২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কাউনিয়ায় আমবাগানে এক সপ্তাহ ধরে খোলা আকাশের নীচে ৭০ পরিবার 

-

রংপুরের কাউনিয়ার হারাগাছের সারাই আমবাগান এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধিন বসতভিটায় উচ্ছেদ অভিযান চালানোয় ৭০ টি পরিবারের প্রায় ৩০০ জন বয়োবৃদ্ধ, নারী শিশুসহ মানুষ এক সপ্তাহ থেকে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে। সরকারী ৫১ শতক জমি উদ্ধার করতে গিয়ে আরও ১ একর একান্ন শতক ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি উচ্ছেদ করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগিরা নিজ পৈত্রিক ভিটায় ওঠার জন্য বিভাগীয় কমিশনার, ডিসির কাছে স্মারকলিপি, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দফতরে ধর্না দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ডিসিসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া আবেদন সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের কাউনিয়ার হারাগাছ সারাই আমবাগান মৌজার সাবেক দাগ নং ৪৮৯৭, হাল দাগ নং ৮৬৫৮, ৮৬৫৯, ৮৬৬১ এর ১ (এক) একর একান্ন শতক জমি পৈত্রিক মালিকাানা সূত্রে মোঃ শরিফুল ও বাবুল বাধ্যকর গং- পিতা মৃত্যু আজিম উদ্দিন বাধ্যকরের বংশধররা ভোগ দখল করে আসছেন। এই জমির উত্তর পার্শ্বে সাবেক দাগ নং ৪৮৯৫ এর ৫১ শতক জমি সরকারী ১ নং খাস খতিয়ানের। গত ২ জুলাই রংপুর ডিসির আদেশে (নং-০৫.৫৫.৮৫০০.০১৫.০৬.০০১.১৯) কাউনিয়ার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট সহকারী ভূমি কমিশনার জেসমিন নাহার পুলিশ বেস্টিত হয়ে বুলডোজার দিয়ে খাস খতিয়ানের ৫১ শতক জমির পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন দক্ষিণ পার্শ্বের ১ একর একান্ত শতক জমিও উচ্ছেদ করে দেন। ওই জমির উচ্ছেদ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন আছে।

সূত্র জানায়, ওই উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এক একর একান্ন শতক জমির মধ্যে বসবাসকৃত প্রায় ৭০ টি পরিবারের প্রায় দুশতাধিক ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয় এসময় এসব পরিবারের আসবাবপত্রসহ সংসারের যাবতীয় জিনিসাদি সেখান থেকে তুলে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। দুই ঘন্টার মধ্যেই সব কিছু হারিয়ে এসব পরিবারের প্রায় ৩০০ জন মানুষ এখন ভূমিহীন। ভূমিহীন হওয়া এসব বয়োবৃদ্ধ, নারী শিশুসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ বিভিন্নস্থানে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে। মুহুর্তের মধ্যেই এসব মানুষ সব কিছু হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা নিজ বসতভিটা ফিরে পাওয়ার জন্য মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু সাত দিনেও এ বিষয়ে কোন সুরাহা মেলে নি।

ভুক্তভোগি শরিফুল ইসলাম বাধ্যকর জানান, আমাদের বৈধ দখলিয় সম্পত্তি হঠাৎ করে সরকার খাস জমি দাবি করলে এই নিয়ে মামলা হয়। মামলায় নিম্ম কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিলে, সরকার পক্ষ জজ কোটে আপিল করেন। জজ কোর্টের আপিল আমাদের বিপক্ষে রায় আসায় আমরা হাইকোর্টে এ বিষয়ে ন্যায় বিচারের জন্য আপিল করি (নং ৪৩৩৫)। বর্তমানে হাইকোর্টে মামলাটি বিচারাধীন আছে। কিন্তু বিচারাধীন একটি বিষয়ে আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে সরকার আমাদের উচ্ছেদ করে পথে বসিয়ে দিলো। আমরা এখন এতগুলো মানুষ কোথায় যাই। কোথায় খাই।

অপর ভূক্তভোগি আমেনা খাতুন জানান, শ্যাখের বেটি মাইনসক বাড়ি করি দেয়। আর শ্যাখের বেটির লোকজন হামার বাপদাদার ভিটা থাকি উচ্ছেদ করি দিলো। হামরা বুড়ি মানুষ কোন জাগাত গিয়া থাকি। শ্যাখের বেটির কাছে হামার দাবি হামারগুলার মাথার ঠাঁই তোমরা ফিরি দাও।

উচ্ছেদ হওয়া আরজিনা বেগম পঞ্চম শ্রেনিতে পড়েন। তিনি জানান, আমাদের বই খাতাগুলোও উচ্ছেদের সময় দেয়া হয়নি। এখন স্কুলে কিভাবে যাই। আমাদের পড়ার টেবিল ছিল। থাকার ঘর ছিল। কিন্তু এখন কিছুই নেই। আমাদের বাপদাদাদের জমি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হলো কেন বিচার চাই। আরজিনা জানান, আমরা রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে এ নিযে মানববন্ধন করেছি। আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাই।

রংপুরের ডিসি আসিফ আহসান জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement