২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রংপুর মেডিক্যালে প্রসূতির ক্ষত স্থানে সুঁই রেখে সেলাই দেয়া নিয়ে তোলপাড়

-

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আফরোজা নামের প্রসূতি এক নারীর ক্ষত স্থানে সুঁই রেখেই সেলাই দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, এ কথা বলতে গিয়ে উল্টো মারধরের শিকার হয়েছেন ওই নারী। বিষয়টি নিয়ে চলছে তোলপাড়। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে ঘটনাটি হয়েছে।

হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, রংপুর মহানগরীর আদর্শপাড়ার অটোরিকশাচালক তানজিদ হোসেনের স্ত্রী আফরোজা বেগম প্রসব ব্যথা নিয়ে গত ১৯ আগস্ট ভর্তি হন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ডেলিভারী ইউনিটের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। বুধবার সন্ধ্যায় নরমাল ডেলিভারির সময় সমস্যা হওয়ায় ছোট অপারেশনের মাধ্যমে নবজাতককে বের করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় চিকিত্সক, নার্স ও আয়ারা ক্ষত স্থানে সুঁই রেখেই সেলাই করে অপারেশন থিয়েটার থেকে আবারো গাইনি বিভাগে স্থানান্তর করেন।

ভুক্তভোগী আফরোজা বেগম জানান, ‘জরায়ুতে কাটার সময় আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি চিত্কার করেছি। নার্স আমাকে দুইবার চড় থাপ্পড় মেরেছে। তারপর নার্স-আয়ারা তিন চারবার সেলাই দিয়েছে আর খুলেছে। সেলাই করার পর প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারেই বিষয়টি আমি জানালে সেখানে কর্তব্যরত এক নার্স আমাকে থাপ্পড় মারেন। আমি নিরুপায় হয়ে ব্যাথায় দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু চিকিত্সক নার্সরা আমাকে কোনো সহযোগিতা করেনি। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার মেডিকেলের বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করি। এক্সরে রিপোর্টে দেখা যায় আমার গোপনাঙ্গের ভেতর সুঁই আছে।’

আফরোজার আত্মীয় আরজিনা বেগম জানান, ‘অপারেশন থিয়েটারে বাচ্চাকে বের করার সময় জরায়ুর নিচের অংশটুকু বেশি কেটে ফেলেন নার্স ও আয়ারা। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। ওটি থেকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে নেয়ার আগে ব্যথায় ছটফট করলে নার্সদের জানানো হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীকে চড়-থাপ্পড়ও মারেন কর্তব্যরত নার্সরা। তারপরেও আমরা অনেকবার নার্স ও আয়াদের বলেছি, প্রসূতির ব্যথ্যা হচ্ছে। তারা গুরুত্ব দেননি। পরে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে করালে সুঁই রাখার বিষয়টির প্রমাণ হয়।’

এদিকে আফরোজার নানী শাশুড়ি রেজিয়া বেগম জানান, ‘অপারেশন থিয়েটারে কোনো চিকিত্সক ছিল না। নার্স দিয়ে অপারেশন করা হয়েছে। এ সময় আফরোজা ব্যথায় ছটফট করতে থাকলে তাকে চড়-থাপ্পড়ও মারেন নার্সরা।’

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মাধবী রাণী বলেন, ‘এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমি কিছু বলতে পারবো না।’

তবে গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: শারমিন সুলতানা লাকী জানান, ‘ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে হয়েছে। আমরা আফরোজার সুচিকিত্সার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। খুব শিগগিরই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: সুলতান আহমেদ জানান, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement