২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হাজারে আসওয়াদের নিরাপত্তায় থাকেন যে ২৪ জন

হাজারে আসওয়াদ
হাজারে আসওয়াদের নিরাপত্তায় থাকেন যে ২৪ জন। - সংগৃহীত

প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ হজ পালন করতে পবিত্র মক্কায় যান। ইসলামের সবচেয়ে পবিত্রতম স্থানের মধ্যে মক্কার অবস্থান সর্বপ্রথম। ইসলামের ৫টি মূল ভিত্তির অন্যতম হল হজ। পবিত্র হজ পালন করার জন্য মুসলমানদের মক্কায় আসতে হয়। এছাড়াও ওমরাহ পালন করতেও পবিত্র মক্কায় আসতে হয় মুসলমানদেরকে। এখানে যারাই হজ বা ওমরাহ করতে আসেন তাদের সবারই একটি ইচ্ছা থাকে তা হলো, পবিত্র কাবা ঘরের এক কোণে রাখা পবিত্র কালো পাথর বা হাজারে আসওয়াদে স্পর্শ বা চুম্বন করা।

এই বিখ্যাত কালো পাথর জিবরাইল আ. নিয়ে এসেছিলেন হযরত ইবরাহিম আ. এর কাছে। এই পাথরের সামনে ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তারক্ষীরা অবস্থা করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে যিনি নিযুক্ত থাকেন তিনি হাজীদেরকে এই পাথরের কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন।

আর প্রতি ঘন্টায় দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীদের বদল করা হয়ে থাকে যাতে করে তারা সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তাদের প্রধানকাজ হল কালো পাথরের দেখাশুনা করা আর দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা প্রদান করা।

হাজারে আসওয়াদের দায়িত্বে থাকা প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, হাজারে আসওয়াদ দেখাশুনার জন্য ২৪ জন নিরাপত্তা কর্মী রয়েছেন। তাদেরকে কাজে নিয়োগের আগে বেশ কিছু বিষয় দেখে নেওয়া হয়। প্রথমত তারা এই কাজ করতে পারবে কিনা? তারা শারীরিকভাবে উপযুক্ত কিনা? সর্বোপরি এখানকার তাপ ও মানুষের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা আছে কিনা? এ বিষয়গুলো দেখা হয়।

পবিত্র মসজিদুল হারামের সাধারণ প্রেসিডেন্সির কর্মকর্তারা প্রত্যেক নামাজের শেষে শুধু কাবা পবিত্র পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য গোলাপজল, সুগন্ধিসহ বিভিন্ন ধরণের বিশুদ্ধকরণ জিনিস ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া মসজিদুল হারামও প্রতি ২৪ ঘন্টায় ধৌত করা করা হয়।

বেশিরভাগ মানুষ হাজারে আসওয়াদকে একটি পাথর মনে করলেও এটি আসলে ৮টি ছোট ছোট পাথরের সমষ্টি। সবগুলো পাথরকে একত্রে ঢালাই করে রাখা হয়েছে।

হাজারে আসওয়অদ বা কালো পাথরটি কাবা ঘরের পূর্ব কোণায় অবস্থিত। কাবার দেয়ালে স্থাপন করা হাজারে আসওয়াদ মাটি থেকে দেড় মিটার উপরে রয়েছে। এটি একটি বিশুদ্ধ রুপার পাত দ্বারা মোড়ানো আছে।

হাজারে আসওয়াদ থেকে সাধারণত তাওয়াফকারীরা তাদের তাওয়াফ শুরু করেন। একবার কাবা প্রদক্ষিণ করে তাওয়াফকারীরা হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করতে বা চুম্বন করতে চান। 

 

আরো দেখুন : সাঁতরে কাবা তাওয়াফ করেছিলেন যিনি

এমন দৃশ্য কি কল্পনা করেছেন, যে কেউ পবিত্র কাবা শরীফের সামনে সাঁতার কাটছে! আর তিনি সাতার কেটে কেটে পবিত্র কাবা তাওয়াফ করছেন! আজ থেকে ৭৭ বছর আগে ১৯৪১ সালে এমন আশ্চার্যজনক দারুণ একটি দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল।সেই ছবিতে দেখা যায় একজন ব্যক্তি কাবা শরীফের সামনে সাঁতার কাটছেন। শুধু তাই নয় তিনি সাঁতার কেটে পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফ করছেন। ঐ বছর সপ্তাহব্যাপী ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় মসজিদুল হারামসহ মক্কার বিভিন্ন এলাকা ডুবে গেছিল।

তিনি আলী আল আওদাহ। একজন বাহরাইনি নাগরিক। সাঁতরে কাবা তাওয়াফের বিষয়টির ছবি প্রকাশিত হলে তখনকার সময়ে তিনি খুব দ্রুত বিখ্যাত হয়ে উঠেন। এখন থেকে ৭৭ বছর আগে আল আওদাহকে মাকামে ইবরাহীমের পাশে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। আর আল আওদার পেছেনে তার বড় ভাই ও বন্ধুকে কাবার দরজার সামনে বসে থাকতে দেখা যায়।

২০১৫ র মে মাসের ১৬ তারিখ ৮৬ বছর বয়সে শেখ আল আওয়াদি বাহরাইনে ইন্তেকাল করেন।  ১৯৪১ সনে একাধারে ৭ দিন বৃষ্টি হওয়াতে ৬ ফুট পানি জমে গিয়েছিলো কাবার চারপাশে। বাহরাইনের ১২ বছর বয়সী শেখ আল আওদাহ তখন মক্কায় দ্বীনি স্কুলের ছাত্র। ২০১৩ সনে কুয়েত আল রাই টেলিভিশনে তিনি তার স্মৃতি চারণে বলেন, বন্যার পানিতে মানুষ, যানবাহন, আর গবাদি পশু ভেসে যেতে দেখেছি। ৭ দিন পর বৃষ্টি থামলে আমার ভাই হানিফ, বন্ধুবর মোহাম্মদ আল তাইয়িব ও আলী থাবিত, আর ইয়ামেনের এডেনের হাসিম আল বার, আর আমাদের শিক্ষক তিউনিসের আব্দুল রউফ মিলে কাবা শরীফের বন্যার অবস্থা দেখতে যাই।

তিনি বলেন, বাচ্চারা পানি দেখলে যা করে আমরাও তাই করলাম, মাথায় আসলো সাঁতরিয়ে তওয়াফ করবো। যা ভাবা তাই, আমরা চারজন পানিতে ঝাপিয়ে পড়লাম। পুলিশ হই হই করে উঠলো, আমরা কালো পাথর (হাজারে আসওয়াদ) চুরি করতে পানিতে নেমেছি কিনা! আমি সাঁতরিয়ে পুলিশকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে, আমি শুধু সাঁতরিয়ে ৭বার কাবা তাওয়াফ করব। কিন্তু পুলিশ তার স্বভাব সুলভ খবরদারী করেই চলছিলো। ইতোমধ্যে আলী থাবিত আর মোহাম্মদ আল তাইয়িব ক্লান্ত হয়ে পড়লে কাবা শরীফের দরজার ওপর বসে থাকে, উদ্ধার হবার আশায়।

আল আওদাহ বলেন, আমার ভয় হচ্ছিলো যেকোন সময় পুলিশ আমাকে গুলি করতে পারে আবার আনন্দও হচ্ছিলো এই ভেবে যে, পৃথিবীতে কেউ কোনদিন এই ভাবে কাবা তাওয়াফ করেননি, আমিই প্রথম। তাই ভয় আর আনন্দের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে আমি কাবার চারপাশে সাঁতরিয়েই চললাম। পরবর্তীতে জানতে পেরেছিলাম, পুলিশের রাইফেলে আসলে গুলি ছিলোনা।


তিনি আরো জানান, তত্কালীন মক্কার বয়স্কদের কাছে জানতে চেয়ে ছিলেন তারা এরকম বন্যার পানি আগে দেখেছেন কিনা? তারা কোন সময়েই এত পানি দেখেননি বলে জানান।

কে সর্ব প্রথম কাবা তাওয়াফ করেছেন?

হযরত মুহাম্মদ সা. এর জীবনী থেকে জানা যায় যে, সর্বপ্রথম একজন সাহাবী সাঁতরে কাবা তাওয়াফ করেন। তিনি একজন সাহাবী। তার নাম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রা.।

এছাড়াও আরো একজনের নাম জানা যায় যিনি সাঁতরে কাবা তাওয়াফ করেছেন। তিনি হলেন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ বদর আল-দীন ইবনে জাম’আ। তিনি প্রত্যেকবার কাবা প্রদক্ষিণের সময় হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করেছেন।

কাবা তাওয়াফকারীদের জন্য সাঁতরে কাবা তাওয়াফ করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ মক্কায় অনেক বন্যা দেখা গেলেও সাঁতার কেটে তাওয়াফ করার মতো পরিস্থিতি হয়না।

ঐতিহাসিকগণ বলেন, এখন পর্যন্ত দুইবার মক্কায় এমন বন্যা হয়েছে যার ফলে কাবা শরীফে সাঁতরে তাওয়াফ করা গেছে। প্রথমটি মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগে আর দ্বিতীয়টি ৭৭ বছর আগে।  


আরো সংবাদ



premium cement