২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দিনাজপুরে কবর থেকে ২৮টি কঙ্কাল উধাও

-

দিনাজপুর সদরের সুন্দরবন ইউনিয়নের দু’টি কবরস্থান থেকে মানবদেহের ২৮টি কঙ্কাল গত এক সপ্তাহে চুরি হয়ে গেছে। জেলা সদরের সুন্দরবন ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের শিবপুর কবরস্থান ও সদরপুর গ্রামের তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন কবরস্থান পরিদর্শনে দেখা গেছে, বেশকিছু কবর অস্বাভাবিক। দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের উত্তর শিবপুর সরকারি কবরস্থান থেকে গত কয়েক দিনে প্রায় ২০টির কঙ্কাল চুরি হয়ে গেছে। কবরস্থানটি ১৩ দশমিক ৫ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত হওয়ায় চুরি যাওয়া কঙ্কালের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা এলাকাবাসীর। একই ইউনিয়নের সদরপুর ডাঙ্গাপাড়া তুলা উন্নয়ন বোর্ড কবরস্থান থেকে গত কয়েক দিনে ৮টির বেশি কঙ্কাল চুরি হয়েছে। মূলত কবরস্থানগুলোতে কোনো সীমানা প্রাচীর, নৈশপ্রহরী না থাকার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে জানান স্থানীয়রা। সুন্দরবন ইউনিয়নের উত্তর শিবপুর সরকারি কবরস্থান থেকে গত ৬ মাস আগে দাফন করা হয় পার্শ্ববর্তী দরবারপুর গ্রামের মৃত সোহরাব আলীকে। কিন্তু গত বুধবার কবরস্থানে তার পরিবারের লোকজন গিয়ে দেখেন কবর খোঁড়া। কবরে নেই কোনো মৃতদেহের অংশবিশেষ। মৃত সোহরাব আলীর ছেলে ফেরাজ আলী জানান, গত বুধবার কবরস্থানের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেই তার বাবার কবরের এমন অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে যান তিনি।

শুধু সোহরাব আলীর কবরের এই অবস্থা নয়, একই গ্রামের নাজমুল ইসলাম মারা যান গত চার মাস আগে। তার কবরও একই অবস্থা। কবর আছে কিন্তু লাশের কোনো চিহ্ন বা কঙ্কালটি নেই। সদরপুর ডাঙ্গাপাড়া তুলা উন্নয়ন বোর্ড কবরস্থান এলাকার মো: সোলায়মান হোসেন বলেন, গত বুধবার সকাল ৮টার দিকে কবরস্থানের পাশ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দেখি কবর খোঁড়া। একটু এগিয়ে গিয়ে আমার স্ত্রীর কবরে গিয়ে দেখতে পাই তাতে লাশটি নেই। কবরের একটি অংশ ফাঁকা পড়ে আছে। তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী মৃত মোছা: খাইরুননেছা গত দুই বছর আগে মারা গিয়েছে। তার কবরে থাকা লাশের দেহটি নেই। শুধু আমার স্ত্রীর নয়; এই কবরস্থান থেকে আরও ২০ জনের লাশ তুলে নেয়া হয়েছে। আমরা এসব দেখে আতঙ্কে আছি। স্থানীয়রা জানায়, গত এক মাস বা দুই মাস আগে যাদের মৃত্যু হয়েছে এমন কবরের কঙ্কাল চুরি হতে দেখা যায়নি। যে কবরগুলো একটু পুরোনো হয়েছে সেই কবরগুলো থেকে লাশের কঙ্কাল চুরি হতে দেখা গেছে।

কবর থেকে কঙ্কাল চুরির বিষয়ে শিবপুর দরবারপাড়া ফুরকানিয়া মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা মো: জারিফুল ইসলাম বলেন, করব থেকে মৃতদেহের কঙ্কাল চুরির বিষয়টি ন্যক্কারজনক। যারা এই কাজটি করেছে তারা ইসলামের শত্রু। এদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। সুন্দরবন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক কুমার রায় বলেন, ‘কঙ্কাল চুরির বিষয়টি আমি জেনেছি। বিষয়টি শুনে আমি নিজেও অবাক হয়েছি। আমি প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। কঙ্কাল চোরদের দ্রুত সন্ধান করে আইনের আওতায় আনা হবে। কোতোয়ালি থানার ওসি মোজাফফর হোসেন জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কবরস্থান পরিদর্শন করেছে এবং কবর থেকে কঙ্কাল চুরির সত্যতা মিলেছে। কঙ্কাল চুরির চক্রকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে এবং স্থানীয়ভাবে এর সাথে কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান দু’টি কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যেই পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কবরস্থানগুলোকে আরও সোলার বাতি ও চারদিক বাউন্ডারি ওয়াল তৈরির জন্য ব্যবস্থা করা হবে।

দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা: শাহ মো: ইসমাইল হোসেন কঙ্কাল চুরির বিষয়ে জানান, বর্তমানে একটি কঙ্কালের দাম বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটি চক্র এসব কঙ্কাল চুরি করে সায়েন্টিফিক দোকানে বিক্রি করতে পারে। দিনাজপুরে এমন সায়েন্টিফিক দোকান নেই। তাই চুরিকৃত এসব কঙ্কাল জেলার অন্যান্য স্থানে নিয়ে বিক্রি করতে পারে। 


আরো সংবাদ



premium cement