২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

শয্যা গ্রহণের ইসলামী নীতিমালা

শয্যা গ্রহণের নীতিমালা - ছবি : সংগৃহীত

যেভাবে ইসলাম ঈমানদারদের দিন অতিবাহিত করার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছে, অনুরূপভাবে রাত্রিযাপনেরও আদব-শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে। রাত আল্লাহর সৃষ্ট নির্দশন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি দিন এবং রাতকে নির্দশন স্বরূপ সৃষ্টি করেছি’। (সূরা বনি ইসরাইল-১২)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি রাতকে মানুষের প্রশান্তির উপায় হিসেবে সৃষ্টি করেছেন’। (সূরা আনআম : ৯৬)
শোয়ার জায়গায় সর্তকতা : একাকী ঘরে রাত যাপনে হাদিসে নিষেধ রয়েছে। ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা: কোনো ঘরে একাকী রাত যাপন ও একাকী সফর নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৫৬৫০)

অনুরূপভাবে ছাদে ঘুমাবেন না। নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমাল (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই। (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৪১)
পবিত্রতা অর্জন : রাতে পরিষ্কার পরিছন্ন ও পবিত্র হয়ে শোয়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যদি কোনো মুসলমান রাতে আল্লাহকে স্মরণ করে অজু শেষে শয়ন করে এবং রাতে জাগ্রত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো কল্যাণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তায়ালা তা দান করেন’। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪২)
তাই ঘুমানোর আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবেন, যাতে খাবারের কোনো কিছু লেগে না থাকে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘শয়তান ঘ্রাণ নিতে খুবই দক্ষ ও লোভী। তোমরা নিজের ব্যাপারে শয়তান থেকে সর্তক হও। কোনো ব্যক্তি খাদ্যের চর্বি ইত্যাদির ঘ্রাণ হাত থেকে দূর করে রাত যাপন করলে এবং এতে তার কোনো ক্ষতি হলে সে এ জন্য নিজেকেই যেন তিরস্কার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫৯)

শয্যা গ্রহণের কিছু আদব : শয্যা গ্রহণের আগে বিছানা ঝেড়ে নেয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গি দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার উপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি-না। তার পর এ দোয়া পড়বে ‘হে আমার রব, আপনারই নামে শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠব। (বুখারি, হাদিস : ৬৩২০)
শয়নকালে দোয়া পড়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি শয়নের পর আল্লাহ পাকের নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বঞ্চনা নেমে আসবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৬)

আয়েশা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্রিত করে তাতে সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর তা মাথা ও চেহেরা থেকে শুরু করে যতদূর সম্ভব দেহে দুই হাত বুলাতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

সাহাবায়ে কেরামের কেউ কখনো অনিদ্রার রোগে আক্রান্ত হননি। কারণ তারা রাসূলের সুন্নত মেনে চলতেন। রাসূল সা:-এর সুন্নত চিকিৎসা ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বর্তমানকালে মানুষের অনিদ্রা দূর করার জন্য এই সুন্নত খুবই উপকারী। রাসূল সা: ডান কাত ও কেবলামুখী হয়ে শয়ন করতেন। বামদিকে মানুষের পাকস্থলি ও হৃদপিণ্ড থাকে। বামদিকে কাত হয়ে শয়ন করলে পাকস্থলি ও হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে রক্ত চলাচল ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘুম সম্পর্কে বোম্বে হাসপাতালের (বোম্বাই অডিটোরিয়াম) ডাক্তার কৃষ্ণ লালা মার্মা গবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, যেসব রোগীকে ডান দিকে কাত করে শয়ন করা হয়েছে, তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করেছে।

পক্ষান্তরে, যেসব রোগীকে বাম কাত হয়ে শয়ন করানো হয়েছে তারা অস্থিরতার সম্মুখীন হয়েছে। আধুনিক গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে, ডান দিকে ফিরে শয়ন করা হলে হৃদরোগের জন্য উপকারী। বাম দিকে যেহেতু হৃদপিণ্ড থাকে এ কারণে বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে ঘুম অত্যন্ত গভীর হয়। মানুষ সহজে ঘুম থেকে জাগ্রত হতে পারে না। পক্ষান্তরে, ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমালে ঘুম অতটা গভীর হয় না। ফলে সহজে মানুষ ঘুম থেকে জাগ্রত হতে পারে। তাতে ফজরের নামাজের সময় সহজে ঘুম ভেঙে যায়। রাসূল সা: সফরকালীন সময় ডান দিকে কাত হয়ে ডান হাত খাড়া করে বাহুর উপর মাথা রেখে ঘুমাতেন। এতে ঘুম গভীর হতো না, ফলে ফজরের নামাজ কাজা হতো না। এভাবে রাসূলে করিম সা: জীবন যাপন করেছেন।
লেখক : নিবন্ধকার

আরো পড়ুন :

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব
আনিসুর রহমান এরশাদ

মহানবী সা: সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে জিবরাইল আ:-এর মাধ্যমে স্রষ্টা প্রদত্ত জ্ঞান আহরণ করেছেন। হেরা গুহায় ধ্যান করেছেন মানবজাতির সঙ্কট থেকে মুক্তির পথ ও পদ্ধতি নিয়ে। জ্ঞানকে সংরক্ষণের জন্য মুখস্থকরণ, অন্যকে অবহিতকরণ তথা জ্ঞানবিতরণ ও লিপিবদ্ধকরণের কৌশল অবলম্বন করেছেন। তিনি জ্ঞান অর্জনকে উৎসাহিত করতে বলেছেন, ‘জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর জন্য ফরজ। যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, সে আল্লাহর পথে রয়েছে যে পর্যন্ত না সে প্রত্যাবর্তন করে।’ (তিরমিজি ও দারেম, মেশকাত শরিফ)

জ্ঞানের ব্যবহারগত দিকটাকে গুরুত্ব দেয়া : মহানবী সা: জ্ঞানের ব্যবহারগত দিককে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে আবুযার! ওই ব্যক্তি কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যে নিজের জ্ঞান থেকে উপকৃত হয় না।’

জ্ঞানচর্চাকে উৎসাহিতকরণ : একদিন হজরত রাসূল সা: দেখলেন মসজিদে দু’টি দল বসে আছে। একটি দল ইসলামি জ্ঞানচর্চায় ব্যস্ত এবং অপরটি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ও মুনাজাতে ব্যস্ত। আল্লাহর নবী সা: বললেন, ‘উভয় দলই আমার পছন্দের, কিন্তু জ্ঞানচর্চাকারী দলটি প্রার্থনায়রত দলটি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর আমি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে শিক্ষা দানের লক্ষ্যে প্রেরিত হয়েছি।’ অতঃপর মহানবী সা: জ্ঞানচর্চাকারী দলটিতে গিয়ে বসলেন।

জ্ঞানীকে সম্মানজনকভাবে উপস্থাপন : মহানবী সা: বলেন, ‘লজ্জা দুই প্রকারের। বুদ্ধিবৃত্তিক লজ্জা এবং বোকামিপূর্ণ লজ্জা। বুদ্ধিবৃত্তিক লজ্জা জ্ঞান থেকে উৎসারিত এবং বোকামিপূর্ণ লজ্জা অজ্ঞতা মূর্খতা হতে উৎসারিত হয়।’

জ্ঞানের উত্তম প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ : হজরত মুস্তাফা সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে ক্ষণিকের জন্য হেয় ও প্রতিপন্ন হতে প্রস্তুত হয় না, সে সারা জীবন অজ্ঞতার কারণে হেয় ও প্রতিপন্ন হয়।’ জ্ঞান অর্জন গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্ব না থাকলেও প্রশ্ন উঠতে পারে উপায় ও পদ্ধতি নিয়ে। উপায় চারটি : ০১. নিজে জানা; ০২. অপরকে জানানো; ০৩. যারা চিন্তা গবেষণায় অগ্রসর কিন্তু কর্মে পিছিয়ে অথবা যারা চিন্তা গবেষণা ও কর্মে অগ্রসর তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। যারা চিন্তা গবেষণায় পশ্চাৎপদ কিন্তু কর্মে অগ্রসর অথবা চিন্তা গবেষণা ও কর্মে পশ্চাৎপদ তাদের অবস্থার পরির্বতনে বা উন্নয়নের চেষ্টায়। নবী করিম সা: বলেছেন : ‘জ্ঞানী ব্যক্তিরা দুই প্রকারের : যে আলেম নিজের জ্ঞানের ওপর আমল করে তার জ্ঞান তার জন্য পরিত্রাণদাতা হয়। আর যে আলেম নিজের জ্ঞানকে ত্যাগ করে সে ধ্বংস হয়ে যায়’।

জ্ঞান বিতরণ সম্মানযোগ্য ও শ্রদ্ধেয় : মহানবী সা: বলেন, ‘বিজ্ঞান শিক্ষা দাও, এটি মানুষকে আল্লাহভীতি শিক্ষা দেয়, যে জ্ঞানার্জন করে, সে আল্লাহকে সম্মান করে, যে তা দান করে সে যেন শিক্ষা দেয়, এ জ্ঞান যে ধারণ করে সে সম্মানযোগ্য ও শ্রদ্ধেয়। কারণ বিজ্ঞান মানুষকে ভুল ও পাপ থেকে রক্ষা করে এবং বেহেশতের পথ আলোকিত করে।’

জ্ঞানার্জনকে উত্তম ইবাদত ঘোষণা : হজরত আয়েশা রা: বলেন, আমি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আমার কাছে অহি পাঠিয়েছেন, যে ব্যক্তি ইলম তলবের উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করবে, তার জন্য আমি জান্নাতের পথ সহজ করে দেবো এবং যে ব্যক্তির দুই চক্ষু আমি নিয়েছি তাকে তার পরিবর্তে আমি জান্নাত দান করব।’ ইবাদত অধিক হওয়া অপেক্ষা ইলম অধিক হওয়া উত্তম। দ্বীনের তথা ইলম ও আমলের আসল হচ্ছে শোবা-সন্দেহের জিনিস থেকে বেঁচে থাকা।’

জ্ঞানেই পরকালীন জীবনের মুক্তি : হজরত আবু হুরাইরা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মুমিনের মৃত্যুর পরও তার আমল ও নেক কাজগুলোর মধ্যে যার সওয়াব তার কাছে পৌঁছতে থাকবে তা হচ্ছে ইলম, নেক সন্তান এবং সদকায়ে জারিয়াহ।’ জ্ঞান ছাড়া দুনিয়া কিংবা পরকাল কোনো জীবনেই মুক্তি মিলবে না। যে জ্ঞানটা বিবৃতিমূলক জ্ঞান বা প্রকাশিত তা জানার জন্য যেভাবে জ্ঞান সাধককে চেষ্টা করতে হয় সেভাবেই বুদ্ধিবৃত্তিক গুণকে সাধারণ স্তরের ঊর্ধ্বে ওঠানো সম্ভব নয়। মনে রাখা জরুরি, তাত্ত্বিক জ্ঞান বস্তু সমন্বয়ের সক্ষমতা দেয়, কিন্তু ব্যবহারিক জ্ঞান কিভাবে চলতে হবে, বলতে হবে তার ক্ষমতা দেয়। বিচারিক ক্ষমতাকে প্রবল করতে হলে অভিজ্ঞতানির্ভর বোধকে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি সচেতনতার মাত্রাকে সূক্ষ্ম বিবেচনার উপযোগী পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এটা নিঃসন্দেহে সত্য যে, অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও লাভ হয় জ্ঞান। কিন্তু অভিজ্ঞতা কি প্রত্যক্ষ নাকি পরোক্ষ- সেটি বুঝাও গুরুত্বপূর্ণ।

জ্ঞানীরাই জান্নাতে যাবে : সহিহ-আল বুখারি শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান আহরণ করে সে প্রচুর লাভ করে, আর যে ব্যক্তি কোনো পথচলাকালে জ্ঞান লাভ করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’
জ্ঞানচর্চার প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি : শিক্ষা সম্প্রসারণে মহানবী সা: প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। শিক্ষা প্রদানের জন্য সাফা পাহাড়ের পাদদেশে বিশিষ্ট সাহাবি আরকাম বিন আবুল আরকামের বাড়িকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করেন। সে হিসেবে দারুল আরকামই ইসলামের প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে ধর্মশিক্ষা দেয়া হতো।
জ্ঞানভিত্তিক সংগঠন প্রতিষ্ঠাকরণ : হিজরত-উত্তরকালে মহানবী সা: মসজিদে নববীতে সাহাবিদের শিক্ষা দান করতেন; যা ইতিহাসে ‘মাদরাসাতুস সুফফা’ নামে অভিহিত ছিল। এটা ছিল জ্ঞানভিত্তিক সংগঠন। জ্ঞানভিত্তিক সংগঠন মানেই হচ্ছে এমন একটি সংগঠন, যেখানে বুদ্ধিমত্তা ও সফলতার সাথে সাংগঠনিক পরিসরে শিক্ষা আদান-প্রদান এবং জ্ঞান সৃষ্টি-সংগ্রহ-বিতরণের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। সংগঠনের স্বকীয়তা বা স্বতন্ত্রতা অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে সংগঠনের নিজস্ব জ্ঞানকে ব্যবহার করে।

উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া : মসজিদে নববী ছাড়াও সেই সময় মদিনায় কয়েকটি স্থানে মসজিদভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে ইসলামের উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদানের ইতিহাস পাওয়া যায়। শিক্ষার জন্য নিয়মতান্ত্রিক পাঠ্যসূচির প্রয়োজন। মহানবী সা: একটি সমন্বিত সিলেবাস নির্ধারণ করেন। তিনি ইসলামি শিক্ষার জন্য মহাগ্রন্থ আল কুরআন শিক্ষার সাথে সাথে আকাইদ ও ইবাদতের নিয়ম-কানুন, স্বাস্থ্যশিক্ষা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শিক্ষা, রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মনীতি, জীববিদ্যা, প্রকৃতিবিদ্যা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র আকাশ-বাতাস প্রভৃতির সমন্বয়ে বিজ্ঞান শিক্ষা এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্কবিষয়ক নানা ধরনের শিক্ষা দিতেন। সাহাবিরা অল্প সময়ের মধ্যে পবিত্র কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি সাহিত্য, উত্তরাধিকারী আইন, চিকিৎসাবিদ্যা, ফিকহ, তাজবিদ, দর্শনসহ সময়োপযোগী পণ্য বিপণন প্রক্রিয়াও রপ্ত করতে পারতেন। যুদ্ধবিদ্যা ও সমরাস্ত্র তৈরিতেও তারা পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। সাহাবিদের মধ্যে কয়েকজন সাহাবি বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক পাণ্ডিত্য লাভ করেন। বিশেষ করে হজরত জায়িদ বিন সাবিত রা: ফারায়িজ শাস্ত্র বা উত্তরাধিকারী আইন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: তাফসির শাস্ত্র, হজরত হাসসান বিন সাবিত রা: সাহিত্য ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। গ্রিক, কিবতি, ফারসি, হিব্রু, ইথিওপীয় প্রভৃতি বিদেশী ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রেও মহানবী সা: ব্যাপক গুরুত্ব দিতেন।

নারী শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া : নারী শিক্ষাকে মহানবী সা: সমভাবে গুরুত্ব দিতেন। পুরুষদের মতো নারীদেরও জ্ঞানার্জন ফরজ করেছেন। হিজরতের পর তিনি সপ্তাহে এক দিন শুধু নারীদের শিক্ষা-দীক্ষার জন্য সময় দিতেন। নারীদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি নানা প্রশ্নের জবাবও দিতেন তিনি। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা:, হাফসা রা:, উম্মে সালমা রা:সহ অনেক নারী সাহাবিকে তিনি উঁচুমানের শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছিলেন।

উপসংহার : মহানবী সা:-এর প্রদর্শিত পন্থায় জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে আলোকিত মানুষ তৈরি দেশ-জাতি-মানবতার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার স্বার্থে অপরিহার্য। জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হবে সমাজ, তৈরি হবে আলোকিত মানুষ। এ জন্য চাই জ্ঞানভিত্তিক আন্দোলন, জ্ঞানভিত্তিক সংগঠন, জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রয়াসের কোনো বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সা:-এর আদর্শই অনেক বেশি কার্যকর।
লেখক : প্রবন্ধকার


আরো সংবাদ



premium cement