু হওয়ার কাছাকাছি সময়ে হলে চুল খাটো করে ফেলা। যাতে হজ শেষে আবার মাথা মুণ্ডন করা সম্ভব হয়। এখন আপনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবেন। ইহরামের সময়ে নিষিদ্ধ কাজ থেকে অব্যাহতি পাবেন। এ সময়ে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করবেন।
হজ মৌলিক কার্যক্রম শুরু : ৮ জিলহাজ : ইয়াওমুত তারবিয়্যাহ (তারবিয়্যাহর দিন) ফজরের সালাতের পরে সকালের নাস্তা সেরে তাড়াহুড়া না করে গোসল করে হজের নিয়ত করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেই মিনার দিকে রওনা হবেন। (নিয়ত করা ফরজ) মিনায় পৌঁছে এইদিন বিশেষ কোনো কাজ নেই। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হবে এখানে। এখানে অবস্থানের সময় বেশি বেশি করে ইবাদত, বন্দেগি, দোয়া-জিকর, কুরআন তিলাওয়াত ও হাদিস অধ্যয়ন করবেন।

৯ জিলহজ : আরাফাতের দিন। সকালের নাস্তা সেরে ধীরে-সুস্থে আরাফাতের দিকে রওনা হবেন। ইমাম সাহেবের খুতবা শুনবেন। মসজিদে নামিরার আশপাশে থাকার চেষ্টা করবেন। জোহর ও আসরের সালাত এক আজানে দুই ইকামতে কসর ও জমা (দুই ওয়াক্ত একসাথে আদায়) করবেন। এখানের দোয়া কবুল হয়। বেশি বেশি করে দোয়া করবেন। যেকোনো দোয়া করতে পারেন। তবে, ‘লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি সায়্যিন ক্বদির’ দোয়ায় বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে। সূর্য ডোবার (মাগরিবের আজানের) আগে কেউ বের হবেন না। এরূপ করলে দম (কুরবানি) ওয়াজিব হবে।
মুজদালিফা (৯ জুলাইয়ের দিনগত রাত) : সূর্য ডোবার (মাগরিবের আযানের) পর মুজদালিফার দিকে রওনা হবেন।

পথে মাগরিবের সালাতের সময় শেষ হয়ে গেলও আদায় করবেন না। বরং মুজদালিফায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে, পবিত্র হয়ে মাগরিব এবং এশার সালাত কসর (তিন রাকাত মাগরিব এবং এশার দুই রাকাত এবং বিতর) আদায় করবেন। রাতে সামর্থ্য থাকলে অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করতে পারেন। বাধ্যবাধকতা নেই। মুজদালিফা থেকে ৭০টি (৭+২১+২১+২১) খেজুরের বিচি বা তার চেয়ে ছোট ধরনের পাথরের কুচি এখান থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন। মিনা থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু কখনো কখনো তা কঠিন হয়ে যায়।

১০. জিলহজ : ইয়াওমুন নাহার/ঈদের দিন (মিনা-এর কার্যক্রম) : এদিন শুধু বড় জামারাতে (তৃতীয় জামারত) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। এটি ওয়াজিব। কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে জামারাতকে বাম পাশে রেখে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করবেন। এখন আর তালবিয়া পাঠ করার দরকার নেই। কুরবানির টাকা আগেই দিয়ে থাকলে আপনার কুরবানি হয়ে গেছে এই ভেবে মাথা মুণ্ডন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনি হালাল অবস্থায় ফিরে আসলেন। অর্থাৎ সেলাই করা কাপড় সহ অন্যান্য স্বাভাবিক হালাল কাজগুলো করতে পারবেন। অথবা যদি মনে করেন যে ১৩ তারিখে তাওয়াফ ও সাঈ করে মাথা মুণ্ডন করে হালাল হবেন তাও করতে পারেন। মাথা মুণ্ডন করা ওয়াজিব। এ দিন সম্ভব হলে এখান থেকেই কাবাতে গিয়ে তাওয়াফ (ফরজ) ও সাঈ (ওয়াজিব) করে মিনায় ফিরে আসবেন। আর সেটা সম্ভব না হলে কংকর নিক্ষেপ করেই সরাসরি মিনার তাঁবুতে ফিরে আসবেন এবং রাতে মিনায় থাকবেন। মিনায় অবস্থানকালীন সালাতগুলো কসর করবেন কিন্তু জমা’ বা একাধিক ওয়াক্তকে একসাথে করবেন না।

১১ জিলহজ : এই দিন সূর্য ঢলে পড়ার পর ২১টি কঙ্কর নিয়ে জামারাতের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এবং সেখানে পৌঁছে ছোট জামারাতকে সাতটি, মধ্যমটাকে সাতটি এবং বড়টাকে স্তকি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। যদি ১০ তারিখে তাওয়াফ ও সাঈ না করে থাকেন তাহলে এদিন তাওয়াফ ও সাঈ করে আসতে পারেন। তা না হলে মিনার তাঁবুতে ফিরে আসবেন এবং রাত যাপন করবেন।

১২ জিলহজ : এদিন মক্কায় ফিরে আসা যায় আগের দিনের মতো এদিনও ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন এবং আগে তাওয়াফ ও সাঈ না করে থাকলে আজ করতে পারেন। এরপর মিনার তাঁবুতে ফিরে আসবেন এবং রাত যাপন করবেন। সূর্যাস্তের আগে কঙ্কর নিক্ষেপ করা শেষ করতে পারলে ওইদিন মক্কায় ফিরে আসতে পারবেন। তবে মিনায় রাত যাপন করা সুন্নত।

১৩ জিলহজ : যদি এদিন মিনায় থাকেন, তাহলে আগের দিনের মতো আজো ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরবেন। যদি তাওয়াফ ও সাঈ না করে থাকেন তাহলে আজ তা পালন করতে পারেন। যদি এদিন মিনাতে থাকেন তাহলে ১৪ তারিখে আবারো ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করে তারপর মক্কায় ফিরে আসবেন। আগে তাওয়াফ করে থাকলে এখন আর তাওয়াফ ও সাঈ করার দরকার নেই।

তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব) : মক্কা ত্যাগ করার আগেই এ তাওয়াফ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সাঈ করা জরুরি নয়। কিন্তু যদি কেউ আগের তাওয়াফ ও সাঈ না করে থাকেন তাহলে একই নিয়তে তাওয়াফ শেষে সাঈ করে বিদায় নিবেন।

উল্লেখ্য, বিদায়ী তাওয়াফ করার পরেও যদি কেউ মক্কায় একদিন থাকে তাহলে তাকে আবারো বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে।
মদিনায় রাসূলুল্লাহ সা:-এর রওজা জিয়ারত :হজের আগে কিংবা পরে অবশ্যই মদিনা মুনাওয়ারা এবং রাসূলুল্লাহ সা:-এর রওজা মুবারক জিয়ারত করতে হয়। সে ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে তা হলো: মক্কার মতো মদিনাও পবিত্র ভূমি। এখানে শায়িত আছেন রাসূলুল্লাহ সা: সহ তাঁর অসংখ্য সাহাবি। এ ভূমির পবিত্রতা রক্ষা করা তাই খুবই জরুরি। প্রতিটি পদক্ষেপে এটি স্মরণ রাখা জরুরি। মসজিদে নববীতে সালাত আদায়। (১ রাকাত সমান ৫০ হাজার রাকাত)

‘রওজাতু মিন রিয়াজুল জান্নাতে’ সালাত আদায়। মসজিদে নববীর সামনে রাসূলুল্লাহ সা- এর রওজা মুবারকের ঠিক ডান পাশের কিছু অংশে সাদা রঙের ভিন্ন কারপেট বিছান। এই স্থানকে রাসূলুল্লাহ সা: জান্নাতের অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এ ‘রওজাতু মিন রিয়াজুল জান্নাতেই’ রাসূলুল্লাহ সা:-এর মিহরাব ও মুসাল্লা অবস্থিত। সাদা-কালো পাথরের এই মিহরাবেই রাসূলুল্লাহ সা: সালাত আদায় করতেন। সম্ভব হলে অপরকে কষ্ট না দিয়ে এখানে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করতে পারেন।

রাসূলুল্লাহ সা:-এর রওজা জিয়ারত এবং সালাম দেয়া। এটি মসজিদে নববীর ঠিক সামনের বাম দিকে অবস্থিত। বাইরে থেকে যে সবুজ গম্বুজটি আমরা দেখি এটি রাসূল সা:-এর রওজা। এখানে শায়িত আছেন তাঁর প্রিয় অন্য দুইজন সাহাবি হজরত আবু বকর ও ওমর রা:। তাদেরকেও সালাম দেয়া।

ফেরার পথে ও পরবর্তী জীবনে করণীয় : হজ থেকে ফেরার পথে এ বিশ্বাস নিয়ে ফেরা যে আপনার হজটি ‘হজে মাবরুর’ বা কবুল হয়েছে আর আপনি সে দিনের মতো হয়ে গেছেন, যেদিন আপনি প্রথম মায়ের গর্ভ থেকে এ পৃথিবীতে এসেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ করল এবং কোনো খারাপ বা অশ্লীল কাজ ও কথা থেকে নিজেকে বিরত রাখল সে যেন সে দিনের মতো হয়ে গেল, যে দিন সে এ পৃথিবীতে এসেছিল। (বুখারি)
লেখক : শিক্ষাবিদ

আরো পড়ুন :
ফজিলতময় ইবাদত হজ
মাওলানা মুনীরুল ইসলাম

আরবি ‘হজ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা বা সঙ্কল্পবদ্ধ হওয়া। তবে ইসলামী বিধানে হজ বলতে বোঝায়, মুসলিম উম্মাহ নির্ধারিত সময়ে এবং নির্ধারিত নিয়মে পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থিত বায়তুল্লাহ তাওয়াফ এবং মক্কার নিকটবর্তী মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা প্রভৃতি স্থানে গমন, অবস্থান এবং সেখানে নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন করা। বিবিধ অনন্যতায় উদ্ভাসিত এক ইবাদতের নাম হজ। একই সাথে এটি কায়িক ও আর্থিক ইবাদত। হজ কেবল সামর্থ্যবানদের ওপরই ফরজ; নামাজ-রোজার মতো ধনী-গরিব সবার জন্য জরুরি নয় এবং জীবনে একবার সম্পন্ন করা ফরজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে ব্যক্তি (ঈমানদার) কাবাঘরে পৌঁছতে সক্ষম হয় তার ওপর আল্লাহর প্রাপ্য হচ্ছে, সে যেন হজ করে’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৬)।

হজ বিপুল সওয়াব, রহমত, বরকত আর মর্যাদায় পরিপূর্ণ। যার জীবনে একবারও হজ পালন নসিব হয় সে অতি সৌভাগ্যবান। মুমিনের জীবনে হজের চেয়ে মহান আর কোনো ইবাদত নেই। হজের মাধ্যমে মুমিনদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের এ আগমন হবে- যেন তারা তাদের কল্যাণের স্থানে পৌঁছে’ (সূরা হজ : ২৮)।

একজন হজ পালনকারী গোনাহমুক্ত নতুন জীবন প্রাপ্ত হয়। তার জীবন পবিত্রময় হয়ে ওঠে। অতীতের সব গোনাহ মাফ হয়ে যায়। সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসেন। হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করল, যৌন সম্পর্কযুক্ত অশ্লীল কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকল এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকল, সে তার মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের মতো পবিত্র হয়ে ফিরে এলো’ (বুখারি ও মুসলিম)। আবু মূসা রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হজ পালনকারী তার পরিবারের ৪০০ লোকের ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারবেন। আর হজ পালনকারী তার গোনাহগুলো থেকে এমনভাবে নিষ্পাপ হয়ে যান, যেমন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ করেছিলেন’ (বাযযার)। আর একটি গোনাহমুক্ত কবুল হজের প্রতিদান সরাসরি জান্নাত। আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘গোনাহমুক্ত গ্রহণযোগ্য হজের একমাত্র বিনিময় আল্লাহর জান্নাত’ (বুখারি ও মুসলিম)।

হজ পালনকারী যখন ইহরাম পরে এ মহান ইবাদতে মশগুল হয় তখন তার সম্মানার্থে চার পাশের সৃষ্টিজগৎও অংশগ্রহণ করে। সাহল ইবনে সাদ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলমান ইহরাম পরে তালবিয়া পড়তে থাকে, তখন তার ডান ও বামের পাথর, বৃক্ষ, মাটিকণা এমনকি জমিনের ওপর প্রান্ত থেকে নিচের সর্বশেষ প্রান্ত পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকে, (তিরমিজি)। হজরত আবদুল্লাহ বিন ওমর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তুমি যখন হজ পালনকারীর সাথে সাক্ষাৎ করো, তখন তাকে সালাম দাও এবং মোসাফাহা করে তার ঘরে প্রবেশ করার আগে তোমার গোনাহ মাফের জন্য দোয়া করতে বলো, কেননা হজ পালনকারী গোনাহমুক্ত হয়ে এসেছে’ (আহমাদ)।

হজ ও ওমরাহ পালনকারীরা মহান আল্লাহর মেহমান। ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে যুদ্ধে বিজয়ী, হজকারী ও ওমরাহকারী আল্লাহর মেহমান বা প্রতিনিধি। আল্লাহ তাদের আহ্বান করেছেন, তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আর তারা তাঁর কাছে চেয়েছেন এবং তিনি তাদের দিয়েছেন’ (ইবনে মাজা)। হজের উদ্দেশ্যে বের হলে প্রতি কদমে নেকি লেখা হয়, গোনাহ মাফ করা হয় এবং তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তুমি যখন বায়তুল্লাহর উদ্দেশে নিজের ঘর থেকে বের হবে, তোমার বাহনের প্রতিবার মাটিতে পা রাখা এবং পা তোলার বিনিময়ে তোমার জন্য একটি করে নেকি লেখা হবে এবং তোমার গোনাহ মাফ করা হবে’ (তাবরানি)। শুধু তা-ই নয়, হজের নিয়তে বেরিয়ে মারা গেলেও হজের সওয়াব হতে থাকে। আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হলো, এরপর সে মারা গেল, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত হজের নেকি লেখা হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি ওমরাহর উদ্দেশ্যে বের হয়ে মারা যাবে, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ওমরাহর নেকি লেখা হতে থাকবে’ (তারগিব ওয়াত-তারহিব)।

হজের অনুপম পালনীয় বিধান দেখে শয়তান হতাশায় পড়ে যায়। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আরাফাত দিনের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাকে অন্য কোনো দিনই আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন না’ (মুসলিম)। হজরত তালহা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আরাফাতের দিন (হজের দিন) শয়তানকে সর্বাধিক হীন, পেরেশান, ইতর ও ক্রোধান্বিত দেখা যায়, কারণ এ দিন আল্লাহর সীমাহীন রহমত বর্ষণ ও বান্দার বড় বড় গোনাহ মাফের বিষয়টি শয়তান দেখে থাকে।’
হজে শুধু পরকালীন নয়, ইহকালীন কল্যাণও হাসিল হয়। হজ ও ওমরাহ পাপমোচনের পাশাপাশি হজকারী ও ওমরাহকারীর অভাব-অনটনও দূর করে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহ পরপর করতে থাকো, কেননা তা অভাব ও গোনাহ দূর করে দেয়, যেমন রেত লোহা, সোনা ও রুপার মরিচাকে দূর করে দেয়’ (তিরমিজি)।

এভাবে অসংখ্য হাদিসে হজের ফজিলত বর্ণিত আছে। তাই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ পালন না করা বা বিলম্ব করা মোটেও উচিত নয়। সাহাবায়ে কেরাম রা: এবং আমাদের আকাবির বুজুর্গানে দ্বীন অনেক কর্মব্যস্ততার মধ্যেও অনেকবার হজ পালন করেছেন। ইমাম আজম আবু হানিফা রহ: সুদূর কুফা থেকে এসে ৫৫ বার হজ পালন করেছেন। এমন কল্যাণ পেতে বিলম্ব না করে সামর্থ্যবানদের এখনই হজের প্রস্তুতি নেয়া জরুরি।
লেখক : প্রবন্ধকার

 


আরো সংবাদ



premium cement