১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৩য় শ্রেণীর ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা, অভিযুক্ত ধর্ষকের রহস্যজনক...

- ফাইল ছবি

রংপুর মহানগরীর নজিরেরহাটে তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রী ২৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় তাকে একটি বেসরকারি সংস্থার আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষকের রহস্যজনকভাবে বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় ধর্ষিতার মা মামলা করেছেন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ-আরপিএমপির হাজিরহাট থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম জানান, রংপুর মহানগরীর নজিরেরহাটের জনৈক মহিলা পাশ্ববর্তি জুয়েলের মালিকানাধীন সোনার বাংলা নার্সারি ও এগ্রোবাংলা লিমিটেডের কেয়ারটেকার তোফাজ্জল হোসেনের রান্নাবান্নার কাজ করতো।

মায়ের কাজ করার সুবাধে তার কন্যা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সেখানে যাতায়াত করতো। মায়ের সাথে ওই নার্সারিতে বিভিন্ন কাজকর্ম করতো। এরই মধ্যে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেখা যায় মেয়েটি ২৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। মেয়েটিকে নজিরেরহাটে ল্যাপরোসি মিশনে ভর্তি করা হয়। এরপর মেয়ের মা ১৮ আগস্ট হাজিরহাট থানায় অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে একটি ধর্ষণ মামলা করেছেন।

হাজিরহাট থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান জানান, যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক অভিযোগ তিনি মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যুর বিষয়টি বলা হচ্ছে। তবে তার মৃত্যুটা স্বাভাবিক নাকি বিষক্রিয়ায় হয়েছে সে বিষয়টি আমরা তদন্ত শুরু করেছি। হাসপাতালের কাগজপত্র নেয়ার চেস্টা করছি।

তিনি জানান, মেয়েটি ছোট ও অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্থ অবস্থায় আছে। তাকে আমরা রিকভারি করার চেস্টা করছি। তবে খুব শীঘ্রই ধর্ষণ ও অভিযুক্ত ধর্ষকের মৃত্যুর বিষয়টির ক্লু উদঘাটন করা হবে।

ল্যাপ্রসি মিশনের সুপারভাইজার সিস্টার নওমি জানান, শিশুটি এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্থ। তাকে সেবা যত্ন দিয়ে সুস্থ করার চেস্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনার প্রকৃত বিচার হওয়া দরকার।

মেয়েটি যে স্কুলে পড়তো সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, আমাদের স্কুলের শিশু মেয়েটির ওপর যে শারীরিক নির্যাতন করা হলো তা আদিম বর্বরতাকে হারা মানায়। আমরা এর যথাযথ বিচার চাই। বিষয়টি জানার পরপরই ল্যাপ্রসি মিশনের আমিসহ কয়েকজন শিক্ষক গিয়ে মেয়েটিকে দেখে এসেছি। শিশু বয়সে এখন তার পেটে আরেকটি শিশু। এই যন্ত্রণার ভার মেয়েটি সইতে পারছে না। আমরা এ ঘটনার মূল তথ্য উদঘাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানাই। স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা বিষয়টি আগে শুনিনি। মেয়েটির পরিবারও আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। স্কুল খোলার পর পুলিশ এসেছিল। আমরা পুলিশকে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছি। সে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষাও দিয়েছিল।

তিনি বলেন, আমরা চাই মেয়েটিকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে আগে মানসিকভাবে সুস্থ্য করা হোক।

ধর্ষিতার মা জানান, সদরের চন্দপাট ইউনিয়নের ঈশ্বরপুর সরদারপাড়া গ্রামের মৃত খেতু শেখের পুত্র তোফাজ্জল হোসেন(৫৫) দীর্ঘ দিন বছর থেকে সোনারবাংলা নার্সারি দেখাশুনার কাজ করতো। আমি তার রান্নাবান্নার কাজ করে দিতাম। আমার মেয়েও সেখানে আসা যাওয়া করতো। আমার মেয়ে আমাকে জানিয়েছে এরই মধ্যে তোফাজ্জল আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। আমি আমার মেয়ের পেট বড় হওয়ার পর বিয়ষটি টের পেয়েছি। জানাজানি হওয়ার পর শুনেছি তোফাজ্জল নার্সারিতে দেয়া কীটনাশক ওষুধ খেয়ে গত শুক্রবার অসুস্থ হয়। তাকে হাসাপাতালে নেয়া হলে তিনি মারা যান।

তিনি বলেন, আমি মামলা করেছি। এর পেছনে তোফাজ্জল নাকি আরও অন্য কেউ জড়িত আছে। সেটা খুঁজে বের করতে হবে পুলিশকে।

তিনি বলেন, এখন আমার এই মেয়ের বাচ্চাটার কি হবে। সেটা আমি জানতে চাই। আমাকে এখনই কেউ ঘর ভাড়াও দিচ্ছে না। সমাজে একঘরে করে রেখেছে।

সোনার বাংলা নার্সারি এন্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক জুয়েল জানান, তিন বছর ধরে তোফাজ্জল আমার নার্সারির সব বিষয় দেখাশুনা করে আসছে। আমি কখনও ব্যাংকে কখনও হাতে হাতে তাকে প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা দিতাম। ঈদের ছুটিতে আমি গ্রামের বাড়িতে যাই। ১৬ আগস্ট শুক্রবার খবর পাই তোফাজ্জল বিষ খেয়েছে। সাথে সাথে আমি লোক পাঠিয়ে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে হার্ট এ্যটাকে তিনি মারা যান। এরপর তাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। আমার সাধ্য অনুযায়ী তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ব্যবস্থাও করেছি।

তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের ব্যপারে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। পোস্ট মর্টেম ছাড়াই দাফনের ব্যপারে তিনি বলেন, পরিবার চায়নি তাই, পোস্ট মর্টেম হয়নি।

অন্যদিকে, চন্দনপাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নের ওই বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেনের ব্যাপারে আমি খবর পাই, সোনার বাংলা নার্সারিতে চাকরি করতো সে। সেখানেই বিষপান করে। এরপর মালিক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করলে তিনি সেখানেই মারা যান। বিষয়টি জানার পর আমি পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করি। তারা পোস্টমোর্টেম না করার ব্যপারে মতামত দেয়ায় পোস্ট মর্টেম ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেকেই এখন বলছেন তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার ব্যাপারে একটি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। আসলে তিনি এই দোষে অভিযুক্ত নাকি অন্য কেউ তা খতিয়ে দেখা দরকার।

তবে এলাকাবাসী ও পুলিশের বিভিন্ন সূত্রের ধারণা, ধর্ষণের ঘটনার সাথে তোফাজ্জল নাকি অন্য কেউ আছে তা খতিয়ে দেখছেন তারা। কারণ তোফাজ্জলের বিষপানে মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক। তার বাড়ির লোকজনও সেভাবে কথা বলছে না। পুলিশ সূত্রের ধারণা একটি সংঘবদ্ধ চক্র তোফাজ্জলের মৃত্যুর বিষয়টির মাধ্যমে ধর্ষণের বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করছে।


আরো সংবাদ



premium cement